Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘মানুষের কষ্ট হচ্ছে এটা উপলব্ধি করতে পারি’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১৪ আগস্ট ২০২২ ১৯:২০

ঢাকা: স্যাংশন-পাল্টা স্যাংশন আর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ মানুষের জীবনে সর্বনাশ টেনে এনেছে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মানুষের যে কষ্ট হচ্ছে- এটা আমরা উপলব্ধি করতে পারি। সেই কষ্ট লাঘবের জন্য আরও কী কী করা যায় তার জন্য প্রতিনিয়ত চেষ্টা করছি। সব জিনিসের ওপর এর একটা প্রভাব পড়েছে। আমাদের কিছু লোক তো থাকেই। প্রয়োজন-অপ্রয়োজনে জিনিসের দাম বাড়িয়ে দেয় ই ছুঁতো ধরেই। হঠাৎ এত দাম তো বাড়ার কথা নয় প্রতিটি জিনিসের।

বিজ্ঞাপন

রোববার (১৪ আগস্ট) গণভবনে আওয়ামী লীগের আট বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে আলোচনা সভার সূচনা বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের গত জাতীয় সম্মেলনের এই প্রথম দলের বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা।

এ সময় আট বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকরা উপস্থিত ছিলেন। নেতারা হলেন- আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, এসএম কামাল হোসেন, মির্জা আজম, আফজাল হোসেন, শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, সাখাওয়াত হোসেন শফিক এবং দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া।

১৫ আগস্ট এক রাতে বাবা-মা ভাইসহ স্বজনদের হারিয়ে এতিম হওয়া বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা সে প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমার বাবা-মা ভাই কী অপরাধ করেছিল? কেন তাদের হত্যা করা হলো। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে গড়ে তোলায় হাতে সময় পেলেন মাত্র সাড়ে তিন বছর। কোনো সম্পদ ছিল না। তিনি শুধু বলেছেন, মাটি আর মানুষ হচ্ছে আমার সম্পদ। এই মাটি আর মানুষের ওপর নির্ভর করে মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে সেই বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে গড়ে তুলে স্বল্পন্নোত দেশে উন্নীত করে দিয়ে যান। এবং তার লক্ষ্য ছিল ঘুণে ধরা সমাজ ভেঙে একটা নতুন সমাজ দেবেন। ঔপনিবেশিক শাসনামলের কাঠামো ভেঙে গণমুখী প্রশাসনিক কাঠামো তিনি করতে চেয়েছিলেন।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘গণমুখী প্রশাসনিক কাঠামো করতে যেয়ে বিরাট পরিবর্তন আনতে চেয়েছিলেন। গণমুখী প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে তুলে ক্ষমতাকে বিকেন্দ্রিকরণ করে তৃণমূলের মানুষের কাছে ক্ষমতা নিতে চেয়েছিলেন। সেজন্য বাংলাদেশকে প্রত্যেকটা মহকুমায় রূপান্তর করলেন।’

বিজ্ঞাপন

‘এক একটা জেলার উন্নয়নটা যেন ওই জেলাভিত্তিক হয়, যাতে মানুষের দুঃখ-দুর্দশা দূর হয়, আর্থ-সামাজিক উন্নতি হয় সেই পদক্ষেপটাই তিনি নিলেন। এবং দ্বিতীয় বিপ্লববের যে ডাক দিলেন সেটার লক্ষ্যই ছিল জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা, উৎপাদন বৃদ্ধি করা, আর্থ সামাজিক উন্নতি করা। মনে হয়, এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কেউ যদি অবদান রাখতে যায় তাকে বিপর্যয়ে পড়তে হয়। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা’— বলে আক্ষেপ করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘এটাই হচ্ছে আমাদের জন্য সব থেকে দুর্ভাগ্য- যখনই এই দেশের মানুষ একটু ভালো থাকে বা ভালো অবস্থায় আসে তখনই যেন চক্রান্ত ষড়যন্ত্রটা শুরু হয়। একটা শ্রেণি আছে যারা সবসময় চায় যেন দেশের মানুষের কল্যাণ না হয়।’ আওয়ামী লীগের মাধ্যমেই আমরা মানুষের জন্য কাজ করি জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যখনই দুর্যোগ-দুর্বিপাক, প্রাকৃতিক দুর্যোগ যাই আসুক আওয়ামী লীগ বা আমাদের সহযোগী সংগঠন সবসময় সজাগ থাকে। মানুষের পাশে সকলের আগে দাঁড়ায়।’

সংগঠনকে সুসংহত করাই লক্ষ্য জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৯৬ সালে ২০০১ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল। আমাদের মেয়াদকাল যখন শেষ হয়ে যায় তখন আমরা কিন্তু ক্ষমতা হস্তান্তর করে চলে আসি। বাংলাদেশের ইতিহাসে এ পর্যন্ত আর কখনই এরকম ক্ষমতা পরিবর্তন হয়নি শান্তিপূর্ণভাবে। প্রতিবারিই এক একটা ঘটনার মধ্য দিয়ে ঘটেছে- এটা সকলের মাথায় রাখতে হবে। একটি বারই শান্তিপূর্ণভাবে শুধু ক্ষমতা হস্তান্তর হয়েছে, যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল। আওয়ামী লীগ সব সময় গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, জনগণের ক্ষমতায় বিশ্বাস করে।’

তিনি বলেন, ‘২০০১ সালের নির্বাচন আমাদের নেতাকর্মীদের হত্যা করা। সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার করা হয়। সেখানে হিন্দু-খ্রিস্টান কেউ তো বাদ যায়নি। ২০০১ সালের নির্বাচনের চিত্র সবার মনে আছে। তারপর বিএনপি-জামায়াত বাংলাদেশে পাঁচ বার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন। ১৫ আগস্টের খুনিদের জিয়াউর রহমান শুধু ইনডেমনিটি দিয়ে দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেছে তা তো নয়। এর পর এরশাদ এসে খুনি ফারককে প্রেসিডেন্সিয়াল ক্যান্ডিডেট করল। খালেদা জিয়া এসে আরও এক ধাপ উপরে উঠে রশীদ-ফারুক-হুদা এই তিন জনকে নমিনেশন দিল। ফারুককে নওগাঁয় জেতাতে চেষ্টা করেছিল। কিন্তু সেটা পারে নাই। হুদা আর রশীদকে পার্লামেন্টে বসাল। শুধু তাই নয়, খুনি রশীদকে সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার চেয়ারে বসাল। এদের সঙ্গে খুনিদের সৌহার্দ্য কত সেটা মানুষের জানা উচিত।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘মানুষের সেবায় আমরা সবসময় ভূমিকা রেখেছি। জনগণের জন্য আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি, তাদের আস্থা বিশ্বাস অর্জন করতে পেরেছি। তারা আমাদের বার বার ভোট দিয়েছে। তৃতীয় দফায় ক্ষমতায় এসে দারিদ্রের হার কমিয়েছি, মানুষের পুষ্টির নিশ্চয়তা করেছি। খাদ্য নিরাপত্তা করতে পেরেছি, স্বাক্ষরতার হার বেড়ে গেছে, মানুষের আয়ুষ্কাল বেড়েছে, শিশু মৃত্যু হার কমেছে, মাতৃমৃত্যু হার কমেছে।’

করোনার ধাক্কা সামালে বাংলাদেশ অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সক্ষম হয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কিন্তু এরপর ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ। এই যুদ্ধের ফলে স্যাংশন-পাল্টা স্যাংশন। যেটা আমি আগেও বলেছি, আমেরকিা স্যাংশন দিল রাশিয়াকে শায়েস্তা করার জন্য। কিন্তু দেখা যাচ্ছে যে, শায়েস্তা হচ্ছে সাধারণ মানুষ। শুধু আমাদের দেশ নয়, প্রতিটি মহাদেশের মানুষদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘স্যাংশন দিয়ে লাভটা কি হলো? হ্যাঁ, লাভ আমেরিকা আর রাশিয়ার। কারণ রুবলের দামও বাড়ছে, ডলারেরও দাম বাড়ছে। সারা বিশ্বব্যাপী রুবল আর ডলার স্ট্রং হয়ে গেছে। আর মরতেছে সব দেশের সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে নিম্নবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ যারা। তাদের জন্য চরম দুর্ভোগ, এটা আমার দেশ বলে নয়, ইউরোপ-আমেরিকা-ইংল্যান্ড সব জায়গায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।’

দেশের মানুষকে উৎপাদন বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘একটা মরিচ গাছ লাগালেও লাগান। একটা সবজি গাছ লাগান। কিন্তু এক ইঞ্চ জমি ফেলে রাখবেন না। যা পারেন নিজেরা উৎপাদন করেন। আমরাই শুধু ভুক্তভোগী নই, সারাবিশ্বের মানুষেরই এখন ভুক্তভোগী। আমাদের মানুষের যে কষ্ট হচ্ছে, এটা আমরা উপলব্ধি করতে পারি।’ কাজেই সেই কষ্ট লাঘবের জন্য আরও কী কী করা যায় তার জন্য প্রতিনিয়ত চেষ্টা করছি বলে আশ্বস্ত করেন শেখ হাসিনা।

বিদ্যুতের ব্যবহার সীমিত করার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘হয়তো কিছুদিন আমাদের কষ্ট করতে হবে। বিশেষ করে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো চালু হলে বিদ্যুতের সমস্যা অনেকটা দূর হবে। আমরা যেটা যেটা ওয়াদা দিয়েছিলাম, সেগুলো সম্পূর্ণ করতে পেরেছি। যদি এই করোনা এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ আর স্যাংশন-পাল্টা স্যাংশন না থাকতো তাহলে আমাদের দেশ কখনোই সমস্যায় পড়ত না। আমরা এগিয়ে যেতাম।’

সেজন্য দেশের মানুষের প্রত্যেকেই যার যতটুকু যেখানে জমি আছে, সেখানে চাষাবাদ করে উৎপাদন করার আহ্বান জানান আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা।

সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম

আওয়ামী লীগ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর