Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চা শ্রমিকের সন্তানেরা বাধ্য হচ্ছে শিশুশ্রমে, ঝরে পড়ছে অঙ্কুরেই

হৃদয় দেবনাথ, মৌলভীবাজার
১৪ আগস্ট ২০২২ ১৯:৫৫

মৌলভীবাজার: যে বয়সে দুরন্তপনা, খেলাধুলা ও লেখাপড়া নিয়ে ব্যস্ত থাকার কথা ছিল, সেই বয়সে শিশুদের যেতে হচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে। অনেক শিশু এসব কাজে গিয়ে হাত-পা ও শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হারিয়ে অঙ্কুরেই ঝরে পড়ছে। মৌলভীবাজারে এমন চিত্র প্রতিনিয়তই দেখা যাচ্ছে। চা বাগানবেষ্টিত হওয়ায় এই জেলায় চা শ্রমিকের সন্তানেরাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শিশুশ্রমে জড়াচ্ছে।

বিভিন্ন তথ্যমতে, দেশের শিশুনীতি অনুযায়ী ১৮ বছরের নিচে যাদের বয়স, তারা প্রত্যেকেই শিশু। এ বয়সে শ্রম নিষিদ্ধ। অথচ আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকায় শিশুশ্রম দিনে দিনে উদ্বেগজনকহারে বেড়েই চলছে। এরসঙ্গে আছে ওইসব শিশুদের পরিবারের অভাব-অনটন, সামাজিক বাস্তবতা ও মালিকপক্ষের অতিমুনাফার লোভ।

বিজ্ঞাপন

জেলার বিভিন্নপ্রান্তে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, হোটেল, বেকারি, চায়ের দোকান, ওয়ার্কশপ, পরিবহন সেক্টর ও বিভিন্ন শিল্প কারখানায় শিশুদের উপস্থিতি উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। এরমধ্যে বেশকিছু প্রতিষ্ঠান শুধু শিশুশ্রমের ওপর নির্ভর করে পরিচালিত হচ্ছে। চাঁদনীঘাট, শ্রীমঙ্গলের হবিগঞ্জ সড়ক, মৌলভীবাজার সড়ক ও ভানুগাছ সড়কে শিশুদেরকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালাতে দেখা গেছে। শারীরিক দুর্বলতা, পূর্ণবয়স্ক না হওয়ায় প্রায় ঘটাচ্ছে ছোটবড় দুর্ঘটনা।

সম্প্রতি চাঁদনীঘাট এলাকায় এক ওয়ার্কশপে কাজ করার সময় দুটি চোখ হারিয়েছে ১৩ বছর বয়সী শিশু আরমান। কমলগঞ্জে সাইফুল ইসলাম তফাদার নামে ১২ বছর বয়সী এক শিশু বাসের হেলপার হিসেবে কাজ করতে গিয়ে হাত-পা ভেঙে পঙ্গু হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তার বাবা দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী। বাবা-মায়ের মুখে খাবার তুলে দিতেই পাশের বাড়ির এক চাচার সহযোগিতায় বাসের হেলপার হিসেবে চাকরি নেয় সে।

বিজ্ঞাপন

শ্রীমঙ্গল ভানুগাছ সড়ক এলাকায় একটি ওয়ার্কশপে কাজ করে রাসেল আহমেদ (১২)। কথা হলে সে জানায়, দ্বিতীয় বিয়ে করে তার বাবা তাদের ফেলে চলে যায়। মা আর বোনের খাবার সংগ্রহ করার জন্য পড়াশোনা ছেড়ে এই ঝুঁকিপূর্ণ কাজে যোগ দিয়েছে সে।

আরও পড়ুন: শিক্ষাবঞ্চিত চা শ্রমিকের সন্তানরা, সংকট কাটাতে নেই উদ্যোগ

শ্রীমঙ্গলের মিশন রোড এলাকার একটি বেকারিতে কাজ করে সুজিত শর্মা (১২)। সে শহরের পাশেই একটি চাবাগানে বাবা-মায়ের সঙ্গে বসবাস করে। বাবার সামান্য রোজগারে পরিবার চলে না, তাই লেখাপড়া ছেড়ে এই কাজে যোগ দিতে বাধ্য হয় সুজিত। লেখাপড়া করার খুব ইচ্ছে ছিল তার। এখনো বেকারির পাশের সড়ক দিয়ে শিশুদের স্কুলে যাওয়া আসার সময় জানালা দিয়ে তাকিয়ে থাকে সে।

ইসমত মিয়া (১৪) পড়াশুনা করতো স্থানীয় একটি প্রাইমারি স্কুলে। লেখাপড়ার খরচের জন্য শ্রীমঙ্গল-মৌলভীবাজার সড়কে চলাচলরত একটি বাস গাড়িতে চাকরি নেয় সে। চাকরিতে যোগ দেওয়ার ১ মাসের মধ্যেই হঠাৎ একদিন মাথা ঘুরে চলন্ত বাসগাড়ি থেকে পড়ে যায়। এতে তার একটি হাত ও পা ভেঙে যায়। ইসমতের মতো শতশত শিশু মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন এলাকাতে মিল কারখানায়, বাস, ওয়ার্কশপ, বিল্ডিং নির্মাণসহ নানান ঝুঁকিপূর্ণ কাজে জড়িত।

সেভ দ্য চিলড্রেন এর ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর টিম হোয়েট সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেন, বাংলাদেশে ১৭ লাখ শিশু শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এরা বিভিন্ন ধরনের সহিংসতার শিকার হচ্ছে।

তিনি বলেন, শিশুশ্রম নিরসনে সরকার একা কাজ করলে আশানুরূপ ফল পাওয়া যাবে না। এজন্য প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ।

শিশুশ্রমের বিষয়ে জানতে চাইলে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান সারাবাংলাকে বলেন, শিশুশ্রম বন্ধ করতে আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ দরকার। আইন অনুসারে ১৪ বছরের নিচে বয়স, এমন শিশুরা কোনো ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে পারবে না। এসব শিশুদের দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করানো যাবে না। পারিবারিক অবস্থার জন্য বাধ্য হয়ে যদি ওরা কাজে যোগও দেয়, তবু তাদের দিয়ে পাঁচ ঘণ্টার বেশি কাজ করানো যাবে না। বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়ার সুযোগ দিতে হবে। কিন্তু এগুলো মানা হয় না।

মালিক ও শ্রম সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোকে এ বিষয়ে আন্তরিক হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। এছাড়াও শিশুশ্রম বন্ধে সরকারের কড়া নজরদারির পাশাপাশি বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেওয়ার প্রতি জোর দেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন জেলা প্রশাসক।

সারাবাংলা/এএম

চা শ্রমিক টপ নিউজ শিশুশ্রম

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর