বিজ্ঞাপন

শিক্ষাবঞ্চিত চা শ্রমিকের সন্তানরা, সংকট কাটাতে নেই উদ্যোগ

August 1, 2022 | 6:26 pm

হৃদয় দেবনাথ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

মৌলভীবাজার: স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী পরেও এসে পরাধীন জীবনযাপন করছেন দেশের প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার চা শ্রমিক। তাদের নেই নিজের জমি। নেই নিরাপদ বাসস্থান, স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের নিশ্চয়তা। এমনকি তাদের পরবর্তী প্রজন্মের শিশুরাও বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার মতো মৌলিক অধিকার থেকে। বাবা-মায়ের সামান্য মজুরিতে সংসারই চলে না ঠিকমতো, এই অবস্থায় তাদের প্রাথমিক লেখাপড়া নিয়ে ভাবনাচিন্তার নেই কেউ। উচ্চশিক্ষা যেখানে এখনো দুঃস্বপ্ন।

বিজ্ঞাপন

শ্রীমঙ্গল উপজেলার প্রধান শিক্ষক সমিতির সম্পাদক ও স্কুল শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ভাড়াউড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কল্যান দেব জীবন বলেন, চা শ্রমিকের সন্তানদের স্কুলে ভর্তির হার আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। তবে তাদের বাবা-মায়ের জন্ম নিবন্ধন না থাকার কারণে অনেক চা শ্রমিকের সন্তান ভর্তি হতে পারছে না।

শ্রীমঙ্গল উপজেলার সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট চা শ্রমিকের সন্তান প্রেম সাগর হাজরা জানান, সামান্য টাকা মুজুরি দিয়ে সংসারই ঠিকমতো চলে না। এর ওপর সন্তানদের পড়াশুনা করাতে হিমশিম খাচ্ছে অভিভাবিকরা। প্রাইমারিতেই ঝরে পড়ছে অনেক চা শ্রমিকের সন্তান। এ বিষয়ে সরকারের এগিয়ে আসা উচিত বলেও মনে করেন তিনি।

লছনা চা বাগানের শ্রমিক রমেশ বাড়ৈ বলেন, আমার দুই মেয়ে এক ছেলে। সামান্য মজুরিতে সংসার চালানোই কষ্টকর। স্কুলও বাগান থেকে দূরে হওয়ায় আসা যাওয়ার খরচ বহন করাও কষ্টকর। প্রাইমারি পাস করার পর অর্থাভাবে দুই মেয়ের পড়াশুনা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছি। তবে ছেলেটার লেখাপড়া তিনি চালিয়ে নিচ্ছেন বলে জানান। তিনি বলেন, কেবল ছেলে রাম বাড়ৈ (১৩) স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ছে। ছেলেকে কষ্ট হলেও পড়ানোর ইচ্ছে আছে।

বিজ্ঞাপন

রাজঘাট চা বাগানের বাসিন্দা চা শ্রমিক সুধাকর বাড়ৈ জানান, ১২০ টাকা মজুরিতে তিনবেলা খাওয়ায় কঠিন। তবুও দুই মেয়েকে পড়াশুনা করাতে চেয়েছি।

এসব বিষয়ে কথা হলে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলী রাজীব মোহাম্মদ মিঠুন বলেন, আমি এ অঞ্চলে নতুন যোগদান করেছি। বিস্তারিত জেনে চা শ্রমিকদের জন্য বৃহৎ পরিসরে কাজ করার ইচ্ছে আছে।

বেশকিছু চা বাগানঘুরে সেখানকার শ্রমিক ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মালিকপক্ষ এখানে সকল কর্মকাণ্ডের নিয়ন্ত্রক। সরকারি ও বেসরকারি কোনো সংস্থার প্রবেশাধিকার নেই বললেই চলে। ফলে চা শিল্পে জড়িত জনগোষ্ঠী অধিকাংশ সরকারি-বেসরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। আধুনিক জীবন ব্যবস্থা ও অধিকার সর্স্পকে তারা একেবারেই সচেতন নন।

বিজ্ঞাপন

তবে এসব অভিযোগের বিষয়ে মানতে নারাজ শ্রী গোবিন্দপুর চা বাগানের ব্যবস্থাপক ও শ্রীমঙ্গল পৌরসভার মেয়র বিশিষ্ট শিল্পপতি মহসিন মিয়া মধু। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, আমরা চা বাগান মালিক টাকা ইনভেস্ট করি কিছু লাভের আশায়। বাগান মালিক হিসেবে চা শ্রমিকদের যে সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছি তা কি যথেষ্ট নয়?

তিনি বলেন, রেশন সুবিধা, বাড়ি, সন্তানদের প্রাইমারি পর্যন্ত লেখাপড়ার সুযোগ পাচ্ছে। তবে এখন তাদের জীবনমান আরও উন্নয়ন করতে হলে সরকারকে তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। আমরা সরকারের শতভাগ ভ্যাট ট্যাক্স পরিষদ পরিশোধ করছি।

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে চা শিল্পের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মৌলভী বাজার, সিলেট, হবিগঞ্জ, চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং পঞ্চগড় মিলিয়ে ১৬৭টি চা বাগান রয়েছে। এসব বাগানে প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার শ্রমিক নিরলস শ্রমের বিনিময়ে চা শিল্পকে বাঁচিয়ে রেখেছেন।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এএম/একে

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন