ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর: বঙ্গবন্ধুর জীবন্ত প্রতিচ্ছবি
২৮ আগস্ট ২০২২ ২২:৪৪
ঢাকা: সকাল ১০টায় খুলবে দরজা। কিন্তু লাইনে দাঁড়ানো শুরু হয়েছে তারও অনেক আগে। স্কুল, কলেজের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি লাইনে দাঁড়িয়েছেন নানা শ্রেণি-পেশার মানুষও। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে এক নজর দেখতেই এমন ভিড়। মুজিব জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ, অধিকার আদায়ে আন্দোলন, সংগ্রাম এবং তার অসামান্য কর্মজীবন প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে এক ব্যতিক্রমধর্মী ভ্রাম্যমাণ জাদুঘর নির্মাণ করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।
একটি মিটারগেজ ও একটি ব্রডগেজ রেল কোচের ভেতরে গড়ে তোলা ভ্রাম্যমাণ জাদুঘরটি গত ১ আগস্ট গোপালগঞ্জ শহর রেলওয়ে স্টেশনে পরিদর্শনের মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু করে। এর পর থেকেই নির্ধারিত সিডিউল অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন স্টেশনে ঘুরে বেড়াচ্ছে এই জাদুঘর। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এরই মধ্যে জাদুঘরটি ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। প্রতিদিন হাজার হাজার দর্শনার্থী আসছেন জাদুঘর দেখতে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, জাদুঘর দু’টির একটি বর্তমানে কুমারখালী স্টেশনে অবস্থান করছে। আরেকটি অবস্থান করছে নোয়াখালী স্টেশনে। প্রাথমিকভাবে দুই মাসের সিডিউল করা হয়েছে। সে অনুযায়ী দেশের ব্রডগেজ ও মিটারগেজ মিলিয়ে মোট ৪৪টা স্টেশনে থামবে এই জাদুঘর। এরপর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কিছুদিন গ্যাপ দিয়ে আবার নতুন সিডিউল তৈরি করা হবে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জাদুঘরটি দর্শনার্থীরা কীভাবে গ্রহণ করবে সেটা নিয়ে যে সংশয় ছিল। এখন সেই সংশয় কেটে গেছে। ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে এই জাদুঘর।
আরও পড়ুন:
- রেলের বগিতে জাদুঘর, বঙ্গবন্ধু ঘুরবেন প্রত্যন্ত অঞ্চল
- উদ্বোধন হলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর
- বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবনের আখ্যান ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর
- ১ আগস্ট চালু হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর
- জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর
এই জাদুঘরের মূল পরিকল্পনায় ছিলেন বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (আর এস) মো. মঞ্জুর উল আলম চৌধুরী। সারবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমাদের স্বপ্ন ছিল এই জাদুঘর মানুষের কাছে বঙ্গবন্ধুকে নিবিড়ভাবে তুলে ধরবে। সেই স্বপ্ন আমাদের সফল। আমরা তথ্য পাচ্ছি, প্রতিটি স্টেশনে প্রতিদিন পাঁচ হাজারের বেশি দর্শনার্থী জাদুঘর পরিদর্শন করছেন। সব বয়সের মানুষ এই জাদুঘর পরিদর্শনে আসছেন। বিশেষ করে গ্রামের স্টেশনগুলোতে সবধরনের দর্শনার্থীরা আসছেন। গ্রামের নারীরা তাদের সন্তানদের নিয়ে আসছেন। আবার শিক্ষকরা আসছেন শিক্ষার্থীদের নিয়ে। তারা ধৈর্য্য ধরে পুরো জাদুঘর ঘুরে দেখছেন। আমরা অভিভূত হয়ে গেছি । কোথাও কোথাও মাঠ ভর্তি হয়ে যাচ্ছে দর্শনার্থীদের। আমাদের এখন আর কোনো সংশয় নেই। এটি একটি সফল উদ্যোগ।’
তিনি আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর নিয়ে আমাদের যে পরিকল্পনা ছিল আমরা সেভাবেই এগোচ্ছি। আমরা এক বছরের জন্য একটি সিডিউল করব। সেভাবে দেশের সব স্টেশনে নিয়ে যাব। আমরা প্রাথমিকভাবে দুই মাসের সিডিউল দিয়েছি। কিন্তু ৪৮৮টি স্টেশনে যেতে আমাদের অনেক সময় লেগে যাবে। এখন মিটারগেজ চট্টগ্রামে রয়েছে। এটি সেখানে শেষ করে ঢাকায় পরিদর্শন করানো হবে। এরপর পশ্চিমাঞ্চলের পাকশিতে রয়েছে আরেকটি। সেটি শেষ করে অন্য স্টেশনে যাবে। এ কাজে স্থানীয় প্রশাসন ডিসি, এসপি, বিভিন্ন থানা এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা সহযোগিতা করছেন। তারাও মানুষকে উদ্বুদ্ধ করছেন। এভাবে জাদুঘরটি সার্বজনীন হয়ে উঠছে।’
মঞ্জুর উল আলম চৌধুরী বলেন, ‘গ্রামাঞ্চলের শিক্ষার্থীদের কাছে বঙ্গবন্ধুকে এভাবে নিয়ে যাওয়া সহজ ছিল না। কিন্তু এই উদ্যোগ তা সহজ হয়েছে। এই জাদুঘরের মাধ্যমে যেভাবে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যেতে পেরেছি, আর অন্য কোনো উপায়ে তা সহজ ছিল না।’
ব্রগগেজ ও মিটারগেজ এই দুই ধরনের কোচের মধ্যে নির্মাণ করা জাদুঘর দু’টিতে ১৯২০ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত ১২টি গ্যালারির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর শৈশব, রাজনীতি, আন্দোলন-সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। কোচের এক পাশের দেয়ালের ছয়টি ভাগে রাখা হয়েছে কিংবদন্তির প্রথম প্রহর, ধ্রুবতারার প্রথম কিরন, নক্ষত্র হওয়ার পথে, বাংলার মাটি ও ভাষার বঙ্গবন্ধু, ধূমকেতু থেকে নক্ষত্র, মুক্তির স্বপ্নের সূচনা শিরোনামে বঙ্গবন্ধুর জীবনচরিত। এখানে তুলে ধরা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর শৈশব থেকে পর্যায়ক্রমে তার ছাত্রজীবন, রাজনীতিতে হাতেখড়ি, মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে নিজের জীবনকে উৎসর্গ করার মাধ্যমে গণমানুষের প্রাণের নেতা হয়ে ওঠা।
আরও রয়েছে, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক, অধিকার আদায়ের সংগ্রামে অবর্ণনীয় নির্যাতন, চুয়ান্নর যুক্তফ্রন্ট, মিথ্যা মামলা ও কারাভোগ, স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা হিসেবে তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে আপসহীন সংগ্রামের ইতিহাস। আরেক পাশের দেয়ালে থাকা ছয় ভাগে রয়েছে- দুর্বার পথচলা, নিপীড়িতদের কাণ্ডরি, এক নতুন স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন, মুক্তি, সংগ্রাম ও স্বাধীনতার কথা, স্বপ্নগড়ার দিনগুলো, যে আলো নেভেনি আজও- এমন শিরোনামে শিল্প প্রদর্শনী। এর মাধ্যমে বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ ‘৬৬-র ঐতিহাসিক ছয় দফা, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান ও একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে কাঙ্খিত স্বাধীনতা অর্জনের প্রধান নায়ক হিসেবে বঙ্গবন্ধুর অবদান দর্শকদের চোখের সামনে জীবন্ত হয়ে উঠবে।
সারাবাংলা/জেআর/পিটিএম
জীবন্ত প্রতিচ্ছবি বঙ্গবন্ধু ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর শেখ মুজিবুর রহমান স্বপ্নদ্রষ্টা