বিজ্ঞাপন

বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবনের আখ্যান ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর

August 2, 2022 | 7:29 pm

গোলাম সামদানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট গোপালগঞ্জ থেকে ফিরে

ঢাকা: শোকাবহ আগস্টের প্রথম দিনে অনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বেড়ে ওঠা ও কর্মময় জীবনের ঘটনাপঞ্জি নিয়ে ধারাবাহিক ১২টি পর্বে নির্মাণ করা হয়েছে এই জাদুঘর।

বিজ্ঞাপন

জাদুঘর নিয়ে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী, আদর্শ তার আত্মত্যাগ ও দেশপ্রেম সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরতে ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘরের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই রেল জাদুঘর সারাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা স্টেশনগুলোতে বঙ্গবন্ধুর জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তার কর্মময় ও রাজনৈতিক জীবন এবং তার আত্মত্যাগ সাধারণ মানুষের কাছে ছড়িয়ে দেবে।

রেলমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের ৮০ শতাংশ রেলস্টেশন গ্রাম-বাংলায় ছড়িয়ে রয়েছে। প্রান্তিক মানুষের কাছে জাতির পিতার ঐতিহাসিক জীবন, মুক্তিযুদ্ধ, সংগ্রামী জীবনী তুলে ধরতে এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ব্রডগেজ কোচের জাদুঘরটি পশ্চিমাঞ্চল এবং মিটারগেজের জাদুঘরটি পূর্বাঞ্চলে প্রদর্শন করা হবে।’

সরেজমিনে দেখা গেছে, বাংলাদেশ রেলওয়ে মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে প্রায় দেড় বছর ধরে নির্মিত এই ভ্রাম্যমাণ জাদুঘরে প্রবেশ করেই দর্শনার্থী পরিচিত হবেন জাতির পিতার শৈশবের দিনগুলোর সঙ্গে। পর্যায়ক্রমে বঙ্গবন্ধুর ছাত্রজীবন, বেড়ে ওঠা, মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের মাধ্যমে গণমানুষের প্রাণের নেতা হয়ে ওঠা এবং ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক হিসেবে তার অবদান তুলে ধরা হয়েছে। পাশাপাশি অধিকার আদায়ের সংগ্রামে অবর্ণনীয় নির্যাতন ভোগ, মিথ্যা মামলা ও কারাভোগের করুণ চিত্র, তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে আপসহীন ‘৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, জাতির গৌরবোজ্জ্বল ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধ, কাঙ্খিত স্বাধীনতা, যুদ্ধবিদ্ধস্ত সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ পুনর্গঠনে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ সম্পর্কে এই জাদুঘরে এসে অবহিত হবেন।

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, প্রতিটি ভিডিও নির্মাণ করা হয়েছে ভিডিও এবং স্থিরচিত্রের সমন্বয়ে। কোচের এক প্রান্তে একটি বড় এলইডিতে জাতির পিতার ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণসহ গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ, থিম সং এবং বঙ্গবন্ধুর উপর রচিত অন্যান্য গান প্রচার করা হবে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত জাদুঘরটিতে রয়েছে জয় বাংলা স্লোগানের আদলে তৈরি করা একটি বুক শেল্ফ। যেখানে রয়েছে বঙ্গবন্ধুর ওপর রচিত ও তার কর্মজীবনের উপর লিখিত গুরুত্বপূর্ণ বই। এছাড়া শিশুদের জন্য রয়েছে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে রচিত বিভিন্ন শিশুতোষ সাহিত্যকর্ম।

জাদুঘরটি দৃষ্টিনন্দন আলোকসজ্জা ও সুদৃশ্য ইন্টেরিয়ারের মাধ্যমে সাজানো হয়েছে। তৈরি করা হয়েছে ফুলের বাগান। সুদৃশ্য ১২টি টেবিলে স্থাপন করা হয়েছে জাতির পিতার পৈতৃক নিবাসের প্রতিরূপ, তার ব্যবহৃত চশমা, পাইপ, মুজিব কোট, টুঙ্গিপাড়ার সমাধিস্থলসহ ১৩টি ঐতিহাসিক অনুকৃতি। এছাড়া ভ্রাম্যমাণ জাদুঘরে রয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও গৌরবের প্রতীক জাতীয় স্মৃতিসৌধসহ মুক্তি সংগ্রামের দুর্লভ চিত্র। জাদুঘরে সজ্জিত রয়েছে বঙ্গবন্ধুর নিজ হাতে লেখা পত্র। যা জাতির পিতাকে আরও গভীরভাবে অনুধাবনে সহায়ক হবে। জাদুঘরের বহিরাবরণ সজ্জিত করা হয়েছে ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন থেকে ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত ধারাবাহিক সংগ্রামের ওপর চিত্রিত ম্যুরালের মাধ্যমে ।

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, গত ২৭ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারচুয়ালি উদ্বোধন করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১ আগস্ট গোপালগঞ্জ রেল স্টেশন থেকে ব্রডগেজ জাদুঘরটির উদ্বোধন করেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। একইদিন বিকেলে চট্টগ্রাম রেল স্টেশন থেকে মিটারগেজ জাদুঘরটির প্রদর্শনের জন্য উদ্বোধন করেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।

জাদুঘর প্রসঙ্গে বাংলাদেশ রেলওয়ে মহাপরিচালক বীরেন্দ্রনাথ মজুমদার বলেন, ‘ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘরের মাধ্যমে সারাদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সাধারণ মানুষ বঙ্গবন্ধুকে জানার সুযোগ পাবেন।’

অন্যদিকে, রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (রোলিং স্টক) মো. মঞ্জুর উল আলম চৌধুরী বলেন, ‘এটি রেলের ইতিহাসে প্রথম ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর। একটি ব্রডগেজ ও একটি মিটারগেজ কোচকে সর্বোচ্চ প্রযুক্তিতে সাজানো হয়েছে। জাদুঘরটিতে ১৯২০ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত জাতির পিতার ঐতিহাসিক জীবন, মুক্তিযুদ্ধ, সংগ্রামী ঘটনা প্রবাহ তুলে ধরা হয়েছে। সাধারণ দর্শনার্থীরা টাচ স্ক্রিনে আঙুল স্পর্শ করতেই ভেসে আসবে বঙ্গবন্ধু ছবি, ভাষণ ও তার জীবনের নানা দিক।’

উল্লেখ্য, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জ জেলা টুঙ্গিপাড়ায় লুৎফর রহমান ও সায়রা বেগমের ঘর আলোকিত করে জন্মগ্রহন করেন। ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকীর উপলক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সংগ্রামী জীবন ও দেশ গঠনে তার অদম্য উৎসাহ, বলিষ্ঠ নেতৃত্ব, দেশের মানুষের প্রতি ভালোবাসা এবং কর্মময় জীবনের বিষয়টিকে নিয়ে এই রেল জাদুঘরটি নির্মাণ করা হয়। বিস্তীর্ণ জনপদে ছড়িয়ে থাকা রেল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের কাছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সংগ্রামী ও কর্মময় জীবনের অজানা তথ্য পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর’ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/জিএস/পিটিএম

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন