Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দেশের অর্থনীতিতে ৪ বিচ্যুতি রয়েছে: দেবপ্রিয়

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৩০ আগস্ট ২০২২ ১৭:২৬

ঢাকা: দেশের অর্থনীতিতে চার ধরনের বিচ্যুতি রয়েছে বলে মনে করেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) এই সম্মাননীয় ফেলো বলেছেন, ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগ না হওয়া, কর আহরণের দুর্বলতা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগের অভাব এবং সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে বৈষম্য অর্থনীতির প্রধান বিচ্যুতি। এসব বিচ্যুতি মোকাবিলা করা না গেলে পরবর্তী সময়ে উত্তরণ পর্যায়ে পৌঁছানো সম্ভব হবে না। একইসঙ্গে যে অর্জন হয়েছে সেটিও টেকসই হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) অর্থনৈতিক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনোমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত ‘ইআরএফ সংলাপ’ অনুষ্ঠানে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এসব কথা বলেন। রাজধানীর পুরানা পল্টনে ইআরএফ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংলাপে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি শারমিন রিনভী। ইআরএফ সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলাম অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি জটিল এবং সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। দেশে এবং বিশ্বে এরকম পরিস্থিতি হতে পারে তা আগেই বলা হয়েছিল। পাশাপাশি এ ধরনের সংকট মোকাবিলায় স্বল্প মেয়াদী স্থিতিকরণ কর্মসূচি জরুরি উল্লেখ করা হয়েছিল। যে কারণে জিডিপির অভিলাষ সংযত করে মূল্যষ্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আর্থিক ও বৈদেশিক লেনদেন নীতি গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন অনেকে। বৈদেশিক বাণিজ্য, বিনিয়োগ, বিনিময় হার এবং মূল্যষ্ফীতিতে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তা দ্রুত শেষ হবে না।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মূল সমস্যা বৈদেশিক লেনদেনে নয়, মূল সমস্যা আর্থিক খাতের দুর্বলতা। প্রয়োজনীয় রাজস্ব সংগ্রহ না হওয়া। যে কারণে জ্বালানিতে ভর্তুকি ও দরিদ্র্যদের খাদ্য সহায়তা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রবৃদ্ধি মূলত রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ দ্বারা ধাবিত। বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়েনি। জিডিপির ২৩ বা ২৪ শতাংশে আটকে আছে। রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ ৫/৬ শতাংশ থেকে ৭/৮ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগও হয়নি। এফডিআই জিডিপির এক শতাংশের নিচে। যা গতিশীল অর্থনীতির জন্য যথেষ্ট না।’

সিপিডির সম্মনীয় এই ফেলো বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ বেশি হলে সেগুলোর সুবিধা নিয়ে ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ বাড়ে। কিন্তু বাংলাদেশে সেটা ঘটেনি। বাংলাদেশের অবস্থা এক ইঞ্জিনে চলা অ্যারোপ্লেনের মত। যে বেশি দূর যেতে পারে না। কিছু দূর চলার পর রানওয়ে খুঁজতে থাকে।’

বিজ্ঞাপন

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘এক দশক ধরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হচ্ছে ৫ থেকে ৭ শতাংশ হারে। এর অর্থ আয় বাড়ছে। তাহলে কর সংগ্রহ হচ্ছে না কেন? নাকি হিসাবের গড়মিল আছে। কর সংগ্রহ করতে না পারার কারণে এখন আমদানি করা যাচ্ছে না। খাদ্য সহায়তা বাড়ানো যাচ্ছে না। শুল্ক কমাতে পারছে না। পরোক্ষ কর থেকে রাজস্ব সংগ্রহ করতে হচ্ছে বেশি। যা সাধারণ মানুষকে চাপে ফেলছে।’

তিনি বলেন, ‘সরকার ভৌত অবকাঠামো যে পরিমাণ বিনিয়োগ করছে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে সেই বরাদ্দ থাকছে না। ২০টি মেগা প্রকল্পের জন্য জিডিপির ২ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। অথচ স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ থাকছে জিডিপির এক শতাংশ। শিক্ষাতেও সমপরিমাণ। রাজনৈতিক শক্তি বৈধতার জন্য খুব দ্রুততার সাথে দৃশ্যমান ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন করতে চাচ্ছে। রাজনৈতিক ঘাটতি পূরণের চেষ্টা হচ্ছে। কারণ শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের বিনিয়োগের ফলাফল আসতে দশকের বেশি সময় লাগে। রাজনৈতিক চক্রে এই সময় নেই। পাশাপাশি সরকারের রাজনৈতিক দর্শনের কারণে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে বৈষম্য হচ্ছে। করোনার সময় সহায়তা বিতরণে বড়ধরনের বৈষম্য দেখা দিয়েছে। যার যা প্রাপ্য তা নথিভুক্ত হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘দেশে প্রতিযোগিতাপূর্ণ ব্যবসায়িক পরিবেশ তৈরি হচ্ছে না। বিশেষ জায়গা থেকে বিশেষ ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। এতে মেধাভিত্তিক ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ব্যক্তি বিনিয়োগ বিকশিত হচ্ছে না। ফলে ক্ষতি হচ্ছে সরকার, মানুষ ও দেশের। বিদ্যুৎ জ্বালানিতে প্রতিযোগিতার সুযোগ তুলে নেওয়া হয়েছে। বিচারের সুযোগও তুলে নেওয়া হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘পুঁজিবাদের বিকাশে সব দেশেই লুণ্ঠন হয়। বাংলাদেশে প্রথমে আর্থিক খাতে লুণ্ঠন হয়েছে। পরে হয়েছে পুঁজিবাজারে। এখন সরকারি প্রণোদনায় অতিমূল্যায়িত প্রল্পের মাধ্যমে ব্যক্তি, গোষ্ঠী ও প্রতিষ্ঠান লুণ্ঠন করছে। তবে লুণ্ঠনের পরে বিচার ব্যবস্থা, প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। বাংলাদেশে তা দেখা যাচ্ছে না। এখানে প্রতিযোগিতার চেয়ে সংযোগকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ফলে জবাবদিহিতার জায়গা দুর্বল হয়ে গেছে। এই পরিস্থিতির সবচেয়ে বড় ক্ষতি হবে প্রধান রাজনৈতিক শক্তির।’

গত এক দশককে দেশের ইতিহাসে অর্থনৈতিকভাবে প্রতিশ্রুতিশীল দশক হিসেবে উল্লেখ করে ড. দেবপ্রিয় বলেন, ‘বলতে হবে সফল দশক। এ সময়ে দেশ নিম্ন আয় থেকে নিম্ন মধ্যম আয়ে উন্নীত হয়েছে। এলডিসি থেকে উত্তরণের পথে এসেছে। সফলভাবে এমডিজি অর্জন করেছে। এসডিজি বাস্তবায়নে এগিয়েছে। মানুষের আয়ুষ্কাল, কৃষি উৎপাদন, শিক্ষার হার, মাথাপিছু রফতানি ও রেমিট্যান্স আয় বেড়েছে। বলতে হবে গত ১৩ বছর ছিল অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে সমৃদ্ধ সময়। তবে এতকিছুর পরও পেশাদার অর্থনীতিবিদদের দুঃখের কিছু বিষয় রয়েছে।’

সারাবাংলা/জিএস/পিটিএম

৪ বিচ্যুতি অর্থনীতি ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর