Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সলিমপুরে বিশ্ববিদ্যালয় ও পোশাকপল্লির জন্য জমি চায় বিজিএমইএ

রমেন দাশ গুপ্ত, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২ সেপ্টেম্বর ২০২২ ২২:০৪

জঙ্গল সলিমপুরে সরকারি খাসজমি দখল করে গড়ে উঠেছে অবৈধ বসতি

চট্টগ্রাম ব্যুরো: অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করে সরকারি খাসজমি উদ্ধারের প্রক্রিয়ার মধ্যেই চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার জঙ্গল সলিমপুরে একটি বিশ্ববিদ্যালয় করার জন্য ১০ একর জমি চেয়েছে রফতানিমুখী তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। পাশাপাশি একই এলাকায় পোশাকপল্লি স্থাপনের জন্য সংগঠনটি সরকারের কাছে আরও ২০০ একর জমি বরাদ্দ চেয়েছে।

তবে প্রাকৃতিক পরিবেশের ক্ষতি বিবেচনায় পোশাক কারখানা স্থাপনের বিষয়ে জেলা প্রশাসনের অনীহা আছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের বিষয়টি ইতিবাচকভাবে দেখা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিভিন্ন ধরনের স্থাপনার জন্য সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত আমরা ২৩টি আবেদন পেয়েছি। এর মধ্যে একটি বিজিএমইএর বিশ্ববিদ্যালয় করার আবেদন। তারা পোশাকপল্লির জন্যও জায়গা চেয়েছে। আমরা জঙ্গল সলিমপুর নিয়ে মাস্টারপ্ল্যান করছি। সেটা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। পরিবেশ-প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য অক্ষুন্ন রেখে কী কী স্থাপনার জন্য সেখানে জমি বরাদ্দ দেওয়া যাবে সেই আলাপ-আলোচনা চলছে। আশা করি সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে মাস্টারপ্ল্যান চূড়ান্ত হবে।’

২০১২ সালে চট্টগ্রাম নগরীর দক্ষিণ খুলশীতে নিজস্ব ভবনে চালু হয় বিজিএমইএ ইনস্টিটিউট অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি (সিবিআইএফটি)। ফ্যাশন ডিজাইন টেকনোলজি ও অ্যাপারেলস ম্যানুফেকচারিং টেকনোলজি বিষয়ের ওপর চার বছরের সম্মান কোর্স চালু আছে সেখানে। সেই ইনস্টিটিউটকে এখন আরও বড় পরিসরে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিজিএমইএ।

গত মাসে (আগস্ট) চট্টগ্রাম বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি (সিবিইউএফটি) স্থাপনের জন্য ১০ একর ভূমি বরাদ্দ চেয়ে জেলা প্রশাসকের বরাবরে আবেদন করেন প্রতিষ্ঠানটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান নাসিরউদ্দিন চৌধুরী।

বিজিএমইএ’র সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি নাসিরউদ্দিন চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় করার জন্য আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মৌখিক সম্মতি পেয়েছি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে গেজেট হয়ে যাবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি)। যেহেতু এটি একটি কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয় হবে, তাই ইউজিসি থেকে যেভাবে নির্দেশনা আসবে আমরা সেভাবেই কার্যক্রম শুরু করব। তার আগে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য ভূমির বিষয়টি নিশ্চিত করতে চাই। সলিমপুরে যেহেতু জায়গা পাওয়ার একটি সুযোগ তৈরি হয়েছে, সেজন্য আমরা ১০ একর জমি চেয়েছি। দেখা যাক, প্রশাসন কী সিদ্ধান্ত নেয়।’

জেলা প্রশাসনের দেয়া তথ্যানুযায়ী, সীতাকুণ্ডের দুর্গম পাহাড়ি এলাকা জঙ্গল সলিমপুর পাহাড়ের পাঁচটি মৌজায় প্রায় ৩ হাজার ১০০ একর সরকারি খাসজমি আছে। ‘চট্টগ্রাম মহানগর ছিন্নমূল বস্তিবাসী সমন্বয় সংগ্রাম পরিষদ’ নামের একটি সংগঠন সেই খাসজমি দখল করে প্রায় তিন দশক ধরে সেখানে পাহাড় কেটে ও জঙ্গল সাফ করে প্লট বিক্রি করে আসছে। নিম্ন আয়ের লোকজন সেই প্লট কিনে সেখানে বসতি ও দোকানপাট গড়ে তুলেছে, যার মধ্যে মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গারাও রয়েছে। জেলা প্রশাসন বেশ কয়েকবার উদ্যোগ নিয়েও সেখান থেকে তাদের সরাতে পারেনি। সর্বশেষ জনশুমারি অনুযায়ী ওই এলাকায় প্রায় ১৯ হাজার মানুষ বসবাস করে।

বর্তমান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান সলিমপুর থেকে অবৈধ বসতি ও স্থাপনা উচ্ছেদের মাধ্যমে সরকারি খাসজমিগুলো উদ্ধার করে সেখানে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেন। জুলাই মাস থেকে এই উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়।

সীতাকুণ্ড সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আশরাফুল আলম সারাবাংলাকে জানান, ৩১০০ একর সরকারি খাসজমির মধ্যে প্রাথমিক জরিপ চালিয়ে ৭০০ একর ব্যবহারের উপযোগী ভূমি চিহ্নিত করা হয়েছে। বাকি ভূমি পাহাড়, গাছপালাবেস্টিত। তবে আরেক দফা ডিজিটাল সার্ভে করা হবে। ব্যবহার উপযোগী ভূমির মধ্যে ‘নাইট সাফারি পার্কের’ জন্য ৫৭ একর জমি চিহ্নিত করা হয়েছে। এর বাইরে যেসব আবেদন জমা পড়েছে, সেগুলোর বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।

সলিমপুরের ব্যবহার উপযোগী ভূমিতে পুলিশের চেকপোস্ট, পুলিশ-আনসার ও র‌্যাবের ক্যাম্প কার্যালয়, স্পোর্টস ভিলেজ, ভূমিহীনদের পুনর্বাসনের জন্য আবাসিক এলাকা, কারাগার, আর্মি স্টেডিয়াম, বিজিএমইএ’র ‘স্বতন্ত্র গার্মেন্টস জোন’ স্থাপনের আবেদন জমা আছে। এছাড়া বেসরকারি আরও অনেক প্রতিষ্ঠান জায়গা চেয়েছে বলে জানালেন আশরাফুল আলম।

বিজিএমইএ’র সূত্র মতে, চট্টগ্রাম নগরীতে বিচ্ছিন্নভাবে গড়ে ওঠা ভাড়া ভবনে অন্তত ছোট ও মাঝারি ২০০ কারখানাকে সেখানে স্থানান্তর করে স্বতন্ত্র গার্মেন্টস জোন গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছে সংগঠনটি। পূর্ণাঙ্গ কমপ্লাইয়েন্স কারখানা হিসেবে স্থাপনের জন্য প্রতিটি কারখানার বিপরীতে এক একর করে মোট ২০০ একর জমি বরাদ্দ চাওয়া হয়।

তবে স্বতন্ত্র গার্মেন্টস জোনের বিষয়ে নেতিবাচক মনোভাব আছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের। তাদের মতে, এতে সলিমপুরের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি হবে।

জেলা প্রশাসক মমিনুর রহমান বলেন, ‘আমরা এককভাবে কোনো গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রির জন্য জায়গা দেব না। সেখানে আমরা গ্রিন ইন্ডাস্ট্রি জোন করব। যারা সবধরনের পরিবেশগত কমপ্লাইয়েন্স মেনে নিয়ে কাজ করতে পারবে তাদের বরাদ্দ দেওয়া হবে। এই গ্রিন ইন্ডাস্ট্রি জোনে কোন গ্রিন গার্মেন্টস স্থাপন করতে চাইলে তাদের জায়গা দেওয়া হবে।’

বিজিএমইএ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিজিএমইএ-ও জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত। তারা সলিমপুরে গ্রিন গার্মেন্টস চালু করতে চায়। যেখানে ইটিপি থেকে শুরু করে সৌরবিদ্যুৎসহ সবধরনের পরিবেশবান্ধব সিস্টেম গড়ে তোলা হবে।

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

চট্টগ্রাম জমি পোশাকপল্লি বিজিএমইএ বিশ্ববিদ্যালয় সলিমপুর


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর