Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ইছামতির থাবায় বিলীন হচ্ছে ঘিওরের পুরাতন গরুর হাট

রিপন আনসারী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১১:৫১

মানিকগঞ্জ: পদ্মা-যমুনার পর এবার হঠাৎ করেই ফুঁসে উঠেছে ইছামতি নদী। পদ্মা-যমুনার এ শাখা নদীর ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলায়। ভাঙনে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে প্রায় দুইশ বছরের ঐতিহ্যবাহী পুরাতন গরুর হাটের অধিকাংশ জায়গা।

শুধু তাই নয়, হাটসংলগ্ন প্রায় ২০-২৫টি বতসবাড়ি ও হুমকির মধ্যে রয়েছে প্রায় এক কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ঘিওর-গোলাপনগর রাস্তা, দু’টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্রিজ, কালভার্টসহ নদীর তীরবর্তী ১৬টি গ্রাম। এছাড়া দুই দিন ধরে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় ভাঙন আরও তীব্র হওয়ার আশঙ্কা করছে এলাকাবাসী।

ভাঙনকবলিত এলাকা সরেজমিনে দেখা গেছে, ঘিওর সদর ইউনিয়নের ২০০ বছরের ঐহিত্য গরুর হাটটি ইছামতির তাণ্ডবে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বিশাল বড় এই হাটের অর্ধেকাংশ গেল কয়েক দিনে নদীর পেটে চলে গেছে। হাটের আশপাশের এলাকার ঘরবাড়িও গ্রাস করে নিয়েছে এ ভাঙন। এছাড়া বড় রামকান্তপুর-কুঠিবাড়ি এলাকায় ইছামতি শাখা নদীর ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে কমপক্ষে ৫০টি পরিবার। অনেকের বাড়ির অর্ধেক অংশ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।

আসবাবপত্র, অন্যান্য সামগ্রী অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। ভাঙনে কুস্তা কফিল উদ্দিন দরজি উচ্চবিদ্যালয় ও কুস্তা ব্রিজ, ঘিওর-গোলাপ নগরের রাস্তা, বেপারীপাড়া কবরস্থান, রসুলপুর গ্রামের বসতবাড়ি, কবরস্থান, বেপারীপাড়া কবরস্থানটি হুমকির মধ্যে রয়েছে। যে কোন সময় নদীগর্ভে হারিয়ে যাবে এসব স্থাপনা ও বসতবাড়ি।

ইছামতী নদীর ভাঙনকবলিত এলাকার বাসিন্দা ঘিওর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক রাম প্রসাদ দিপু বলেন, আমার এই জীবনে অনেক নদী ভাঙন দেখেছি। কিন্ত অসময়ে ইছামতি নদীর এমন ভয়ানক ভাঙন এই প্রথম দেখছি। মাত্র এক সপ্তাহের ব্যাবধানে এখানে এলাকা তছনছ হতে দেখেছি।

ঘিওর ঐহিত্যবাহী এ গরুর হাটটির অধিকাংশই গিলে খেয়েছে ইছামতি। খাদ্য গুদামের সামনের বেলি ব্রিজটিও যে কোন মুহূর্তে চলে যাবে। ঘিওর সদর ইউনিয়নের ৭ থেকে ৮টি স্পটে ভাঙনের মাত্র ভয়াবহ আকার ধারন করেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙন রোধে কিছু বালুর বস্তা ফেললেও সেটা দায়সারা। কোন কাজেই আসছে না। ভাঙনে হুমকির মুখে রয়েছে কুস্তা কবরস্থান ও শ্মশ্মান ঘাটটিও। এ অবস্থায় ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষ নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে।

মুক্তিযোদ্ধা কে এম সিদ্দিক আলী বলেন, গেল কয়েক দিন ধরে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ইছামতি নদী ভাঙন ভয়াবহ আকার ধারণ করে। আমার বাড়ি ভাঙন এলাকায়, রাতে ঘুমানোর সময় আতঙ্কে থাকি। কখন যেন আমার বাপ-দাদারের ভিটামাটি ঘর নদী গর্ভে চলে যায়। অসময়ে এ রকম ভাঙনের আগে কখনও দেখিনি।

ঘিওর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অহিদুল ইসলাম বলেন, ভয়াবহ ভাঙনে আমার ইউনিয় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক স্থাপনা ইতোমধ্যে নদী গর্ভে চলে গেছে। অসহায় হয়ে পড়েছেন অনেক পরিবার। নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় তালিকা করা হয়েছে। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্তরা সাহায্যের পরিবর্তে ভাঙন রোধে স্থায়ী সমাধান চান।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে ২ কোটি ৫০ লাখ টাকার একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঠিকাদারদের মাধ্যমে প্রায় ২২ হাজার জিও ব্যগ ফেলার কাজ চলছে। তারই অংশ হিসেবে এই জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার তদারকিতে জরুরিভিত্তিত্তে জিও ব্যাগ ফেলার ব্যবস্থা করেছেন মানিকগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য এ এম নাঈমুর রহমান দুর্জয়।

ঘিওর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হামিদুর রহমান বলেন, ‘উপজেলার সম্ভাব্য ভাঙনকবলিত এলাকার নাম উল্লেখ করে জুন ও আগস্ট মাসে পানি উন্নয়ন বোর্ড বরাবর আবেদন করি। এরপর স্থানীয় এমপির ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় রসুলপুর, কুস্তা বন্দর, ঘিওর গরু হাট এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ড জিও ব্যাগ ফেলার কাজ শুরু করেছে। গত বৃহস্পতিবার থেকে পুরোদমে মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙন কবলিত এলাকায় ২২ হাজার জিও ব্যাগ ফেলার কাজ শুরু হয়েছে। কাজগুলো শেষ হলে ভাঙন থেকে সংশ্লিষ্ট এলাকাসমূহ রক্ষা পাবে।’

মানিকগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য নাঈমুর রহমান দুর্জয় জানান, ‘ভাঙনকবলিত এলাকার লোকজনের জন্য সরকারিভাবে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া করা হবে। ভাঙন রোধে সংশ্লিষ্টদের জরুরিভিত্তিতে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

সারাবাংলা/ইআ

ইছামতি নদী টপ নিউজ নদী ভাঙন


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর