৪১৮ বছর ধরে দশভুজা মন্দিরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে দুর্গাপূজা
৪ অক্টোবর ২০২২ ০৯:৪৬
নেত্রকোনা: জেলার সীমান্ত এলাকা দুর্গাপুরে এখন রাজার বাড়ি নেই। সেনাপতি সৈন্য সামন্ত হাতি, ঘোড়া, প্রহরী, পাইক-পেয়াদা ও দ্বার রক্ষক কিছুই নেই। তবে রাজবাড়ির দশভুজা মন্দিরের এখন নিয়ম করে প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হয় শারদীয় দুর্গোৎসব। দেশের অন্যতম প্রাচীন এই মন্দিরটিতে এবার ৪১৮তম দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
এক সময় নেত্রকোনার এই রাজবাড়িকে বসবাস করতেন প্রতাপী রাজা রঘুনাথ রায়। ধারণা করা হয়, তার হাত ধরেই ওই সময় প্রথম দুর্গাপূজোর প্রচলন হয়েছিল ময়মনসিংহসহ এ অঞ্চলে। তবে এখনতিনি ইতিহাস। সময়ের পরিবর্তনে দুর্গাপূজা আজ রাজ রাজড়া শ্রেণির পূজা থেকে সার্বজনীন পূজায় রূপ নিয়েছে। দেখতে দেখেতে দশভুজা মন্দিরে দুর্গাপুজা উদযাপন ৪০০ বছর পেরিয়ে গেছে।
জানা গেছে, মোঘল শাসনামলে সম্রাট আকবরের নির্দেশে তৎকালীন সুসঙ্গ রাজ্যের রাজা রঘুনাথ রায় বাংলায় মোঘল সাম্রাজ্যের বিরোধীতাকারী বারো ভূঁইয়াদের অন্যতম বিক্রমপুরের প্রতাপশালী রাজা কেদার রায়ের সঙ্গে যুদ্ধে অবতীর্ণ হন (১৬০৩ খ্রিস্টাব্দে)। কেদার রায়কে পরাজিত করে নিজ রাজ্য থেকে একটি অষ্টধাতুর তৈরি দুর্গা মূর্তি সুসঙ্গ রাজ্যে নিয়ে এসে রাজমন্দিরে প্রতিষ্ঠা করেন রঘুনাথ। এরপর থেকে প্রতিবছর দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে এই মন্দিরটিতে। যা দশভুজা মন্দির নামে সুপরিচিত। তখন থেকেই সুসঙ্গ নামের সঙ্গে দুর্গাপুর নামটি যোগ হয়।
১৯৫৪ সালে জমিদারী প্রথা বিলুপ্ত হলে এই মন্দিরটি অরক্ষিত হয়ে যায়। আর সেখানে রক্ষিত অষ্টধাতুর মূর্তিটিও চুরি হয়ে যায়। পরবর্তীতে সেখানে অন্য মূর্তি স্থাপন করা হয়।
দশভূজা মন্দিরের বর্তমান পুরোহিত ধনেশ চন্দ্র ভট্টাচার্যের পূর্ব পুরুষরাই এই রাজমন্দিরের সেবায়েত ছিলেন। বংশানুক্রমে তারাই এই মন্দিরে পূজার্চনা করে আসছেন। তিনি বলেন,‘মন্দিরে বিগ্রহ স্থাপন হওয়ার পর থেকে একমাত্র ১৯৭১ সালের যুদ্ধকালীন সময় ব্যতীত প্রতিবছরই দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। হিসেব করে দেখা যায়- চলতি বছর নিয়ে ৪১৮তম বছর পার করছে দশভূজা মন্দিরের দুর্গাপূজা।’
প্রাচীন এই মন্দিরের পূজা দেখতে প্রতিবছরই দূর-দূরান্ত থেকে ভক্তরা ভিড় করেন এখানে। মন্দিরটি বর্তমান দুর্গাপুর শহরের প্রাণকেন্দ্রে সুসঙ্গ কলেজের দক্ষিণে অবস্থিত।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জ্ঞানেশ সরকার বলেন, ‘সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিটি মণ্ডপের মতো দশভুজা মন্দিরে ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন ও বেশ সোচ্চার রয়েছে। সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।’
সারাবাংলা/এনএস