Thursday 16 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বাসে যৌন হয়রানি, প্রতিকার চাইতে গিয়ে পুলিশের দুর্ব্যবহারের শিকার


২৬ এপ্রিল ২০১৮ ১৮:৪৩ | আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০১৮ ১৮:৫৩

।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: রাজধানীতে গণপরিবহনে যৌন হয়রানির শিকার হওয়া এক কর্মজীবী নারী পুলিশের কাছে সাহায্য চাইতে গিয়ে তাদের দুর্ব্যবহারের শিকার হয়েছেন, এমন কি থানা থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

বুধবার (২৫ এপ্রিল) রাতে লালবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুভাষ চন্দ্র পালের সঙ্গে ওই নারীর এ ঘটনা ঘটে।

বাসে হয়রানির শিকার হওয়া ওই নারী সারাবাংলাকে বলেন, ২৫ এপ্রিল বুধবার সন্ধ্যার পর প্রচণ্ড ঝড়বৃষ্টি শুরু হয়। সে সময় আসাদ গেট থেকে দুই সহকর্মীর সঙ্গে ঠিকানা পরিবহনের একটি বাসে ওঠেন আজিমপুরের উদ্দেশ্যে। বাসের সামনের সিট খালি না থাকায় ভেজা কাপড়ে পেছনের সিটে গিয়ে বসেন।

সে সময় বাসে থাকা কয়েকজন তাদের দেখে কুরুচিপূর্ণ কথাবার্তা বলতে থাকে। এর প্রতিবাদ করলে তারা আরও বাজে কথাবার্তা ও আচরণ করতে শুরু করে।

রাত ৮টার দিকে বাসটি আজিমপুর বাসস্ট্যান্ডে থামলে তারা স্থানীয় পুলিশ বক্সে গিয়ে অভিযোগ করেন। উত্তরে পুলিশ সদস্যরা জানায়, আপা বৃষ্টি হচ্ছে, বাইরে যেতে পারবো না। আপনিও চলে যান।

অনেক অনুরোধ করার পর দুজন পুলিশ কনস্টেবল বাসের কাছে অসেন। ততক্ষণে অনেকে নেমে গেছে, দুই একজন আছে। তাদের একজনকে নিয়ে আসলেন। তখন ওই ছেলেটি পুলিশকে জানালো, তারা ঢাকা কলেজের ছাত্র।

সে সময় পুলিশের এএসআই আব্দুল মাজেদ এসে বলেন, আপনার কিছু হারিয়েছে? আপনার কোনো ক্ষতি হয়েছে? আমি বলি, হ্যাঁ হয়েছে, সম্মানের ক্ষতি হয়েছে। বলতেই পাশে থাকা বিশ্বনাথ নামে এক কনস্টেবল বলেন, বাসে উঠলে ছেলেরা মেয়ে মানুষকে একটু-আধটু ইভটিজিং করতেই পারে। এটা মেনে নেন। বৃষ্টি হচ্ছে, মেনে নিয়ে চলে যান তো আপা!

বিজ্ঞাপন

এ কথা শুনে এএসআই মাজেদও বলেন, আপা হয় মাইনা নিয়ে চইলা যান আর না হইলে গাড়িতে ওঠেন থানায় চলেন।

তখন ওই নারী বলেন, কেন আমি একা গাড়িতে উঠবো? আর কেনই বা একা থানায় যাব। যারা অপরাধ করছে তাদেরকেও গাড়িতে ওঠান, আমিও যাব। ওই ছেলেরা অপরাধ করেছে। আপনারা পুলিশ। আপনাদের কাছে বিচার চাইলাম। ছেলেদের না ধরে আপনারা এসব কি বলছেন।

তখন এএসআই মাজেদ ছেলেটার কানে যেন কী একটা বললেন। তখন ছেলেটি হাসতে হাসতে এসে মেয়েটিকে বলেন, আপা বাসে খারাপ আচরণ করছি। মাফ কইরা দেন। এরপর পুলিশের সামনেই ছেলেটি হাসতে হাসতে চলে যায়।

এরপর বাসায় গিয়ে ওই নারী তার মাকে বিষয়টি খুলে বলেন। তার মা কানিজ ফাতেমা ভিকারুন নেসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ডে শিফটের শরীর চর্চা বিষয়ক শিক্ষিকা। তিনি লালবাগ থানার ওসিকে ফোন করেন।

ওসি তখন ফোনে জানান ১০ মিনিটের মধ্যে থানায় আসতে পারলে আসেন। ১০ মিনিটের আগেই মা-মেয়ে দুজনে থানায় হাজির হয়ে ওসিকে ঘটনার বিস্তারিত বলেন।

ভুক্তভোগী নারীর দাবি, ওসি শুরু থেকেই কোনো কথা শুনতে রাজি ছিলো না। শুধু বলেন, এএসআই মাজেদ তো সমাধান করে দিয়েছেন। এটার আর কী আছে। মেনে নেন, ঢাকা শহরে এরকম একটু তো হবেই। আপনারা শিক্ষিত মানুষ। যা মিউচুয়াল হয়েছে মেনে নেন।

এরপর ওই নারী ওসিকে বলেন, দেখেন আমরাও পুলিশ পরিবারেরই একজন। আমার মামা কারা অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক। একটু সহায়তা করেন আমাদের। এএসআই মাজেদ ওই ছেলেদের না ধরে বরং আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছেন। তিনি ইচ্ছা করলেই তো ছেলেটিকে ধরে থানায় নিয়ে আসতে পারতেন।

এ কথা শুনে সুভাষ চন্দ্র পাল ক্ষেপে গিয়ে বলেন, আপনার মামার ভয় দেখান? আপনি যান তার কাছে। আমার সময় নেই। ট্রেনের টিকেট কাটা আছে। আমি চট্টগ্রাম যাচ্ছি। আপনারা দুই দিন পরে আসেন।

বিজ্ঞাপন

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে লালবাগ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সারাবাংলাকে বলেন, খারাপ আচরণ আমি করিনি। তিনি আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছেন। ওনি মামার ভয় দেখিয়েছেন তাই বলেছি, তার কাছে যান। আর এএসআই আব্দুল মাজেদ কি করেছেন সেটা খতিয়ে দেখতেও তো সময়ের দরকার আছে। এখানে আমাকে কেন টানা হচ্ছে সেটাই তো বুঝতে পারছি না, বলেও জানানতিনি।

সারাবাংলা/ইউজে/এমআই

বিজ্ঞাপন

২০২৫ সালেই বার্সায় ফিরছেন মেসি?
১৬ জানুয়ারি ২০২৫ ১০:৩৫

আরো

সম্পর্কিত খবর