‘গণতন্ত্র ফেরাতে হাজারো নেতাকর্মী প্রাণ দেবে’
১০ অক্টোবর ২০২২ ১৯:০১
ঢাকা: দেশে গণতন্ত্র ফেরাতে দলের ‘হাজারো নেতা-কর্মী প্রাণ দেবে’ বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সোমবার (১০ অক্টোবর) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী নব্বয়ের গণআন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত নাজির উদ্দিন জেহাদের ৩২তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে শহীদ জেহাদ স্মৃতি পরিষদ এ আলোচনা সভা আয়োজন করে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চাই, আমরা দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে চাই, আমরা মানুষের অধিকারকে ফিরিয়ে আনতে চাই। এ জন্য এরইমধ্যে আমাদের সাত জন প্রাণ দিয়েছে। আমাদের হাজারো লোক প্রাণ দেবে। গণতন্ত্রকে অবশ্যই আমরা ফিরিয়ে আনব।’
সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনাদের এখনো সময়। সেইফ এক্সিট করেন, চলে যান, ক্ষমতা ছাড়েন। নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা দেন, সংসদ বিলুপ্ত করেন। নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে করে নতুন পার্লামেন্ট ইলেকশন দেন। তারা নতুন করে সরকার গঠন করবে, দেশে নতুন একটা সরকার ব্যবস্থা চালু হবে। তা না হলে পালাবার পথটাও খুঁজে পাবেন না। এখনই সময় আছে সেটা করেন।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জনগণের ওপরে আমাদের আস্থা আছে। আমরা বিশ্বাস করি, এদেশের মানুষ কোনোদিন অন্যায়কে মেনে নেয়নি, কোনোদিন গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে তারা কাউকে জয়ী হতে দেয়নি। গণতন্ত্রের পক্ষে তারা লড়াই করেছে আজ থেকে নয়, দীর্ঘকাল থেকে, শতবর্ষ থেকে। সেই দেশের মানুষ জেগে উঠছে। এখন আর বলতে হয় না যে, জেগে ওঠো।’
‘আমি শুধু অনুরোধ করব আমাদের তরুণ সমাজকে, আমাদের যুব সমাজকে আরও এগিয়ে আসুন, আরও সামনে আসুন। শুধুমাত্র নিজের কথা চিন্তা না করে, নিজের ভাগ্যের কথা চিন্তা না করে দেশের কথা চিন্তা করুন, দেশের মানুষের কথা চিন্তা করুন, চিন্তার করে যুক্ত হোন। এই যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, এই যে বাংলাদেশকে মুক্ত করবার যে আন্দোলন শুরু হয়েছে সেই আন্দোলনে, সেই সংগ্রামে আপনারা সবাই যুক্ত হোন’- বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘বিএনপি যখনই ক্ষমতায় আসে তখনই তারা জনগণের কল্যাণে জন্য কাজ করে, জনগনের পক্ষে কাজ করে। আসুন আমরা সেই লক্ষ্যে আজকে জেহাদকে এবং ৯০‘র যারা শহীদ হয়েছেন তাদেরকে এবং এই গণতন্ত্র ফেরানো আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন তাদেরকে স্মরণ করে আর পেছন দিকে না তাকিয়ে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাই এবং এই ভয়াবহ দানবকে পরাজিত করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করি।’
বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের জন্য সরকারকে দায়ী করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এখন প্রতিদিন কমপক্ষে তিন/চার বার বিদ্যুত চলে যায়, ৬ ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং থাকে। অথচ কত ঢাক-ঢোল পিটিয়ে, আতশবাজি ফুটিয়ে বাংলাদেশ বিদ্যুতের পুরোপুরি স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে গেছে- আর কোনো অসুবিধা নাই। তার অবস্থা হচ্ছে এটা(লোডশেডিং)। কারণ কী? কারণ হচ্ছে তাদের (সরকার) চুরি, দুর্নীতি। কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট করে তারা সমানে চুরি করে নিয়ে গেছে। ক্যাপাসিটি চার্জ ২৮ হাজার কোটি টাকা একবছরে দিতে হয়েছে এবং দিতেই হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা এখান থেকে পরিত্রাণ চাই। এরইমধ্যে আমরা জনগণের মধ্যে যাওয়া শুরু করেছি। কিছুদিন আগেও আমাদের যারা নিন্দুক তারা বলতেন, আরে বিএনপি নাই, বিএনপির কোনো চিহ্নিই নাই, রাস্তায় বিএনপি নাই, মুরদ নাই, হাটুভাঙা- এসব অনেক কথা বলেছে তাই না। এখন কী বলছে? বাবা তোমরা ধমক দিও না। এই যে, আমান উল্লাহ আমান সাহেব যে একটা ধমক দিয়েছে- ওদের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। এখন টেলিভিশন খুলে দেখি ওদের যত লোক জন আছে খালি ওটাই নিয়ে লেগে পড়েছে।’
জেহাদ স্মৃতি পরিষদের সভাপতি নব্বই সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের আহবায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও খায়রুল কবির খোকনের পরিচালনায় আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সাবেক ছাত্র নেতা শামসুজ্জামান দুদু, আসাদুজ্জামান রিপন, হাবিবুর রহমান হাবিব, ফজলুল হক মিলন, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, নাজিম উদ্দিন আলম, সাইফুদ্দিন মনি, খোন্দকার লুতফর রহমান, আসাদুর রহমান খান, কামরুজ্জামান রতন, আজিজুল বারী হেলাল, মীর সরাফত আলী সপু, আমিরুল ইসলাম খান আলীম, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, শহিদুল ইসলাম বাবুল, আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, ছাত্র দলের সাইফ মাহমুদ জুয়েল, উলামা দলের শাহ নেছারুল হক, জেহাদের ভাই কে এম শরীফ উদ্দিন প্রমুখ।
সারাবাংলা/এজেড/ইআ