নারায়ণের সঙ্গে ‘খেলতেই হলো’, বিজয়ী পেয়ারুল
১৭ অক্টোবর ২০২২ ১৯:৩৩
চট্টগ্রাম ব্যুরো : নানা নাটকীয়তায় আলোচিত চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে জয় পেয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এটিএম পেয়ারুল ইসলাম। তিনি পেয়েছেন ২ হাজার ৫৬৭ ভোট। তার প্রতিদ্বন্দ্বী নারায়ণ রক্ষিত পেয়েছেন ১২৪ ভোট।
‘খালি মাঠে এটিএম পেয়ারুল ইসলাম গোল দেবেন’ এমন গুঞ্জন থাকলেও শেষপর্যন্ত তাকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেই জিতে আসতে হয়েছে, যদিও ভোটের ব্যবধান অনেক বেশি। অন্যদিকে কোনো ধরনের প্রচারণা-গণসংযোগ ছাড়াই ১২৪ ভোট পেয়েছেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নারায়ণ রক্ষিত। শতভাগ আওয়ামী লীগ দলীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে শতাধিক ভোট টানাকে নিজের ‘বিজয়’ মনে করছেন এই প্রার্থী।
সোমবার (১৭ অক্টোবর) সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোটগ্রহণের পর রিটার্নিং অফিসার চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান আনারস প্রতীকের প্রার্থী পেয়ারুলকে বিজয়ী ঘোষণা করেন।
হাসানুজ্জামান সারাবাংলাকে বলেন, ‘কোনো ধরনের সংঘাত-সহিংসতা ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণ হয়েছে। ইভিএম’র মাধ্যমে ভোট হওয়ায় ফলাফলও দ্রুততার সঙ্গে ঘোষণা দেওয়া গেছে।’
বিজয় ঘোষণার পর সারাবাংলাকে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় এটিএম পেয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘এই বিজয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিজয়। তিনি চট্টগ্রামে বিভিন্ন মহাপ্রকল্পের মাধ্যমে যে বিশাল উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ শুরু করেছেন, তার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে ভোটাররা আমাকে নির্বাচিত করেছেন। চট্টগ্রামের এক কোটিরও বেশি মানুষের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা আমাকে সমর্থন জানিয়ে বিজয়ী করেছেন। তাদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। কাজের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর আস্থার প্রতিদান দেব।’
গত ১৫ সেপ্টেম্বর এটিএম পেয়ারুল ইসলামের মনোনয়নপত্র গ্রহণ করে তার বিজয় কামনা করে মোনাজাতে অংশ নেওয়ার অভিযোগে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমানকে রিটার্নিং অফিসারের পদ থেকে সরিয়ে দেয় নির্বাচন কমিশন। এর ফলে শুরু থেকেই আলোচনার শীর্ষে ছিল চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ নির্বাচন।
চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন তিনজন। আওয়ামী লীগ মনোনীত এটিএম পেয়ারুল ইসলাম, স্বতন্ত্র হিসেবে কৃষকলীগ নেতা মো. ফয়েজুর রহমান এবং নিবন্ধনের প্রক্রিয়ায় থাকা জাতীয় স্বাধীনতা পার্টির মহাসচিব নারায়ণ রক্ষিত।
পরে ফয়েজুর প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। অন্যদিকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়াতে হুমকি এবং প্রস্তাবকারী ও সমর্থনকারীকে অপহরণের অভিযোগ এনে ১৭ সেপ্টেম্বর সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন নারায়ণ রক্ষিত। শেষ পর্যন্ত জোর গুঞ্জন ছিল, নারায়ণ রক্ষিতও সরে দাঁড়াবেন। কিন্তু নারায়ণ রক্ষিত শেষ পর্যন্ত প্রার্থী হয়েই ছিলেন, যদি-ও মনোনয়ন পত্র দাখিল থেকে ভোট পর্যন্ত কার্যত ‘আত্মগোপনে’ ছিলেন তিনি।
নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর এ বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণ রক্ষিত সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে অনেক চাপ দিয়েছে। আমি সংবাদ সম্মেলন করে বলেছি। আমাকে হুমকি-ধমকি দেওয়া হয়েছে। এ জন্য আমি কোথাও প্রচারণা চালাইনি, গণসংযোগ করতে পারিনি। প্রকাশ্যে আসতে পারিনি। কারও কল রিসিভ করিনি। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম— নির্বাচন করবই। খালি মাঠে ওনাকে (পেয়ারুল) গোল দিতে দেব না। ভোটের ফলাফলে আমি হেরেছি। কিন্তু আমি মনে করি আমার বিজয় হয়েছে। যারা ভোট দিয়েছেন, তারা সবাই আওয়ামী লীগের লোক। তাদের মধ্যে ১২৪ জন আমাকে ভোট দিয়েছেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে প্রত্যাখান করেছেন। এটিই আমার বিজয়।’
একই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে এটিএম পেয়ারুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘খালি মাঠে গোল দেওয়ার চেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জিতে আসার আনন্দ অনেক অনেক বেশি। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ১২৪ ভোট পেয়েছেন। ভোটার হিসেবে যেসব জনপ্রতিনিধিরা ভোট দিয়েছেন তাদের মধ্যে ৯০ ভাগ আওয়ামী লীগের, বাকি ১০ ভাগ অন্য দলের। ভিন্ন দলের ভোটারদের ভোট পাইনি। আমাদের মধ্যেও কেউ কেউ হয়ত আমাকে একটু কম পছন্দ করেন।’
রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, চেয়ারম্যান পদে ২ জন, সংরক্ষিত পদে ২১ জন এবং ১০টি ওয়ার্ডের ৩৯ জন সাধারণ সদস্য নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। চট্টগ্রাম জেলার আওতাধীন ১৫টি ওয়ার্ডে স্থানীয় সরকারের মোট ২৭৩০ জন নির্বাচিত প্রতিনিধি ভোটার হিসেবে ছিলেন। এর মধ্যে ২৬৯৬ জন ভোট দিয়েছেন। ভোটের শতকরা হার ৯৮ দশমকি ৭৫ শতাংশ।
ভোটের ফলাফলে দেখা গেছে, এটিএম পেয়ারুল ইসলাম সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছেন নিজের উপজেলা ফটিকছড়িতে, ২৫৯ ভোট। নারায়ণ রক্ষিত নিজের উপজেলা আনোয়ারায় পেয়েছেন মাত্র দুই ভোট। একই সংসদীয় আসনের অন্তর্ভুক্ত কর্ণফুলী উপজেলায় পেয়েছেন এক ভোট।
ইভিএম-এ যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে সন্দ্বীপ উপজেলায় প্রায় ২৫ মিনিট দেরিতে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। নির্বাচন নিয়ে তেমন উৎসবমুখর পরিবেশ কোথাও দেখা যায়নি। কোথাও সংঘাতের কোনো খবরও পাওয়া যায়নি। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বোয়ালখালী উপজেলা কেন্দ্রে ভোট দেন।
উল্লেখ্য, প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় মীরসরাই, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, বোয়ালখালী ও আনোয়ারায় সাধারণ সদস্য পদে ভোটগ্রহণ হয়নি।
সারাবাংলা/আরডি/একে