‘ষড়যন্ত্রের ১১ হাজার না-ভোটে হেরেছিলাম সংসদ নির্বাচনে’
১৯ অক্টোবর ২০২২ ২২:৩৪
চট্টগ্রাম ব্যুরো: নবনির্বাচিত চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম অভিযোগ করেছেন, ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের ভেতরে-বাইরের নানামুখী ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তিনি পরাজিত হয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমি ফটিকছড়ি সংসদীয় আসনে মহাজোটের প্রার্থী ছিলাম। সেই নির্বাচনে আমার এলাকায় যদি ১১ হাজার যদি ‘না-ভোট’ না পড়ত তাহলে আমিই জিততাম।’
গত সোমবার (১৭ অক্টোবর) অনুষ্ঠিত জেলা পরিষদ নির্বাচনে ৯৮ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা এটিএম পেয়ারুল ইসলাম। নির্বাচনের দুইদিন পর বুধবার সংবাদ সম্মেলনে এসে তিনি বলেন, ‘আমি নির্দিষ্ট কোনো এলাকার প্রতিনিধি হতে চাই না, চট্টগ্রামের ৯১ লাখ ৬৩ হাজার ৭৬০ জন মানুষের প্রতিনিধি হয়ে সেবা করতে চাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উন্নত, সমৃদ্ধ চট্টগ্রাম গড়তে সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে কাজ করব।’
উল্লেখ্য, ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যালটে ‘না-ভোট’ প্রয়োগের সুযোগ দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। পরবর্তী নির্বাচন থেকে অবশ্য না-ভোটের বিধান বিলুপ্ত করা হয়।
চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসন থেকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের মনোনয়ন পেয়েছিলেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম। তার মূল প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের প্রার্থী ছিলেন সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী। পেয়ারুল ৩৭ হাজার ৬৭ ভোটের ব্যবধানে ‘যুদ্ধাপরাধী’ সালাহউদ্দিন কাদেরের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। সাকা চৌধুরী পেয়েছিলেন ১ লাখ ২৯ হাজার ৩৩৩ ভোট। পেয়ারুল পেয়েছিলেন ৯২ হাজার ২৬৬ ভোট।
সেই নির্বাচনে ফটিকছড়ি সংসদীয় আসনে মোট ভোটার ছিল ২ লাখ ৮০ হাজার ১৪৫ জন। ভোট দিয়েছিলেন ২ লাখ ২৬ হাজার ৮৩১ জন। এর মধ্যে ২ হাজার ৭৭৫ ভোট বাতিল হয়। বৈধ ভোট ছিল ২ লাখ ২৪ হাজার ৫৬। ‘না ভোট’ পড়েছিল ১ হাজার ৩৫৯টি। বৈধ ভোটের শতকরা হার ছিল ৭৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ। না- ভোটের হার ছিল শূন্য দশমিক ৪৯ শতাংশ।
ফটিকছড়ি সংসদীয় আসন থেকে দুইবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা রফিকুল আনোয়ার চৌধুরী। এমনকি ২০০১ সালে দেশজুড়ে আওয়ামী লীগের ভরাডুবির মধ্যেও তিনি জিতেছিলেন। তবে ওয়ান-ইলেভেন পরবর্তী জরুরি অবস্থার সময় দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় ২০০৮ সালে আর নির্বাচন করতে পারেননি রফিকুল। তার বদলে মনোনয়ন পান পেয়ারুল।
নির্বাচনে পরাজয়ের পর পেয়ারুলের অনুসারীরা রফিকুল ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ তুলেছিলেন। প্রয়াত রফিকুল আনোয়ার চৌধুরীর মেয়ে খাদিজাতুল আনোয়ার সনি বর্তমান সংসদে সংরক্ষিত আসনে আওয়ামী লীগ দলীয় সাংসদ।
এদিকে সংবাদ সম্মেলনে এটিএম পেয়ারুল ইসলাম সংসদ নির্বাচনে পরাজয়ের পরও আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় থাকার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘সততার সঙ্গে রাজনীতিকে ইবাদত হিসেবে মেনে এসেছি। আর আওয়ামী লীগের রাজনীতি করাকে পুণ্যের কাজ মনে করি আমি। জীবনে জাতির পিতার আদর্শ থেকে কোনো হুমকি, লোভলালসা আমাকে বিচ্যুত করতে পারেনি।’
‘নাজিরহাট কলেজ ছাত্রসংদের ভিপি থাকার সময় সামরিক শাসক জিয়া ছাত্রদলে যোগ দেয়ার অফার দিয়েছিল। ছাত্রদল করার প্রস্তাব নিয়ে তৎকালীন এসডিও দাউদুজ্জামানকে আমাদের বাড়িতে পাঠায়। এরশাদ তার দলের ছাত্রসংগঠন করার অফার দেয়। এসব প্রস্তাব ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করায় সামরিক স্বৈরশাসকদের রোষানলে পড়ে আমাকে কারানির্যাতন ভোগ করতে হয়।’
জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে বিজয় ধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিজয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে রোডম্যাপ তৈরি করে সরকার থেকে পাওয়া বরাদ্দ দিয়ে সিটি করপোরেশন ও সকল উপজেলায় সমানভাবে উন্নয়ন করা হবে। জেলা পরিষদের সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে আয়বর্ধক প্রকল্প নেব। কৃষিনির্ভর শিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠায় উৎসাহিত করা হবে। মাদক ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি থাকবে। তরুণ ছেলেমেয়েদের ক্রীড়ামুখী করতে ইনডোর ও আউটডোর গেম চালুসহ খেলার মাঠ সংস্কার ও আধুনিকায়ন করা হবে।’
প্রশাসক ও চেয়ারম্যান হিসেবে এক দশকেরও বেশি দায়িত্ব পালন করা চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ সালাম উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষার প্রত্যাশা করেন নবনির্বাচিত চেয়ারম্যানের কাছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও ছিলেন- নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, উত্তরের সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান, ফটিকছড়ির সাবেক সংসদ সদস্য মজাহারুল হক শাহ চৌধুরী, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, রাউজান পৌরসভার সাবেক মেয়র দেবাশীষ পালিত।
সারাবাংলা/আরডি/একে