Monday 30 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

৪ মাসের মৃত্যু সংখ্যা ছাড়িয়ে গেল নভেম্বরের ১৩ দিনে

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১৩ নভেম্বর ২০২২ ২০:৪৮ | আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০২২ ২১:৪৪
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ঢাকা: দেশে চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে প্রথম মৃত্যুবরণ ঘটে জুন মাসে। এরপরে থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৫৬ জন। তবে নভেম্বরের প্রথম ১৩ দিনেই এই পরিসংখ্যান ছাড়িয়ে গেছে। এই ১৩ দিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৬১ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন তিন জন। এ নিয়ে দেশে এখন পর্যন্ত এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২০২ জন। এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সর্বোচ্চ ৮৬ জন মারা গেছেন অক্টোবর মাসে।

রোববার (১৩ নভেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের নিয়মিত ডেঙ্গু বিষয়ক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

প্রতিষ্ঠানটির হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের ইনচার্জ ডা. মো. জাহিদুল ইসলামের সই করা ডেঙ্গু বিষয়ক প্রতিবেদনে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা মহানগরীর ৫৩টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ৪২৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন। ঢাকা মহানগরীর বাইরে ৪৩৩ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

প্রতিবেদনে জানানো হয়, দেশে বর্তমানে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সর্বমোট তিন হাজার ১৮৯ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। এর মাঝে ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন হাসপাতালে এক হাজার ৮৮৫ জন ও ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে এক হাজার ৩০৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন।

প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সর্বমোট ৪৮ হাজার ৫২৯ জন বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মাঝে ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ৩১ হাজার ৭৩৮ জন। এর মাঝে হাসপাতালে থেকে ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন ২৯ হাজার ৭৩৪ জন। ঢাকা মহনগরীর বাইরে বিভিন্ন হাসপাতালে ১৬ হাজার ৭৯১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মাঝে ১৫ হাজার ৪০৪ জন সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।

চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে শুধুমাত্র ঢাকা মহানগরীতে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ১১৯ জন— উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।

প্রতিবেদনে জানানো হয়, নভেম্বরের প্রথম ১৩ দিনে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১০ হাজার ৫০৫ জন। চলতি বছরের সবচেয়ে বেশি ২১ হাজার ৯৩২ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন অক্টোবর মাসে। এ ছাড়া জানুয়ারি মাসে ১২৬ জন, ফেব্রুয়ারি মাসে ২০ জন, মার্চে ২০ জন, এপ্রিলে ২৩ জন, মে মাসে ১৬৩ জন, জুন মাসে ৭৩৭ জন, জুলাই মাসে এক হাজার ৫৭১ জন, আগস্ট মাসে তিন হাজার ৫২১ জন, সেপ্টেম্বর মাসে ৯ হাজার ৯১১ জন রোগী হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।

হাসপাতালে দেরিতে যাওয়ায় মৃত্যু বেশি: এদিকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, দেশে এখন আবার ডেঙ্গু দেখা দিয়েছে। যারা কাজকর্ম করে, তারা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। মহিলারা আক্রান্ত হচ্ছে। ২০-৩০ বছরের মধ্যে আক্রান্ত হচ্ছে। তিনদিনের মধ্যেই মারা যাচ্ছে। হাসপাতালে দেরিতে যাওয়ায় মৃত্যু বেশি বেশি হচ্ছে।

রোববার (১৩ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত ডেঙ্গুর নতুন গাইডলাইন প্রকাশ অনুষ্ঠানে ভার্চুয়াল যুক্ত হয়ে এ কথা বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

জাহিদ মালেক বলেন, ‘দেশে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নানা সমালোচনা হলেও চিকিৎসা নিয়ে কোনো সমালোচনা হয়নি। নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সমালোচনা থাকলেও চিকিৎসা নিয়ে কেউ সমালোচনা করেনি। কিন্তু নিয়ন্ত্রণ আমাদের হাতে নয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ডেঙ্গু চিকিৎসা করে, আর নিয়ন্ত্রণের কাজটি করেন অন্যান্য মন্ত্রণালয়।’

তিনি বলেন, ‘প্রথমে ২০১৯ সালে ডেঙ্গু পেয়েছিলাম। সবাই মিলেই সুন্দরভাবে মোকাবিলা করেছি। তখনও অনেক সমালোচনা হয়েছে। তখনও নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সমালোচনা থাকলে চিকিৎসা নিয়ে কোন সমালোচনা ছিল না। এরপর কোভিড এলো, তখন একটি ট্রিটমেন্ট প্রটোকল করে আমরা চিকিৎসা দিয়েছি। সারাদেশেই এটিকে ছড়িয়ে দিয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘কোভিডে ট্রিটমেন্ট প্রটোকল ভালো ভূমিকা রেখেছে। আমাদের সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন ছিল না, অক্সিজেন প্ল্যান্ট ছিল না, একটি মাত্র ল্যাব ছিল। বিনামূল্যে আমরা রেমডিসিভির দিয়েছি। অর্থাৎ যখন যেই ব্যবস্থা বিশ্বে প্রয়োগ হয়েছে, আমরা সেটিও করেছি এবং সর্বোপরি সফল হয়েছি।’

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের ২৯ হাজার মানুষ মারা গেছে, ভারতে মারা গেছে ৫ লাখ, আমেরিকায় ১২ লাখ। ইউরোপে প্রতি দশ লাখে প্রায় তিন হাজার লোক মারা গেছে। প্রধানমন্ত্রী গাইডলাইন দিয়েছেন বলেই আমরা সফল হয়েছি, ভ্যাকসিনেও আমরা সফল হয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘৪০ হাজার কোটি টাকার ভ্যাকসিন আমরা বিনামূল্যে দিয়েছি। পৃথিবীর কম দেশই এত টাকা খরচ করেছে। ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতাল করেছি, সফলতার সঙ্গে। কেউ পিছপা হইনি। কিন্তু শুরুতে আমরা জানতাম না। তবুও আমরা চিকিৎসা দিয়ে করোনা মোকাবিলা করেছি।’

তিনি বলেন, ‘সময়ের প্রয়োজনে ডেঙ্গু চিকিৎসায় আগের গাইড লাইনটি নতুন করে সাজানো হয়েছে। নতুন গাইড লাইনে আশা করি ডেঙ্গু কমে আসবে। শীতও চলে আসছে। সব ডাক্তার নার্স, টেকনিশিয়ানরা কাজ করছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে করোনার ধাক্কা, যুদ্ধ, সবমিলিয়ে আমরা বড় একটি ধাক্কা খেয়েছি। এখন আবারও ডেঙ্গু সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। শুধু যে আমাদের দেশেই ডেঙ্গু হচ্ছে তা নয়, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইনসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেই দেখা দিয়েছে। আমাদের থেকে তাদের বেশি আক্রান্ত ও মৃত্যু হচ্ছে।’

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘চিকিৎসার মান বৃদ্ধি করার জন্য সারাদেশে ঘুরে বেড়াচ্ছি। আসরা চাই ডাক্তারদের উপস্থিতি এবং যন্ত্রপাতিগুলো যেন সচল থাকে। অনেক সময় আল্ট্রা-ইকো মেশিনগুলো নষ্ট থাকে, যে কারণে রোগীরা বাইরে চলে যায়। যাদের মেশিন নেই, চাহিদা দেবেন আমরা দিয়ে দেব। হাসপাতালগুলো পরিষ্কার রাখবেন। রিপোর্টিংটা সবসময় চালু রাখবেন।’

সারাবাংলা/এসবি/একে

ডেঙ্গু

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর