চট্টগ্রামে পাসের হার কমেছে, ইংরেজিতে ফেল ৮%
২৮ নভেম্বর ২০২২ ১৫:৪৮
চট্টগ্রাম ব্যুরো: কোভিড মহামারিকালে গত বছর বিষয় কমিয়ে অনুষ্ঠিত এসএসসি পরীক্ষায় রেকর্ড পাসের পর চট্টগ্রামে এবার এই হার কমে গেছে। চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা বলেছেন, মূলত ইংরজি দ্বিতীয় পত্রে খারাপ ফল সার্বিক ফলাফলে প্রভাব পড়েছে।
রোববার (২৮ নভেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ণ চন্দ্র নাথ সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ বছর অনুষ্ঠিত এসএসসি পরীক্ষার ফল ঘোষণা করেন।
চট্টগ্রাম জেলা ও মহানগর, তিন পার্বত্য জেলা এবং কক্সবাজার মিলিয়ে এবার পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন এক লাখ ৪৮ হাজার ৫৩৯ জন। বহিষ্কার করা হয় পাঁচজনকে। বাকি পরীক্ষার্থীদের মধ্যে পাশ করেছে এক লাখ ৩০ হাজার ১৩ জন। ফেল করেছে ১৮ হাজার ৫২১ জন। পাসের হার ৮৭ দশমিক ৫৩ শতাংশ। ফেলের হার ১২ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
প্রকাশিত ফলাফলে দেখা গেছে, ফেল করা ১৮ হাজার ৫২১ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১৪ হাজার ১৯৪ জনই এক বিষয়ে ফেল করেছেন। ফেল করা পরীক্ষার্থীদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি ইংরেজি দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষায় ঝরে গেছে বলে জানিয়েছেন নারায়ণ চন্দ্র নাথ।
তিনি বলেন, ‘সাত দশমিক ৬৭ শতাংশ পরীক্ষার্থী ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রে ফেল করেছে। এজন্য গত বছরের চেয়ে আমাদের পাসের হার কিছুটা কমেছে। ইংরেজি দ্বিতীয় পত্র ছাড়া অন্যান্য বিষয়ে ফেলের হার এক শতাংশেরও কম। এ বিষয়ে খারাপ ফলের ক্ষেত্রে আমাদের মূল্যায়ন হচ্ছে, স্কুলে পর্যাপ্ত সংখ্যক বিষয়টির শিক্ষক নেই। অন্যান্য বিভাগের শিক্ষকরা গিয়ে ইংরেজি বিষয়ে পাঠদান করেন। স্কুলে ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক নিয়োগ করে মানসম্মত পাঠদানের বিকল্প নেই।’
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে এবার পাসের হার ২০২১ সালের চেয়ে প্রায় ৪ শতাংশ কমেছে। গতবার এসএসসির পাসের হার পাঁচ বছরে সর্বোচ্চ ছিল, ৯১ দশমিক ১২ শতাংশ। ২০১৬ সালে ৯০ দশমিক ৪৫ শতাংশ, ২০১৭ সালে ৮৩ দশমিক ৯৯ শতাংশ, ২০১৮ সালে ৭৫ দশমিক ৫০ শতাংশ, ২০১৯ সালে ৭৮ দশমিক ১১ শতাংশ এবং ২০২০ সালে পাসের হার ৮৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ পাসের হার ছিল।
পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ণ চন্দ্র নাথ বলেন, ‘২০২১ সালে পরীক্ষা হয়েছিল শুধুমাত্র তিনটি বিষয়ে। জেএসসির বিষয়ভিত্তিক ফলাফলের মাধ্যমে নম্বর ও পাস-ফেল নির্ধারণ করা হয়েছিল। এজন্য যারা জেএসসিতে পাস করেছিল, পরীক্ষা ছাড়াই তারা এসএসসিতেও পাস করে। এজন্য পাসের হারে রেকর্ড ছিল। এবার সিলেবাস সংক্ষিপ্ত হলেও সব বিষয়ে পরীক্ষা হয়েছে। পাসের হার কিছুটা কমে যাবার ক্ষেত্রে এটার প্রভাবও আছে।’
প্রকাশিত ফলাফলে দেখা গেছে, এবার ছাত্র ও ছাত্রীদের পাসের হার প্রায় সমান। মোট পরীক্ষার্থীর মধ্যে এবার ছাত্রী ৮০ হাজার ৫২৬ জন এবং ছাত্র ৬৮ হাজার ১৩ জন ছিল। ছাত্রী পাসের হার ৮৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ এবং ছাত্র ৮৭ দশমিক ৩৩ শতাংশ। অর্থাৎ প্রায় ১৩ শতাংশ করে ছাত্রী ও ছাত্র এসএসসির গণ্ডি পার হতে পারেনি।
পাসের দিক থেকে এবার এগিয়ে বিজ্ঞান বিভাগের পরীক্ষার্থীরা। বিজ্ঞানে ৯৬ দশমিক ৮১ শতাংশ, ব্যবসায় শিক্ষা ৯১ দশমিক ৩০ শতাংশ এবং মানবিকে পাসের হার ৭৮ দশমিক ৮২ শতাংশ। গতবছরের তুলনায় মানবিকে পাসের হার এবার কমেছে ১৯ শতাংশ। বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষায় পাসের হার গতবছরের মতোই। বিজ্ঞানে গতবছর ছিল ৯৬ দশমিক ৮২ শতাংশ এবং ব্যবসায় শিক্ষায় ৯১ দশমিক ৩০ শতাংশ।
জিপিএ-৫ অর্জনে গত সাত বছরে এবার রেকর্ড গড়েছে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছেন মোট ১৮ হাজার ৬৬৪ জন, যার মধ্যে ছাত্রীরাই আছে এগিয়ে। ১০ হাজার ৮৮৯ জন ছাত্রী জিপিএ ফাইভ পেয়েছে। বিপরীতে ছাত্র ৭ হাজার ৭৭৫ জন। বিজ্ঞানে ৭ হাজার ৭৯০ জন, মানবিকে ৪১৩ জন এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে ২ হাজার ৬৮৬ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে।
২০২১ সালে জিপিএ-৫ পেয়েছিল মোট ১২ হাজার ৭৯১ জন। এছাড়া ২০১৬ সালে ৮ হাজার ৫০২ জন, ২০১৭ সালে ৮ হাজার ৩৪৪ জন, ২০১৮ সালে ৮ হাজার ৯৪ জন, ২০১৯ সালে ৭ হাজার ৩৯৩ জন এবং ২০২০ সালে ৯ হাজার ৮ জন পরীক্ষার্থী জিপিএ ফাইভ পেয়েছিল।
বাংলাদেশ মহিলা সমিতি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জিপিএ-৫ পাওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে আছে। ওই স্কুলের ৫০১ জন, কলেজিয়েট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৪৮৩ জন, ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৪৬৬ জন, সরকারি মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়ের ৪৪০ জন, নাসিরাবাদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৪২১ জন, চট্টগ্রাম সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ২৫৫ জন, বাকলিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ২৫১ জন, চট্টগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ২৪৪ জন, ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুলের ২০২ জন, সিটি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ১৭৭ জন এবং ইস্পাহানি উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০৯ জন জিপিএ-৫ পেয়েছেন।
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের অধীন পাঁচ জেলা ও মহানগরে এবার পাসের হার গত বছরের চেয়ে কমেছে। চট্টগ্রাম মহানগরের স্কুলগুলোতে পাসের হার ৯৪ দশমিক ২১ শতাংশ। গতবার ছিল ৯৫ দশমিক ২৭ শতাংশ। মহানগর বাদে চট্টগ্রাম জেলায় এবার পাসের হার ৮৭ দশমিক ৬৪ শতাংশ। গতবার ছিল ৯১ দশমিক শূন্য এক শতাংশ। জেলা ও মহানগর মিলিয়ে এবার পাসের হার ৮৯ দশমিক ১১ শতাংশ। গতবার ছিল ৯২ দশমিক ১৯ শতাংশ।
কক্সবাজার জেলায় এবার পাসের হার ৮৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ, গতবার ছিল ৯০ দশমিক ৯৪ শতাংশ। রাঙ্গামাটি জেলায় এবার পাসের হার ৮১ দশমিক ৬০ শতাংশ, গতবার ছিল ৮৬ দশমিক ৮৩ শতাংশ। খাগড়াছড়ি জেলায় এবার পাসের হার ৭৫ দশমিক ৮৭ শতাংশ, গতবার ছিল ৮৪ দশমিক ১৯ শতাংশ। বান্দরবান জেলায় এবার পাসের হার ৭৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ, গতবার ছিল ৭৩ দশমিক ২৮ শতাংশ।
চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের অধীনে এবার ২১৩টি কেন্দ্রে ১ হাজার ৯২টি বিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থীরা এবার এসএসসিতে অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে শতভাগ পাস করেছে এমন বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৭১টি। গতবারের চেয়ে বেড়েছে ১৭টি। পাসের হার শূন্য এমন কোনো বিদ্যালয় নেই।
স্কুলভিত্তিক ফলাফল এবার মূল্যায়ন করেনি চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড। এজন্য পাসের ক্ষেত্রে শীর্ষ দশ স্কুলের নাম ঘোষণা হয়নি। এবার পাসের হারের বদলের পরীক্ষার্থীর সংখ্যার ভিত্তিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে মূল্যায়ন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ণ চন্দ্র নাথ।
সারাবাংলা/আরডি/ইআ