মেট্রোরেলে যাত্রী পরিবহন এ মাসেই, চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি
৪ ডিসেম্বর ২০২২ ১৪:৫০
ঢাকা: সবকিছু ঠিক থাকলে বিজয়ের মাস ডিসেম্বরেই যাত্রী নিয়ে বাণিজ্যিক যাত্রা শুরু করবে স্বপ্নের মেট্রোরেল। আর এর মধ্য দিয়ে দেশের গণপরিবহনে প্রথমবারের মতো যুক্ত হতে যাচ্ছে বৈদ্যুতিক ট্রেন। এ লক্ষ্যে দিনরাত চলছে শেষ মুহূর্তের কাজ। যে দু’টি স্টেশন ও ট্রেনের সিস্টেম ইন্টিগ্রেশনের কাজ চলমান, তাও দ্রুত করার চেষ্টা চলছে শেষ মুহূর্তে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যে কাজ বাকি রয়েছে তা উদ্বোধনের আগেই শেষ করা হবে। ফলে উদ্বোধনের পর থেকেই যাত্রীরা মেট্রোরেলে যাতায়াত করতে পারবেন।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) সূত্র অনুযায়ী, ২০.১০ কিলোমিটার মেট্রোরেলের উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশের ১১.৭৩ কিলোমিটার চালু হবে প্রথম ধাপে। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত প্রথম নয়টি স্টেশনের এই যাত্রায় এরইমধ্যে প্রতিটি স্টেশনের কাজ প্রায় শেষ। তবে শ্যাওড়াপাড়া স্টেশনে কিছু সমস্যার কারণে সেখানকার কাজ এখনও খানিকটা পিছিয়ে রয়েছে। কাজিপাড়া স্টেশনের কাজের জটিলতা কেটে গেছে। বাকিগুলোর কাজ প্রায় শেষ। এখন চলছে ভেতরের কাজ।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রথম তিনটি স্টেশনের সাইনেস বাদে সব কাজ শেষ। বসেছে টিকিট বুথও। এদিকে যে দশটি ট্রেন দিয়ে যাত্রা শুরু করা হচ্ছে সে পথের সমন্বিত ট্রায়াল রানও শেষ।
ডিএমটিসিএলে’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন ছিদ্দিক বলেন, ‘ডিসেম্বরের শেষ দিকে মেট্রোরেল উদ্বোধনের লক্ষ্য নিয়ে কাজ চলছে। উদ্বোধনের পর দিন থেকেই মেট্রো ট্রেন যাত্রী পরিবহন করবে। তবে প্রথম দিকে প্রতিটি ট্রেনের সক্ষমতার চেয়ে কম সংখ্যক যাত্রী নিয়ে ট্রেন চলবে, পরে ধীরে ধীরে তা বাড়ানো হবে।’
তিনি আরও জানান, ‘শ্যাওড়াপাড়া ও কাজিপাড়া স্টেশনে যে জটিলতা দেখা দিয়েছিলো তা মিটে গেছে। উদ্বোধনের আগেই বাকি কাজও শেষ করা যাবে।’
সূত্রমতে, মেট্রোরেল ব্যবস্থাপনার জন্য থাকবে আলাদা নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ডিসেম্বরের মধ্যেই মেট্রো পুলিশ এবং এক বছরের জন্য পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য এক হাজার কোটি টাকা চেয়েছে কর্তৃপক্ষ। মেট্রোরেল চালুর আগেই সাড়ে তিনশো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য চাওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক জানান, পুলিশ ফোর্সের প্রস্তাবটা কেবিনেট কমিটি অন অ্যাডমিনিস্ট্রিটিভ অ্যাফেয়ার্স সেখানে দাখিল করা আছে। এখন সিদ্ধান্তের অপেক্ষা। প্রথম মেট্রো চালাতে হলে একটা সিড মানির প্রয়োজন হয়। যেহেতু আমরা এখন আয় করছি না। পরিচালন, রক্ষণাবেক্ষণ ও অপচয় এই তিন ব্যয়ের জন্য ১০০০ কোটি টাকা দরকার হবে। সেটার জন্য অর্থ বিভাগে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
এদিকে মেট্রোরেলের প্রতি কিলোমিটারের ভাড়া ৫ টাকা এবং সর্বনিম্ন ভাড়া ২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সে অনুযায়ী উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত মেট্রোর ভাড়া হবে ১০০ টাকা। তবে যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধারা ট্রেনে যাতায়াত করতে পারবেন একদম বিনা ভাড়ায়।
উল্লেখ্য, দেশের সড়ক পরিবহন ব্যবস্থাকে উন্নত করতে কিছুদিন আগে উদ্বোধন করা হয়েছে পদ্মাসেতু। এবার রাজধানী ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরও সহজ ও যানজটমুক্ত করতে চালু হতে যাচ্ছে মেট্রোরেল। বর্তমান সরকার ২০১২ সালে ঢাকায় মেট্রোরেল নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়। প্রথমে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত করার কথা থাকলেও পরে তা সংশোধন করে কমলাপুর পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়। যা পরের ধাপে বাস্তবায়ন করার কথা রয়েছে। সরকারের অগ্রাধিকারমূলক প্রকল্পের একটি ছিল মেট্রোরেল।
সারাবাংলা/জেআর/এমও