Wednesday 20 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হচ্ছে আমন ধান, কৃষকের মুখে হাসি

এমদাদুল হক তুহিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১৩ ডিসেম্বর ২০২২ ২২:০১

ফাইল ছবি: কৃষক

ঢাকা: দেশে এবার আমন ধানের ভালো ফলন হয়েছে। মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টি না হওয়ায় উৎপাদন শঙ্কা দেখা দিয়েছিল। তবে মাঠের তথ্য বলছে, অন্যবারের চেয়ে এখন পর্যন্ত ফলন বেশি। সারাদেশে এখন পর্যন্ত ৮০ শতাংশের বেশি আমন ধান কাটা হয়েছে। হেক্টর প্রতি গড় ফলন প্রায় তিন টন। প্রকারভেদে ধান বিক্রি হচ্ছে ১৩০০ থেকে ১৪০০ টাকা মণে। এটা এখন পর্যন্ত আমন ধানের সর্বোচ্চ দাম। আর ভালো দাম পেয়ে খুশি কৃষকও। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

বিজ্ঞাপন

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. বেনজীর আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমন ধানের ফলন এবার ভালো হয়েছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে উৎপাদন ভালো হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। ধানের দামও বেশি। আন্তর্জাতিক বাজারে গমের দাম এবং পাশাপাশি ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় এমনটি হয়েছে। প্রতিবেশি দেশ ভারতেও ধানের দাম বেশি রয়েছে বলে জানা গেছে।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সরেজমিন উইংয়ের তথ্যমতে, সারাদেশে এবার আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৯ লাখ ৬ হাজার হেক্টর। আবাদ হয়েছে ৫৯ লাখ ২৩ হাজার হেক্টর জমিতে। এখন পর্যন্ত ধান কাটা হয়েছে ৪৭ লাখ ৬৬ হাজার হেক্টর জমির। ধান কাটার হার ৮০ শতাংশের বেশি। হেক্টর প্রতি গড় ফলন হয়েছে ২ দশমিক ৯৮ টন। এসব জমিতে আমন উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ৪২ হাজার টন।

ধানের দাম বেশি হওয়ায় সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন নরসিংদী জেলার মনোহরদী উপজেলার চন্দনপুর গ্রামের কৃষক মো. শহীদুল্লাহ। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘বৃষ্টি না হওয়ায় এবার মেশিন দিয়ে পানি সেচে আমন ধানের আবাদ করতে হয়েছে। তাই খরচও হয়েছে বেশি। তবে ফলন খারাপ হয়নি, ভালোই হয়েছে। ধানের দাম ৪৮ কেজি মণে ১৬০০ থেকে ১৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্য বছর ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকা মণে বিক্রি হয়।’

ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার কৃষক মোস্তফা সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের এলাকায় আমন ধান মাড়াই প্রায় শেষ পর্যায়ে। ধানের ফলন ভালোই হয়েছে। বিক্রি হচ্ছে ১৩৫০ থেকে ১৪০০ টাকা মণ দরে। শুরুর দিকে ছিল ১৪২০ টাকা। অন্যান্য বছর ধানের দাম থাকে সর্বোচ্চ ১২০০ টাকা। এত বেশি দামে আগে কখনও আমন ধান বিক্রি হয়নি।’

কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার হরশি গ্রামের কৃষক হিমল কবির সারাবাংলাকে বলেন, ‘বৃষ্টি-বাদল না হওয়ায় আমরা কোনো ধরনের ঝামেলা ছাড়াই ধান তুলতে পেরেছি। ধানের ফলনও ভালো হয়েছে। ১৩৫০ থেকে ১৪০০ টাকা মণ দরে ধান বিক্রি হচ্ছে। ভালো দাম পেয়ে আমরা সন্তুষ্ট। তবে আবাদে এবার খরচও বেশি হয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রাজশাহী অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক শামছুল আলম বলেন, ‘এবার প্রতি বিঘায় ২৫ থেকে ২৮ মণ করে আমন ফলন পেয়েছেন কৃষকরা। নতুন আমন ধান বিক্রি করে তাদের কিছু লাভ হচ্ছে।’

বরেন্দ্র অঞ্চলেরর কৃষকরা বলছেন, এ বছর আমন আবাদের শুরুতেই কৃষকরা ধাক্কা খেয়েছে। পানি ও সারের ঘাটতি ছিল; যেটার সুযোগ নিয়েছিল অসাধু সিন্ডিকেট। এতে প্রান্তিক পর্যায়ে অনেক কৃষক সরকার নির্ধারিত দামে সার পাননি। বেশি দামে সার কিনতে হয়েছে তাদের। এতে উৎপাদন খরচ বেড়েছে। তবে কৃষক যেটুকু জমিতে আবাদ করেছে সেটার পূর্ণ যত্ন নিয়েছে। রাসায়নিক সারের বদলে ছাই ও গোবর সার ব্যবহার করেছে। একারণে শেষ অবধি ফলনহানি হয়নি।

পবা উপজেলার কৃষক আশরাফ আলী জানান, এবার সার ও ডিজেলের দাম বেশি ছিল। সেইসঙ্গে জমিতে সেচ ও কীটনাশকসহ অন্যান্য সব কৃষি উপকরণের দাম বেড়েছে। তাই এবার আমন ধানও বিক্রি হচ্ছে ভালো দামে। চিকন ধান ১৫০০ টাকা মণে বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি মানের চিকন ধান ১১০০ থেকে ১২০০ টাকায় আর মোটা ধান ৯৫০ থেকে ১০৫০ টাকায়।

সারাবাংলার রাজশাহী প্রতিনিধি মাহী ইলাহি জানান, বরেন্দ্র অঞ্চলে ফলন ও দামে খুশি আমন চাষিরা। বাজারে চালের দাম বেশি হওয়ায় এবারের আমন ধানের দামও বেশি পাওয়া যাচ্ছে।

যশোর সদর উপজেলার কৃষক আযূব হোসেন এবং শিমুল হোসেনের মতে ধানের দাম ভালো পাওয়া যাচ্ছে। তবে সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ায় খরচ বেশি ছিল। তাছাড়া ডিজেল, সার, কীটনাশকসহ কৃষি উপকরণের দাম এবং কৃষি শ্রমিকের দাম বেশি থাকায় অনেক বেশি খরচ হয়েছে। ওই এলাকায় চিকন ধান মণ প্রতি ১৪০০-১৫০০ টাকা, মাঝারি ১৩০০-১৩৫০ টাকা এবং মোটা তথা স্বর্ণা ১২০০ টাকা মণে বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।

আমাদের যশোর প্রতিনিধি তহীদ মনি জানান, ওই অঞ্চলে ১৩০০ থেকে ১৫০০ টাকা মণে ধান বিক্রি হচ্ছে। অঞ্চলটিতে আমনের ফলনও ভালো হয়েছে।

ময়মনসিংহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক মো. মতিউজ্জামান সারাবাংলাকে জানান, ধান ও চাল মোটা, চিকন, শুকনো-ভেজা স্থান ভেদে দামের তারতম্য হয়। তার পরও ধানের দাম গড়ে ১০৫০ থেকে ১১৫০ টাকা মণ বিক্রি করছে কৃষক।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ইকবাল বাহার চৌধুরী জানান, এখনো ময়মনসিংহে ধান সংগ্রহের কাজ শুরু হয়নি। আগামী সপ্তাহে এ কার্যক্রম শুরু হবে। তবে ফলন ভালো হওয়ায় কৃষক এখনো মিলারদের কাছে যাচ্ছে না। মিলারদের সাথে ধান ও চাউল সংগ্রহের চুক্তি সম্পন্ন হলে এটি শুরু হবে।

সারাবাংলার ময়মনসিংহ প্রতিনিধি কাজী মোহাম্মদ মোস্তফা জানান, এবার আমন ধান চাষে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। কৃষক ভালো দাম পাওয়া এখনো ধান-চাউল সংগ্রহ প্রক্রিয়া ধীর গতি রয়েছে। আগামী সপ্তাহে শুরু হতে পারে ধান চালের সংগ্রহ কার্যক্রম।

সারাবাংলা/ইএইচটি/পিটিএম

আমন ধান বাম্পার ফলন

বিজ্ঞাপন

নারী স্বাধীনতার আসল লক্ষ্য কী?
২০ নভেম্বর ২০২৪ ১৫:৫৬

আরো

সম্পর্কিত খবর