জাপার চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না জি এম কাদের
১৪ ডিসেম্বর ২০২২ ১৫:০৪
ঢাকা: জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে জি এম কাদেরের দায়িত্ব পালনে নিম্ন আদালতের নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে করা আবেদন নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে নিম্ন আদালতে চলমান এ সংক্রান্ত আবেদন আগামী ৯ জানুয়ারির মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ফলে নিম্ন আদালতে এ সংক্রান্ত মামলাটি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে জি এম কাদের দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
বুধবার (১৪ ডিসেম্বর) প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এ আদেশ দিয়েছেন।
আদালতে জি এম কাদেরের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শেখ মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম। আর জিয়াউল হক মৃধার পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা।
আপিল বিভাগের আদেশের পর এ বিষয়ে জিয়াউল হক মৃধার আইনজীবী মোহাম্মদ সাঈদ আহমেদ রাজা জানান, হাইকোর্টের আদেশ বাতিল করেছেন আপিল বিভাগ। ফলে জি এম কাদের এখন দলের চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করতে পারবেন না। একইসঙ্গে নিম্ন আদালতের দেওয়া নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে জি এম কাদেরের করা আপিল দ্রুত শুনানি করতে বলেছেন আদালত। আগামী ৯ জানুয়ারি জেলা জজ আদালতে এ-সংক্রান্ত বিষয়ে শুনানির দিন ধার্য রয়েছে।
এ বিষয়ে জি এম কাদেরের আইনজীবী শেখ মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘জিয়াউল হক মৃধার করা আবেদন নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে জেলা জজ আদালতে জি এম কাদেরের করা আপিলটি ৯ জানুয়ারি শুনানি করতে বলেছেন আপিল বিভাগ। ফলে জি এম কাদের জাপার চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন কি না, তা জানতে ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।’
এর আগে গত ১২ ডিসেম্বর এ বিষয়ে আদেশের জন্য মঙ্গলবার (১৩ ডিসেম্বর) দিন ধার্য করেন। তবে গতকাল এ বিষয়ে আদেশ না দিয়ে আজ আদেশের দিন ধার্য করেন আপিল বিভাগ। এ দিন নিম্ন আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের করা রিভিশন আবেদনের শুনানি শেষে বিচারপতি শেখ আবদুল আউয়ালের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন।
এই আদেশে আগামী ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত নিম্ন আদালতের নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করেন হাইকোর্ট।
এরপর হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে জিয়াউল হক মৃধা আপিল বিভাগে আবেদন করেন, যা গত ৩০ নভেম্বর চেম্বার জজ আদালতে শুনানির জন্য ওঠে। সেদিন চেম্বার আদালত হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেন। একই সঙ্গে আবেদনটি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন।
গত ৪ অক্টোবর জাতীয় পার্টির বহিষ্কৃত নেতা এবং দলটির সাবেক এমপি জিয়াউল হক মৃধা জাপা চেয়ারম্যান হিসেবে গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের দায়িত্ব পালনে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে মামলা করেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ২০১৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। এরপর বিবাদী জি এম কাদের হাইকোর্ট বিভাগের একটি রিট মামলা বিচারাধীন থাকার পরও জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে ওই বছর ২৮ ডিসেম্বর কাউন্সিল করে নিজেকে চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা করেন।
গত ৫ মার্চ গাজীপুর মহানগর কমিটির উপদেষ্টা আতাউর রহমান সরকার, সাংগঠনিক সম্পাদক সবুর শিকদার, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক রফিকুল ইসলাম ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ডা. মো. আজিজকে বহিষ্কার করেন। ১৪ সেপ্টেম্বর বাদী মশিউর রহমান রাঙ্গাকে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য পদ থেকে বহিষ্কার করেন। অন্যদিকে ১৭ সেপ্টেম্বর জিয়াউল হক মৃধাকেও জাতীয় পার্টি থেকে বহিষ্কার করেন, যা অবৈধ।
এরপর ৩১ অক্টোবর ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ মাসুদুল হকের আদালত জি এম কাদেরের দলীয় কার্যক্রমের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেন।
পরবর্তীতে শেখ সিরাজুল ইসলাম, কলিম উল্যাহ মজুমদারসহ বেশ কয়েকজন আইনজীবী জি এম কাদেরের পক্ষে জেলা জজ আদালতে আবেদন করেন। আবেদনে জি এম কাদেরের ওপর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দলের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনে নিষেধাজ্ঞার আদেশ প্রত্যাহার চাওয়া হয়।
গত ২৪ নভেম্বর এ আবেদনের ওপর শুনানির জন্য জেলা জজ আদালতে মিস আপিল দায়ের করা হয়। সেই আবেদন নামঞ্জুর করেন জেলা জজ আদালত। পরে ওই আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিভিশন আবেদন করলে জি এম কাদেরের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ স্থগিত করেন হাইকোর্ট। এরপর হাইকোর্টের ওই আদেশ স্থগিত চেয়ে জিয়াউল হক মৃধা আপিল বিভাগে আবেদন করেন।
সারাবাংলা/কেআইএফ/ইআ