ড্রেন-খালে পয়ঃবর্জ্যের সংযোগ বন্ধে ডিএনসিসির ‘কলাগাছ থেরাপি’
৪ জানুয়ারি ২০২৩ ১৮:২৮
ঢাকা: পয়ঃবর্জ্যের সংযোগ সারফেস ড্রেনে, খালে বা লেকে দেওয়া বন্ধ করতে আজ থেকে অভিযান শুরু করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। অভিযানের অংশ হিসেবে গুলশান-২ এর একটি বাসার সামনের ড্রেনে কলাগাছ ঢুকিয়ে কার্যক্রম শুরু করেন ডিএনসিসির মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।
বুধবার (৪ জানুয়ারি) দুপর ১২টার দিকে গুলশান-২ এর ১১২ নম্বর রোডের একটি বাসার ড্রেনে মেয়রের নির্দেশে কলাগাছ ঢুকিয়ে লাইন বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে আরও বেশ কিছু বাসা-বাড়ির ড্রেনের লাইনে একই পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়।
এই ‘কলা গাছ থেরাপি’র বিষয়ে জানিয়ে মেয়র বলেন, ‘গুলশান, বনানী, বাড়িধারা ও নিকেতনের মতো এলাকা জরিপ করেছি। এসব অভিজাত এলাকাতেই এতো সমস্যা, একটি এলার্মিং বিষয়। এতে খাল ও লেকের পানি দূষিত হচ্ছে, যা অত্যন্ত দুঃখের বিষয়। কলাগাছ দিয়ে ড্রেনের সংযোগ বন্ধ করে দিচ্ছি। ফলে ময়লা ব্যাক ফ্লো করবে। এখন বাড়ির মালিকরা সচেতন হতে বাধ্য। শহরকে বাঁচাতে বাধ্য হয়ে এসব সংযোগ বন্ধ করেছি। ওয়াসা পানির দ্বিগুণ সুয়ারেজ বিল নিলেও কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে তারা ব্যর্থ হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘পয়ঃবর্জ্যের সংযোগ সারফেস ড্রেনে, খালে বা লেকে দেওয়া বন্ধ করতে আজ থেকে এই অভিযান শুরু করেছি। আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে। ইতোমধ্যে এই তালিকা তৈরি করেছি। সারফেস ড্রেনে ও খালে পয়ঃবর্জ্যের সংযোগ পেলে বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে না। কোনোভাবেই ব্ল্যাক ওয়াটার সিটি করপোরেশনের ড্রেনে, খালে ও লেকে ঢুকতে পারবে না।’
মেয়র আরও বলেন, ‘কোনোভাবেই পয়ঃবর্জ্যের সংযোগ সারফেস ড্রেনে দেওয়া যাবে না। এ বিষয়ে অনেক আগে থেকেই বার বার সচেতন করে আসছি, গণবিজ্ঞপ্তিও দিয়েছি। সোসাইটির প্রতিনিধিদের নিয়ে সভা করে জানিয়েছি যেন পয়ঃবর্জ্যের লাইন সারফেস ড্রেনে না দেওয়া হয়। বার বার বলার পরেও কেউ কর্ণপাত করছেন না।’
আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘গুলশান, বনানী, বাড়িধারা ও নিকেতন এলাকায় সরেজমিনে সার্ভে করেছি। তাতে প্রায় ৮৫ শতাংশ বাড়িতেই পয়ঃবর্জ্যের লাইন সারফেস ড্রেনে দেওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। এমনকি অনেকে চোরাই পথে সারফেস ড্রেনে পয়ঃবর্জ্যের লাইন দিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘পয়ঃবর্জ্যের কারণে লেকগুলোর পানি দূষিত হয়ে গেছে। লেকে মাছ চাষ করা যাচ্ছে না। মশা নিধনে ন্যাচারাল সলিউশন সম্ভব হচ্ছে না মাছ চাষ করতে না পারার কারণে। গুলশান সোসাইটির নব নির্বাচিত কমিটি আমার কাছে এসেছে, তারা সময় চেয়েছিল তিন মাস। আমি তাদের ৬ মাস সময় দিয়েছি। কেউ ব্যবস্থা নেয়নি। আমরা ড্রেন ও খাল আর দূষিত হতে দেব না।’
এ সময় উত্তরার ৪ নম্বর সেক্টরে নিজ বাড়িতে সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট বসিয়েছেন বলে জানান ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।
অভিযানে অন্যান্যের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন- ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা, প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহ. আমিরুল ইসলাম, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এস এম শরিফ-উল ইসলাম এবং স্থানীয় কাউন্সিলররা।
উল্লেখ্য, গুলশান, বনানী, বাড়িধারা ও নিকেতন এলাকায় ডিএনসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা, বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক ড. মুজিবুর রহমান, ঢাকা ওয়াসার প্রতিনিধি, আইটিএন বুয়েট’র প্রতিনিধি, হাউজিং সোসাইটির প্রতিনিধি এবং ইউনিসেফ’র (UNICEF) প্রতিনিধির সমন্বয়ে গঠিত স্যানিটেশন কমপ্লায়েন্স কমিটি জরিপ কাজটির তত্ত্বাবধান করেন। চারটি এলাকার ৩ হাজার ৮৩০টি বাড়িতে জরিপ করা হয়। এই বাড়িগুলোর মধ্যে ৩ হাজার ২৬৫টি বাড়ির পয়ঃবর্জ্য সরাসরি সারফেস ড্রেন ও লেকে পড়েছে। মাত্র ৪১টি বাড়িতে পয়ঃবর্জ্যের সংযোগ সঠিকভাবে দেওয়া আছে এবং ৫২৪টি বাড়িতে আংশিকভাবে পয়ঃবর্জ্য ব্যবস্থাপনা করা হয়েছে।
সারাবাংলা/এসবি/এনএস