‘অন্যান্য দেশে উৎসব-পার্বনে পণ্যের দাম কমে, আমাদের এখানে উল্টো’
১১ জানুয়ারি ২০২৩ ১৯:০৭
ঢাকা: সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এটা খুব দুর্ভাগ্যের বিষয় যে, কিছু ব্যবসায়ী রমজান কিংবা বিভিন্ন চাহিদার মাসে যে করেই হোক ভোগ্য পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে উৎসব-পার্বনে সবসময় তারা ভোগ্য পণ্যের দাম কমায়। আর আমাদের দেশে দেখি উল্টো।
বুধবার (১১ জানুয়ারি) জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা অনেক সময় পণ্য আমদানি করতে ঢিলেমি করে, জিনিসের দাম ও চাহিদা বাড়িয়ে তারপর ব্যবসা করতে চায়। এটা আসলে অমানবিক। যারা মজুতদারি, কালোবাজারি এবং যারা এলসি খোলা নিয়ে দুই নম্বরি করবে তাদের বিরুদ্ধে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছি এবং নেব। প্রয়োজনে আমরা আরও কঠোর ব্যবস্থা নেব। মানুষের কষ্ট যেন না হয় সেদিকে আমরা বিশেষভাবে দৃষ্টি দেব।’
ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে সরকারপ্রধান বলেন, ‘বিএনপি-জামাতের আমলে বিদ্যুতের উৎপাদন হ্রাস করা হয়। মানুষ বিদ্যুৎ পেত না। দিনের পর দিন বিদ্যুতের জন্য হাহাকার ছিল। ইন্ডাস্ট্রিগুলো চলতে পারত না। গ্যাসের জন্য হাহাকার ছিল। আমরা এসে এসব সমস্যার সমাধান করি। আমরা ২৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছি। এরপর যারা বেশি কথা বলবেন তাদের বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেওয়া হবে।’
অসৎ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মুক্তির জন্য সমবায় মালিকানার ওপর গুরুত্ব দেবেন কিনা? এমন এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আসলে আমাদের দেশে তিন ধরনেরই অর্থনীতি আছে; সরকারি, বেসরকারি ও সমবায়ভিত্তিক। আমাদের সমবায়ভিত্তিক কিন্তু আছে, নেই তা নয়। তবে এখানে ভোগ্যপণ্য উৎপাদন বাড়ানোর জন্য আমরা বেশি গুরুত্ব দিয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যখন বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে জানতে পারছি, বিশ্বব্যাপী খাদ্যের চরম অভাব দেখা দিবে। সেজন্য আমরা শুরু থেকেই আহ্বান জানাচ্ছি, এক ইঞ্চি অনাবাদি জমিও যেন খালি না থাকে। ফসল, ফল-মূল তরকারি, শাকসবজি যে যা পারুক উৎপাদন করুক। গরু, ছাগল, ভেড়া, হাঁস, মুরগি, কবুতর, কোয়েল যে যা পারেন লালন-পালন করেন। খাদ্যের চাহিদা যেন নিজেরা নিজেদের আওতায় রাখতে পারি, সেই ব্যবস্থা নিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘এখন আসলে সমগ্র দেশেই একটা উৎসব দেখা যাচ্ছে। আমাদের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান এবং দেশের সকল মানুষই কিন্তু কিছু কিছু উৎপাদন করেছে। দেশের মানুষের ভোগ্য পণ্যের অধিকার যাতে নিশ্চিত থাকে সেজন্য ভোগ্যপণ্য অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ সালে আমরা পাস করেছি।’
কুইক রেন্টালসহ বিভিন্ন দুর্নীতি বিষয়ে মোকাব্বির খানের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এর আগে সরকারি কোনো বড় প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করতে পারেনি কেউ। এটা আওয়ামী লীগ সরকার করতে পেরেছে। আপনার (স্পিকার) মাধ্যমে আমি আমার প্রশ্নকর্তাকে চ্যালেঞ্জ করছি কোথায়, কখন, কতটুকু দুর্নীতি হয়েছে সেই কথাটা তাকে এখানে (সংসদে) স্পষ্ট বলতে হবে। তার জবাব আমি এখানে দেব।’
তিনি আরও বলেন, ‘একটি কথা আমি এখানে স্পষ্ট বলতে চাই, ওয়ার্ল্ড ব্যাংকও পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ করেছিল। সেখানে কি কোনো দুর্নীতি হয়েছিল? দুর্নীতি হয়নি। তারা প্রমাণ করতে পারেনি। এটা শুধু আমার কথা না। কানাডার ফেডারেল কোর্টে যে মামলা হয় সেই রায়ে বলা হয়েছে- সকল অভিযোগে মিথ্যা, কোনো অভিযোগই সত্য নয়। সবগুলোই ভুয়া।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রশ্নকর্তা মাননীয় সংসদ সদস্য বাংলাদেশের নাগরিক। তার একটি সেকেন্ড হোম রয়েছে। সেই সেকেন্ড হোম যেখানে অর্থাৎ ইংল্যান্ডে বিদ্যুতের দাম দেড়শ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। সেখানে ইনফ্লেশন ১৩.৩ শতাংশ। সেখানে জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে। প্রত্যেকটি পরিবারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যেন বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা হয় এবং প্রতিটি বিল পরীক্ষা করা হয়। নির্দেশনার চেয়ে এক ফোঁটা বেশি হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়, ফাইন করা হয়। বাংলাদেশে এখনো সে অবস্থার সৃষ্টি হয়নি।
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘আর এই যে কুইক রেন্টালের কথা বলা হচ্ছে- হ্যাঁ এগুলোর প্রয়োজন ছিল। কুইক রেন্টালের মাধ্যমে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো এনেছিলাম বলেই আমরা মানুষকে বিদ্যুৎ দিতে পেরেছি।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/পিটিএম