টাকা ছিনতাইয়ে সন্দেহের বশে বন্ধুকে গলাকেটে হত্যা, অবশেষ ধরা
৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ২০:৪১
ঢাকা: মো. আজাদ (১৬) অটোরিকশা চালাতেন আর নাহিদ হোসেন (২২) তাতে কাঁচা তরকারি আনা-নেওয়া করতেন। অটোরিকশায় চলাচলের মাধ্যমেই মূলত তাদের মধ্যে পরিচয় ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে নাহিদও একটি অটোরিকশা ক্রয় করেন। গত ৩ জানুয়ারি অটোরিকশার ব্যাটারি ক্রয় করতে সমবায় সমিতি থেকে কিস্তিতে ৫০ হাজার টাকার লোন নেন নাহিদ। সেই টাকা হঠাৎ ছিনতাইয়ের ঘটনায় দুই বন্ধুর মধ্যে সম্পর্ক রূপ নেয় বিষাদে।
নাহিদের সন্দেহ ছিল ৫০ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় আজাদ জড়িত। এ নিয়ে প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে ওঠে নাহিদ। এ ঘটনায় গাজীপুরের সফিপুর বাজারের ফুটপাত থেকে ৩০ টাকা দিয়ে একটি ছুরি ক্রয় করেন তিনি। এর এক মাস পর গত ৪ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় আজাদকে ডেকে নিয়ে অটোরিকশায় উঠিয়ে কাঁচা তরকারি আনার জন্য রওয়ানা হয়। পরে কালিয়াকৈর চান্দাবহ কবরস্থানের মোড়ে অন্ধকারে ডেকে নিয়ে আজাদকে প্রথমে গলা টিপে পরে ছুরি দিয়ে গলা কেটে খুন করেন। তার মৃত্যু নিশ্চিতে পুরুষাঙ্গ ও অণ্ডকোষ শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করে অটো নিয়ে পালিয়ে যায় নাহিদ। তাকে গ্রেফতারের পর এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে র্যাব।
বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৬টায় র্যাব-১ এর একটি দল র্যাব সদর দফতরের গোয়েন্দা শাখার সহায়তায় গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর থানাধীন হরিণহাটি এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে আত্মগোপনে থাকা নাহিদ হোসেনকে গ্রেফতার করে।
এদিন দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১ এর অধিনায়ক (সিও) লেফট্যানেন্ট কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আজাদকে হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে গ্রেফতার নাহিদ।
মোমেন বলেন, গত ৫ ফেব্রুয়ারি দুপুরে গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর থানাধীন গোসাত্রার পশ্চিম চকে সবজি ক্ষেতে অজ্ঞাত ব্যক্তির কণ্ঠনালি, পুরুষাঙ্গ ও অণ্ডকোষ কাটা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় র্যাব-১ ছায়া তদন্ত শুরু করে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।
ঘটনার তদন্ত অনুসন্ধানে প্রথমে নাম পরিচয় না পাওয়া গেলেও পরবর্তীতে জানা যায় নিহত আজাদ গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের হালিম মিয়ার ছেলে। তিনি গাজীপুর কালিয়াকৈর থাকতেন এবং পেশায় একজন অটোরিকশাচালক।
মোমেন আরও বলেন, আজাদ প্রতিদিনের ন্যায় গত ৪ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৩টায় অটোরিকশা নিয়ে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হন। পরদিন তার ক্ষত-বিক্ষত মরদেহের সন্ধান পাওয়া যায়। পরে আজাদের ভাই মরদেহকে শনাক্ত করে ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নিয়ে যান। এ ঘটনায় কালিয়াকৈর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়।
র্যাব-১ এর ছায়া তদন্তকারী দল গোয়েন্দা শাখার সহায়তায় ও বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে জানতে পারে আত্মগোপনে থাকা বন্ধু নাহিদই আজাদের হত্যাকারী। তাকে গ্রেফতারের পর নিহতের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন, ছিনতাইকৃত অটোরিকশা ও নগদ ৩ হাজার ৫৮০ টাকা উদ্ধার করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে নাহিদ হোসেন জানায়, দুই বছর পূর্বে নাহিদ গাজীপুরের কালিয়াকৈর হরিণহাটি এলাকায় ভ্যান গাড়িতে করে কাঁচা তরকারির ব্যবসা শুরু করেন। তরকারি আনা-নেওয়ার কাজে আজাদের অটোরিকশা ভাড়া নিত নাহিদ। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে কাঁচা তরকারির ব্যবসা বাদ দিয়ে নাহিদও অটোরিকশা চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়।
লেফট্যানেন্ট কর্নেল বলেন, অটোরিকশা ক্রয় করার পর মানিকগঞ্জ জেলার আমতলীর আলোর প্রত্যাশা সমবায় সমিতি থেকে মাসিক ৫ হাজার টাকা হারে ১২টি কিস্তিতে ৫০ হাজার টাকার লোন নেয় নাহিদ। সেই টাকা নিয়ে আজাদের অটোরিকশায় চড়ে গত ৩ জানুয়ারি ব্যাটারি ক্রয় করতে যায় নাহিদ। কিন্তু সফিপুর থেকে আনসার একাডেমি হয়ে নির্জন জায়গায় জঙ্গলের মাঝখানের রাস্তায় পৌঁছাতেই হঠাৎ ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ে নাহিদ। তারা নাহিদের সঙ্গে থাকা ৫০ হাজার টাকা ছিনিয়ে পালিয়ে যায়। এঘটনায় আজাদকে সন্দেহ করে নাহিদ। সেই সন্দেহের জেরেই প্রতিশোধ নেওয়ার পরিকল্পনা করে আজাদকে নৃশংসভাবে খুন করে নাহিদ। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
সারাবাংলা/ইউজে/একে