করমজল ফিরিয়ে এনেছে বিলুপ্তপ্রায় ‘বাটাগুর বাসকা’, হচ্ছে প্রজনন
৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১২:৪০
বাগেরহাট: ২০১৪ সালে ৮টি বাটাগুর বাসকা ও তাদের জন্ম দেওয়া ৯৪টি বাচ্চা দিয়ে শুরু হয়েছিল কৃত্রিম প্রজনন প্রক্রিয়া। দেশের একমাত্র বন্যপ্রাণি প্রজনন কেন্দ্র সুন্দরবনের করমজলে এরপর ‘বাটাগুর বাসকা’র অনেক বাচ্চা জন্ম নিয়েছে। যা নিশ্চিত করেছে বিলুপ্তপ্রায় এই প্রজাতির টিকে থাকাকে। তবে বিলুপ্তির শঙ্কা এখনও একেবারে যায়নি।
সুন্দরবনের বিভিন্ন নদীতে এই প্রজনন কেন্দ্রেই বড় হওয়া বাটাগুর বাসকার বাচ্চা অবমুক্ত করে বন বিভাগ। ২০১৭ সালে ২টি, ২০১৮ সালে ৫টি, ২০১৯ সালে ৫টি কচ্ছপ অবমুক্ত করেছে বন বিভাগ। এছাড়াও সর্বশেষ বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ১০টি কচ্ছপ সুন্দরবনে অবমুক্ত করা হয়েছে।
সুন্দরবনের করমজল কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির জানান, সর্বশেষ গত বছরের ৬ মার্চ সকালে বন্যপ্রাণি কেন্দ্রের কচ্ছপ লালনপালন কেন্দ্রের পুকুর পাড়ে বিলুপ্ত প্রজাতির কচ্ছপ বাটাগুর বাসকা ৩৪টি ডিম দিয়েছে। বাচ্চা ফোটানোর জন্য ডিমগুলো ইনকিউবেশনে (বালুর মধ্যে) রাখা হয়েছে।
৬০ থেকে ৬৫ দিন পরে এই ডিম থেকে ৩৩টি বাচ্চা ফুটে বের হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির এই কচ্ছপ আমরা খুব গুরুত্বের সঙ্গে লালনপালন করে আসছি। বংশ বাড়ানোর জন্য আমরা সার্বক্ষণিক নজরে রাখছি। সুন্দরবনে অবমুক্তির পর বর্তমানে আমাদের এই প্রজনন কেন্দ্রে ৩৮৩টি প্রাপ্ত বয়স্ক কচ্ছপ রয়েছে।’
২০১৭ সালে দু’টি কচ্ছপের ৬৩টি ডিম থেকে ৫৭টি বাচ্চা হয়। ২০১৮ সালে দু’টি কচ্ছপের ৪৬ ডিম থেকে ২১টি বাচ্চা পাওয়া যায়। ২০১৯ সালে একটি কচ্ছপের ৩২টি ডিম থেকে ৩২টি বাচ্চা পাওয়া যায়। ২০২০ সালে ১০ মে একটি কচ্ছপের ৩৫টি ডিম থেকে ৩৪টি বাচ্চা পাওয়া যায়। এসব বাচ্চা থেকে ২০১৭ সালে ২টি, ২০১৮ সালে ৫টি, ২০১৯ সালে ৫টি কচ্ছপ সুন্দরবনের বিভিন্ন নদীতে অবমুক্ত করে বন বিভাগ।
উল্লেখ্য, ২০০০ সালের দিকে বন্যপ্রাণি গবেষকরা মনে করেন পৃথিবীতে আর ‘বাটাগুর বাসকা’র কোনো অস্তিত্ব নেই। পরে ২০০৮ সালে গবেষকরা প্রকৃতিতে বাটাগুর বাসকা আছে কিনা তা খুঁজতে শুরু করেন। খুঁজতে খুঁজতে নোয়াখালী ও বরিশালের বিভিন্ন জলাশয়ে ৮টি বাটাগুর বাসকা পাওয়া যায়। এর মধ্যে ৪টি পুরুষ ও ৪টি স্ত্রী। প্রজননের জন্য গাজীপুরে নিয়ে যাওয়া হয় কচ্ছপগুলোকে।
বনবিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত লোকেরা নিবিড়ভাবে লালনপালন ও প্রজননের চেষ্টা করে বাটাগুর বাসকাগুলোকে। তারপরও তেমন সাফল্য পাওয়া যায়নি। তবে, কয়েক বছরে গাজীপুরে প্রায় ৯৪টি বাচ্চা দিয়েছিল ৮টি মা কচ্ছপ। সেখানে ভালো সাড়া না পাওয়ায় ২০১৪ সালে মূল ৮টি বাটাগুর বাসকা ও তাদের জন্ম দেওয়া ৯৪টি বাচ্চাসহ করমজল কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়।
আরও পড়ুন:
করমজলে ফুটেছে বিলুপ্তপ্রায় কচ্ছপের ৩৪টি বাচ্চা
করমজলে ‘বাটাগুর বাসকা’র ডিম থেকে ফুটেছে ৩৭টি বাচ্চা
সারাবাংলা/এমও