মিলেছে বালু রাখার জায়গা, পশুর চ্যানেলে খনন কাজে বাড়বে গতি
১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১২:৩৯
বাগেরহাট: মোংলা বন্দরের পশুর চ্যানেল সচল রাখতে ড্রেজিংয়ের বিকল্প নেই। এজন্য ২০২১ সালে পশুর চ্যানেলের জয়মনি থেকে বন্দরের জেটি পর্যন্ত ড্রেজিং কার্যক্রম শুরু করা হয়। কিন্তু ১৯ কিলোমিটারের এই নৌ পথের ড্রেজিং করা বালু প্রথমে বন্দরের আশেপাশে রাখতে পারলেও পরে জায়গা সংকট দেখা দেয়। যে কারণে দীর্ঘ ৬ মাস পশুর চ্যানেলের ড্রেজিং কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়ে। তবে অবশেষে নৌ চ্যানেল খননের সেই বালু রাখার জায়গা পেয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
মোংলা উপজেলার বুড়িরডাঙ্গা ইউনিয়নের সানবান্ধা এলাকায় বালু রাখার জমি পাওয়ায় এই সংকট আপতত দূর হচ্ছে। সানবান্ধার ২৫৮ একর জমি হুকুম দখলে নিয়ে প্রস্তত করা হচ্ছে বালু রাখার জায়গা।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের সিভিল ও হাইড্রোলিক্স বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী শেখ শওকত আলী বলেন, ‘বাগেরহাট জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে বালু ফেলার জমি নতুন করে প্রস্তুত করতে কিছুটা বিলম্ব হয়েছিল, তবে বালু ডাম্পিংয়ের জন্য এখন আর কোনো সমস্যা নেই।’
বন্দর সূত্রে জানা যায়, ৯০ দশকে মৃতপ্রায় মোংলা বন্দরকে সচল করতে বঙ্গোপসাগরের মোহনা থেকে বন্দর জেটি (আউটারবার) পর্যন্ত প্রায় ১৩২ কিলোমিটার চ্যানেল ড্রেজিংয়ের জন্য দু’টি প্রকল্প নেয় সরকার ও বন্দর কর্তৃপক্ষ। প্রথমটি আউটারবার ড্রেজিংয়ের কাজ শেষ করা হয়। এরপর শুরু হয় দ্বিতীয় প্রকল্প ১৯ কিলোমিটারের ইনারবার (পশুর চ্যানেল থেকে জেটি পর্যন্ত) ড্রেজিংয়ের কাজ।
কিন্তু ইনারবারের বালু ফেলার জায়গার সংকট দেখা দিলে গত ছয় মাস ধরে ধীরগতি নেমে আসে ড্রেজিং কাজের। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত মোট কাজের ৪৬ শতাংশ শেষ করতে পেরেছে ‘জেএইচসিইসি এবং সিসিইসিসি’ নামের চায়না ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
মোংলা বন্দর ব্যবহারকারী ব্যাবসায়ী এইচ এম দুলাল বলেন, ‘দেশের একটি বন্দরকে সচল রাখতে হলে প্রথমে দেশি-বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচলের চ্যানেলকে ঠিক রাখতে হবে। আর সেই চ্যানেলের নাব্য ঠিক রাখতে হলে ড্রেজিংয়ের বিকল্প নেই। পশুর নদী সংলগ্নবহু জমি পড়ে আছে, এছাড়া বন্দরের আশপাশেল জমির মালিকদেরও উচিত বন্দর উন্নয়নের স্বার্থে আমাদের সহায়তা করা। বন্দরকে বাঁচাতে হলে ড্রেজিং চলমান রাখতে হবে।’
বন্দরের সিভিল ও হাইড্রোলিক্স বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী ও ইনারবার ড্রেজিং প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) শেখ শওকাত আলী বলেন, ‘পশুর চ্যানেলের ইনারবার ড্রেজিংয়ের বালু রাখার সংকট কেটে গেছে। নতুন করে মোংলা উপজেলার বুড়িরডাঙ্গা ইউনিয়নের সানবান্ধা এলাকায় ২৫৮ একর মালিকানার জমি সরকারিভাবে বাগেরহাট জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে হুকুম দখলে নেওয়া হচ্ছে। এজন্য গত ১৫ জানুয়ারি সরকারের উচ্চপর্যায়ে প্রস্তাব দেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ। সেই প্রস্তাব অনুযায়ী গত ৩০ জানুয়ারি জমির কাগজপত্র যাচাইবাছাইয়ের জন্য সরেজমিনে পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি দল। সেদিনই জমি দেখা ও কাগজপত্রের কাজও প্রায় শেষ করেছেন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা’।
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের ধারণা ছিল শুরু থেকে এ প্রকল্পের কাজ শেষ করতে সময় লাগবে মাত্র এক বছর। কিন্ত ২০২১ সালের ১৩ মার্চ শুরু হওয়া এ কাজটি ২০২২ সালের ৩০ জুন শেষ হওয়ার কথা থাকলেও চলমান কাজের মধ্যে কিছুটা বাধা সৃষ্টি হওয়ায় ড্রেজিংয়ে ধীর গতিতে নেমে আসে। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি যত দ্রুত সম্ভব ইনারবার প্রকল্পের ড্রেজিং কাজ শেষ করতে।’
বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাস্টার ক্যাপ্টেন শাহিন মজিদ বলেন, ‘মোংলা বন্দরের একটি বড় মেগাপ্রকল্প ইনার বার ড্রেজিং। এই প্রকল্পের আওতায় ৭৯৩ কোটি ৭২ লাখ ৮০ হাজার টাকা ব্যয়ে বন্দর জেটি হতে জয়মনির ঘোল পর্যন্ত প্রায় ১৯ কিলোমিটার খনন হবে। এটি হলে ৯ মিটার থেকে ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ বিদেশ থেকে এসে মোংলা বন্দর জেটিতে সরাসরি প্রবেশ করতে পারবে। আর চ্যানেল ড্রেজিং না হলে আর্থিক ক্ষতিসহ আন্তর্জাতিকভাবে আমদানি-রফতানিতে অনিশ্চয়তা দেখা দেবে।’
বাগেরহাট জেলা প্রশাসক মো. আজিজুর রহমান বলেন, ‘একসময় নদীর নাব্য সংকটের কারণে অচল ছিল মোংলা বন্দর। বর্তমান সরকারের প্রচেষ্টায় এ বন্দর বিশ্বের কাছে এখন একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। তাই চলমান প্রকল্পের চ্যানেল ড্রেজিং হলে নদীর নাব্য বাড়বে। ফলে আর্ন্তজাতিক ভাবে মোংলা বন্দর আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের একটি মাইলফলক তৈরি হবে।’
সারাবাংলা/এমও