Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

যে বিদ্যালয়ে ‘প্রথম দাঁড়িয়েছিল’ শহিদ মিনার

রমেন দাশ গুপ্ত, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৯:০৮

প্রথম শহিদ মিনার নির্মাণের জায়গাটি দেখাচ্ছেন সৈয়দুল আলম। ছবি : শ্যামল নন্দী, ফটোকরেসপন্ডেন্ট, সারাবাংলা।

চট্টগ্রাম ব্যুরো: পাকিস্তানে তখন চলছে আইয়ূব শাহীর সামরিক শাসন। বাংলা ভাষা, বাঙালি সংস্কৃতি যেন নিষিদ্ধ! ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষার জন্য যারা বুকের তাজা রক্ত দিয়েছিলেন অবলীলায়, সেইসব শহিদদের স্মরণ করা তখন রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল, শহিদ মিনার নির্মাণ নিষিদ্ধ।

সেই বৈরিসময়ে চট্টগ্রামের বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন মিলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহিদ মিনার নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিল, যাদের অগ্রভাগে ছিলেন ছাত্র ইউনিয়নের নেতারা। এর মধ্য দিয়ে আইয়ূবের স্বৈরশাসনকে চ্যালেঞ্জ করাই ছিল তাদের লক্ষ্য।

বিজ্ঞাপন

পাকিস্তানি সামরিক শাসকের রক্তচক্ষু উপক্ষো করে ষাটের দশকের প্রথমভাগে চট্টগ্রাম কলেজে তৎকালীন ছাত্র ইউনিয়নের কর্মীরা মিলে শহিদ মিনার নির্মাণ করেন। ইতিহাস গবেষক মোহাম্মদ বেলাল হোসেনের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৬২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি এই শহিদ মিনারটি নির্মাণ করা হয়েছিল।

১৯৬৬ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের বোয়ালখালী থানার কধুরখীল উচ্চ বিদ্যালয়ে রাতের আঁধারে নির্মাণ করা হয় শহিদ মিনার। সেসময় সদ্যবিভক্ত ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের চট্টগ্রাম জেলা সভাপতি আবদুল্লাহ আল নোমান শহিদ মিনারগুলো নির্মাণকারীদের সামনের কাতারের একজন। সেইসময় শহিদ মিনার নির্মাণের সঙ্গে যারা জড়িত ছিলেন, তাদের দাবি এবং গণমাধ্যম ও ইতিহাসনির্ভর বিভিন্ন বইয়ের তথ্য অনুযায়ী- এটিই চট্টগ্রাম বিভাগসহ সারাদেশে বিদ্যালয় পর্যায়ে নির্মিত প্রথম শহিদ মিনার।

ষাটের দশকের ছাত্র ইউনিয়নের নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম কলেজে আমরা প্রথম শহিদ মিনার নির্মাণ করি। এর তিন-চার বছর পর কধুরখীল উচ্চ বিদ্যালয়ে করি। এর আগে দেশের কোনো বিদ্যালয়ে কোনো শহিদ মিনার ছিল না।’

বিজ্ঞাপন

সমসাময়িক ছাত্র ইউনিয়নের নেতা তপন দত্ত সারাবাংলাকে বলেন, ‘চট্টগ্রামে তখন পর্যন্ত কোনো কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার ছিল না। প্রথম শহিদ মিনার হয়েছে ১৯৬২ সালে চট্টগ্রাম কলেজে। তখন ঐক্যবদ্ধ ছাত্র ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা এটা করেছিলেন। আমার যতদূর মনে পড়ে, ঊণষত্তরের গণঅভ্যুত্থানের পর লালদিঘীর মাঠে এক সমাবেশ হয়েছিল। সেখানে থেকে শহিদ মিনার নির্মাণের জন্য আলটিমেটাম দেয়া হয়। এরপর ১৯৬৯ সালে শহরের কে সি দে রোডে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার নির্মাণ করা হয়।’

সাড়ে পাঁচ দশক পেরিয়ে এসে কধুরখীল উচ্চ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শহিদ মিনারটির রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি আদায়ে তৎপর হয়েছে, যাতে সহযোগিতা দিচ্ছে স্থানীয় প্রশাসনও। যদিও প্রথম নির্মিত শহিদ মিনারটির অস্তিত্ব এখন আর নেই, কিন্তু ছায়াঘেরা গ্রামে সেই ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আছে শতবর্ষী বিদ্যালয়টি।

১৯৬৬ সালে কধুরখীল উচ্চ বিদ্যালয়ে শহিদ মিনার নির্মাণের সঙ্গে সরাসরি জড়িতদের একজন সৈয়দুল আলম, তৎকালীন বোয়ালখালী থানা ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক। বিদ্যালয়ের তৎকালীন শিক্ষক ছাত্র ইউনিয়ন নেতা অমল কান্তি নাথ এবং তাঁর ছোট ভাই অষ্টম শ্রেণির ছাত্র মিলন কান্তি নাথ সাক্ষী হয়ে এখনও আছেন।

শহিদ মিনার নির্মাণের ইতিবৃত্ত সংগ্রহে গিয়ে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি দেখা হয় সৈয়দুল আলমের সঙ্গে। বয়স ৭৩ পার করছেন, তবে স্মৃতি এখনও অমলিন। ১৯৬৬ সালে তিনি দশম শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। সেই বয়সেই বোয়ালখালীতে ছাত্র ইউনিয়নের হাল ধরেছিলেন। সারাবাংলার কাছে স্মৃতিচারণ করলেন সেই অগ্নিগর্ভ দিনগুলোর।

বোয়ালখালী ছিল প্রগতিশীল রাজনীতির আঁতুরঘর। আর কধুরখীল ‍উচ্চ বিদ্যালয় ছিল প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন ও বাম রাজনীতির ঘাঁটি। ১৯৬৬ সালের জানুয়ারি মাসে বোয়ালখালী থানা ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের সভায় সৈয়দুল আলম কধুরখীল উচ্চ বিদ্যালয়ে শহিদ মিনার নির্মাণের প্রস্তাব করেন। সেই প্রস্তাব তখন সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়।

সৈয়দুল আলম বলেন, ‘১৯৬৫ সালে ছাত্র ইউনিয়ন কেন্দ্রীয়ভাবে বিভক্ত হয়ে পড়েছিল। একদিকে মতিয়া গ্রুপ, আরেকদিকে মেনন গ্রুপ। জেলা পর্যায়ে বিভক্তির রেশ কিছুটা পড়লেও থানায় আমরা তখনও ঐক্যবদ্ধ ছিলাম। পরে অবশ্য বিভক্ত হয়, আমি মেনন গ্রুপে চলে যাই। যা-ই হোক, শহিদ মিনার নির্মাণের সিদ্ধান্তটা আমরা ঐক্যবদ্ধভাবেই নিয়েছিলাম। নিয়মতান্ত্রিকভাবে প্রথমে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে অনুমতি চাইলাম। অনুমতি তো দিলই না, বরং হুমকি দিল যে, কোনো অবস্থায় শহিদ মিনার নির্মাণ করতে দেবেন না।’

তৎকালীন প্রধান শিক্ষক ধীরেন্দ্র লাল মজুমদারসহ অধিকাংশ বিরুদ্ধে থাকলেও জ্যেষ্ঠ্য শিক্ষক কাজী আবদুল গণি ছাবেরী ও সদ্য যোগ দেওয়া শিক্ষক অমল কান্তি নাথ আড়াল থেকে শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা করছিলেন। কর্তৃপক্ষ ছাত্রদের বোঝাচ্ছিল, শহিদ মিনার করলে বিদ্যালয় সরকারের রোষানলে পড়বে, অনুদান বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু ছাত্ররা অনড়, তারা শহিদ মিনার করবেই, বাধা এলে প্রতিরোধ করা হবে।

প্রথম শহিদ মিনার নির্মাণের জায়গাটি দেখাচ্ছেন সৈয়দুল আলম। ছবি : শ্যামল নন্দী, ফটোকরেসপন্ডেন্ট, সারাবাংলা।

প্রথম শহিদ মিনার নির্মাণের জায়গাটি দেখাচ্ছেন সৈয়দুল আলম। ছবি : শ্যামল নন্দী, ফটোকরেসপন্ডেন্ট, সারাবাংলা।

সৈয়দুল আলমের বাবা তৎকালীন স্থানীয় উত্তর আকুবদণ্ডী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য কামাল উদ্দীনও শহিদ নির্মাণে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন।

‘আমি এবং আমার বড় ভাই মাহবুব বাবাকে বোঝাতে সক্ষম হলাম যে- শহিদ মিনার করা রাষ্ট্রদ্রোহিতা নয়, ইসলামবিরোধী কাজও নয়। বুঝিয়ে দিলাম যে, বাধা দিতে এলে পিতা-পুত্রের সংঘাত অনিবার্য। বাবা নমনীয় হলেন। দক্ষিণ আকুবদণ্ডীর ইউপি সদস্য সৈয়দ জামাল উদ্দীনও বিরোধিতা করছিলেন। উনাকে ঠেকাতে ব্যর্থ হলেন উনার ভাগ্নে আমাদের সহপাঠী আবুল হাসান। বাধ্য হয়ে আমরা উনার বাধা উপেক্ষা করে শহিদ মিনার নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিলাম।’

২০ ফেব্রুয়ারি রাতে কাজ শুরুর সিদ্ধান্ত নিলেন ছাত্ররা। বিদ্যালয়ের প্রবেশপথের পাশে সামান্য বামে শহিদ মিনার করা হবে। রাত ১০টার দিকে ছাত্ররা বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে জমায়েত হলেন। খবর পেয়ে সৈয়দ জামাল আসছিলেন বাধা দিতে।

সৈয়দুল আলম বলেন, ‘উনাকে ঠেকানোর পরিকল্পনা আমরা করে রেখেছিলাম। জামাল সাহেব বিদ্যালয়ের কাছে এসে টর্চের আলো ফেলামাত্র দেখেন উনার ভাগ্নে আবুল হাসান দিগম্বর হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি পিছু হটে ফিরতি পথ ধরলেন।’

রাত ক্রমে গভীর হচ্ছে। ছাত্রদের অবস্থান মাঠে। আর স্কুল কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষকরা স্কুলের সামনে বারান্দায়। মওলানা ইসমাইল হ্যাজাক লাইট জ্বালিয়ে সামনের অফিসে বসে আছেন। শিক্ষক ছাবেরী, অমল কান্তি নাথসহ কয়েকজন শিক্ষক প্রতিরোধকারীদের সঙ্গে সেখানে ছিলেন না। রাতভর চলছিল শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ইঁদুর-বিড়াল খেলা।

‘আমাদের এলাকার কমিউনিস্ট পার্টির নেতা সৈয়দ জালাল সাহেব ইট, বালু, সিমেন্ট দিয়েছিলেন। আবদুল্লাহ আল নোমান সাহেব দিয়েছিলেন শহিদদের স্মরণে ফলক। সেগুলো আমাদের কাছে রেখেছিলাম। কোদালসহ আরও যা যা লাগবে সবই রেখেছিলাম। রাজমিস্ত্রি বসির আহমদকে বসিয়ে রাখলাম। ভোরের আলো ফুটছে, এমন সময় ভাবলাম আর সময়ক্ষেপণ নয়। প্রাণে তখন প্রবল প্রতিরোধের জোয়ার।’

স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে সৈয়দুল আলমের রক্ত যেন প্রবীণ বয়সেও তারুণ্যের মতো টগবগ করে ফুটছে, চোখ তেজোদীপ্ত লাল হয়ে উঠেছে।

‘আমাদের সাথী শাহজাদা সৈয়দ রেজাউল্লা আকবরী কোমরে লুঙ্গি বেধে কোদাল নিয়ে এগিয়ে চলল। যথাস্থানে মাটিতে কোদালের আঘাত। আমরা স্লোগান ধরলাম। সবাই কাজে লেগে গেলাম। ছাত্রদের রুদ্রমূর্তি দেখে শিক্ষকরা চলে গেলেন। পিরামিড আকৃতি দিয়ে শহিদ মিনার নির্মাণ করেই ফেললাম। সেই শহিদ মিনারের সামনে দাঁড়িয়ে আমরা কয়টি কিশোর প্রাণের কী উচ্ছ্বাস সেদিনের রোদ ঝলমল সকালে ! সকাল ১০টার দিকে পুরোপুরি কাজ শেষ হল।’

আবদুল্লাহ আল নোমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি তখন জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি। শহিদ মিনার নির্মাণের বিষয়ে আমরা একটা উদ্যোগ নিয়েছিলাম। স্কুলপর্যায়ে আমরা কধুরখীল স্কুলকে বেছে নিয়েছিলাম। শিক্ষক ছাবেরী সাহেবের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ ছিল। উনি ভালো ভূমিকা রেখেছিলেন। ছাত্র ইউনিয়নের নেতারা সাধারণ ছাত্রদের সংগঠিত করেছিল। আমি স্টেশন রোড থেকে একটা ফলক লিখে নিয়ে বোয়ালখালীতে যাই। একেবারে ভোরের দিকে যখন পৌঁছি, তখন ছাত্ররা শহিদ মিনার নির্মাণের কাজ শুরু করে দিয়েছে। আমি ফলকটা সেখানে লাগিয়ে দিই।’

অমল কান্তি নাথ সেইসময়ের স্মৃতিচারণ করে সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি তখন ছাত্র ইউনিয়নের সঙ্গেই ছিলাম। আবার মাসখানেক আগে শিক্ষকতায় যোগ দিই। আমি এবং ছাবেরী সাহেব শহিদ মিনার নির্মাণের পক্ষে ছিলাম। প্রধান শিক্ষক বিরোধিতা করেছিলেন। উনার মনোভাব কী, সিদ্ধান্ত কী- সেগুলো স্কুলের বাইরে এসে সৈয়দুলদের জানিয়ে দিতাম। আমার ভাই মিলন কান্তি নাথ, সে-ও এই শহিদ মিনার নির্মাণের অন্যতম উদ্যোক্তা। সে তখন অষ্টম শ্রেণির ছাত্র ছিল। ছাত্র ইউনিয়ন করতো। তাকে দিয়েও খবর পাঠাতাম।’

‘ভাসানীপন্থী ন্যাপের নেতা সৈয়দ জালাল সাহেব শহিদ মিনারের জন্য ইট, বালু, সিমেন্ট পাঠিয়েছিলেন। আবদুল্লাহ আল নোমান সাহেব ফলক নিয়ে গিয়েছিলেন। আমি আর ছাবেরী সাহেব রাতভর ছাত্রদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছি। ভোর হতেই আমি স্কুলে চলে যাই। তখন সেখানে ছাত্ররা কাজ করছিল। আমিও তাদের সহযোগিতা করি। আমরা সবাই শহিদ মিনারের সামনে দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা জানালাম। এরপর অবশ্য প্রধান শিক্ষক আর বিরোধিতা করেননি। অন্যান্য শিক্ষকরাও মেনে নিয়েছিলেন’- বলেন অমল কান্তি নাথ।

তবে পরবর্তীতে শহিদ মিনার নির্মাণের জন্য আবুল হাসান ও সৈয়দ নুরুল হুদাকে বিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল বলে জানান সৈয়দুল আলম। তাঁর স্মরণ অনুযায়ী, ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে কধুরখীল উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রদের মধ্যে মাহাবুব উল আলম, ফরিদ উদ্দীন পিযুষ চৌধুরী, মিলন নাথ, প্রীতিভুষণ মজুমদার, যোগব্রত বিশ্বাস, আবদুছ সত্তার, দুলাল মজুমদার, মোহাম্মদ আলী, আবুল কালাম, আবু ওসমান, এস এম ইউছুফ, তসলিম উদ্দিন, জাকির হোসেন ছিলেন।

২১ ফেব্রুয়ারি বিকেলে সেই শহিদ মিনার প্রাঙ্গনে বিরাট জমায়েত হল। ছাত্ররা একুশে ফেব্রুয়ারি উদযাপন করল। এরপর থেকে কধুরখীল উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রতিবছর বুদ্ধিজীবীদের এনে আলোচনা সভা, নাটক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে একুশে ফেব্রুয়ারি উদযাপন শুরু হল।

এর ধারাবাহিকতায় পরের বছর ১৯৬৭ সালে বোয়ালখালীর পূর্ণ চন্দ্র সেন সারোয়াতলী উচ্চ বিদ্যালয়, গোমদণ্ডী পাইলট হাইস্কুলেও ছাত্রদের উদ্যোগে শহিদ মিনার নির্মাণ করা হয়। আস্ত আস্তে পুরো বোয়ালখালী থানায় একুশে উদযাপন শুরু হয় বলে জানান সৈয়দুল আলম।

কধুরখীল উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, ১৯৬৬ সালে যে স্থানে শহিদ মিনার নির্মাণ করা হয়েছিল, সেখানে এখন আর সেটি নেই। বিদ্যালয়ের মূল অফিসকক্ষের পাশে পুকুরপাড়ে ঠাঁই হয়েছে নতুন শহিদ মিনারের। অবয়ব-আকৃতিও পাল্টে গেছে।

সৈয়দুল আলম আক্ষেপ করে বললেন, ‘দেশ স্বাধীনের আরও পরে শহিদ মিনার আমরা যেটি নির্মাণ করেছিলাম, সেটি সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এখানে মসজিদ বানানোর জন্য শহিদ মিনারটি সরানো হয়েছে। আমাদের একবার জানানোও হয়নি। প্রথমে মূল গেইটের ডানে নেওয়া হয়। এরপর পুকুরপাড়ে নেওয়া হয়। শহিদ মিনার নেই, কিন্তু ইতিহাস আছে, থাকবে। এই ইতিহাস কেউ মুছতে পারবে না।’

কধুরখীল উচ্চ বিদ্যালয়টিকে সরকারিকরণ করা হয়েছে। বর্তমান প্রধান শিক্ষক বিশ্বজিৎ বড়ুয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘স্বাধীনতার আগে-পরের পত্রপত্রিকায় এই শহিদ মিনারকে সারাদেশে স্কুলপর্যায়ে প্রথম হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। নির্মাতাদের মধ্যে জীবিত কয়েকজন এখনও আছেন। উনারাও সাক্ষ্য দিয়েছেন। বিভিন্ন বইয়েও এটা উল্লেখ আছে। আমরা এই শহিদ মিনারের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির জন্য চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাও এ বিষয়ে আমাদের সহযোগিতা করছেন।’

বোয়ালখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মামুন সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সারাদেশে প্রথম শহিদ মিনার হিসেবে স্বীকৃতির জন্য একটি আবেদন করবেন বলে আমাদের জানিয়েছেন। আমরা প্রয়োজনীয় রেফারেন্সসহ আবেদন করতে বলেছি। আবেদন পেলে সেটি জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে বাংলাদেশ একাডেমি, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়সহ যেসব দফতরে পাঠানো প্রয়োজন, সেখানে পাঠাবো। এরপর তারা অনুসন্ধান করে যদি দাবির সত্যতা পায়, সেক্ষেত্রে স্বীকৃতি দেওয়া হবে নিশ্চয়।’

 

আমতলা থেকে ইউনেস্কোর আরও খবর:
‘ভাষা আন্দোলন থেকেই বাংলাদেশ, বাংলার স্বাধীনতা’
ভাষার মাস শুরু
‘২০০ টাকার লোভে জামায়াতে যোগ দেয় গোলাম আযম’
ভাষা আন্দোলনে বামপন্থীরা ছিল মুখ্য ভূমিকায়
অতঃপর কবি এসে মেলার উদ্যান অংশে দাঁড়ালেন
একুশের প্রথম কবিতার রচয়িতার নামে চসিকের লাইব্রেরি
কিভাবে তৈরি হয়েছিল একুশের সেই অমর গান?
বছরজুড়ে ১৫০০ কোটি টাকার ফুল বাণিজ্য
‘বাপ-মা নেই’ দেশের কোনো শহীদ মিনারেরই
অযত্ন-অবহেলায় শহীদ বরকত স্মৃতি জাদুঘর

সারাবাংলা/আরডি/এমও

আমতলা থেকে ইউনেস্কো শহিদ মিনার সামরিক শাসন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর