Saturday 12 Apr 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিদ্যুতের দাম বাড়ায় পণ্য উৎপাদন খরচ বাড়ছে

ঝর্ণা রায়, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৫ মার্চ ২০২৩ ২১:৩২ | আপডেট: ৬ মার্চ ২০২৩ ০০:৩৯

ঢাকা: যখন বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ধীরে ধীরে মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে, যখন বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার ধাক্কা বাংলাদেশেও, যখন মানুষের আয়-ব্যয়ের পার্থক্য বেড়ে যাচ্ছে কয়েকগুণ- ঠিক তখনই বাড়ানো হলো বিদ্যুতের দাম। এবং এটা গত দুই মাসে তৃতীয় বারের মতো। সরকারের এই উদ্যোগে হতাশ সাধারণ মানুষ। তারা বলছে, দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়লেও বাড়েনি আয়। তাদের জন্য এ সিদ্ধান্ত ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’র মতো।

বিজ্ঞাপন

এদিকে, বিদ্যুতের দাম বাড়ায় খরচ বাড়বে পণ্য উৎপাদনে, ফলে সংকট আরও তীব্র হওয়ার আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। আর ভর্তুকি কমাতে দাম সমন্বয়ের কোনো বিকল্প নেই বলে উল্লেখ করেছেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ভোক্তা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বেড়েছে ৫ শতাংশ। এ নিয়ে গত দুই মাসে তৃতীয় বারের মতো বাড়ল বিদ্যুতের দাম। নতুন বাড়তি দাম অনুযায়ী প্রতি ইউনিটের দাম এখন ৮ টাকা ২৫ পয়সা। গত নয় বছরে বিদ্যুতের দাম বাড়ার রেকর্ড পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে ইউনিট ছিল ৬ টাকা ৫০ পয়সা, ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে তা বেড়ে হয় ৬ টাকা ৮৫ পয়সা, ২০২০ ফেব্রুয়ারি মাসে বাড়িয়ে প্রতি ইউনিট করা হয় ৭ টাকা ১৩ পয়সা। এছাড়া, ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে বিদ্যুতের দাম ৫ শতাংশ বাড়ানো হলে প্রতি ইউনিটের মূল্য দাঁড়ায় ৭ টাকা ৪৯ টাকা। আর পরের মাস ফেব্রুয়ারিতে আরও ৫ শতাংশ বাড়ানোর পর ইউনিট প্রতি দাম হয় ৭ টাকা ৮৬ পয়সা। সবশেষ গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ৫ শতাংশ বাড়ানোর পর এখন ভোক্তা পর্যায়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম দাঁড়িয়েছে ৮ টাকা ২৫ পয়সা। এ নিয়ে গত দুই মাসে গড়ে বিদ্যুতের দাম বেড়েছে ১৫ শতাংশ। যা সাধারণ মানুষের জন্য জীবন যাপনে চাপ পড়ছে।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কর্মরত সাদেকুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘৫০০ টাকা নিয়ে বাজারে গেলে সবজি কেনার পর মাছ-মাংস কেনার পয়সা থাকে না। গ্যাস, পানি, বিদ্যুতের দাম এমনিতেই বাড়তি, তার ওপরে এই দাম বৃদ্ধি বাড়তি বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।’ স্কুলশিক্ষক মনিরুজ্জামান বলেন, ‘তিন সন্তান নিয়ে পাঁচ জনের সংসার চালানো কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

এদিকে বড় শিল্পে বিদ্যুতের দাম বেড়ে ইউনিট প্রতি দাঁড়িয়েছে ১২ টাকা ২২ পয়সা। আর ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ১১ টাকা ৮৫ পয়সা। ব্যবসায়ীরা বলছেন এতে পণ্যের উৎপাদন খরচ বাড়বে। যার প্রভাব পড়বে সাধারণ মানুষের ওপর। ব্যবসায়ী নেতা সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘সরকার বিইআরসিকে পাশ কাটিয়ে আমাদের মতামতের তোয়াক্কা না করে ইচ্ছা মতো দাম বাড়াচ্ছে। এই বাড়তি দাম উৎপাদনের ওপরে পড়বে। যার প্রভাব গিয়ে পড়বে সাধারণ মানুষের ওপর।’

বিজ্ঞাপন

এ প্রসঙ্গে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ শামসুল আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘পরিকল্পনাতেই সমস্যা। কারণ বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর সঙ্গে যে অসম ও অযৌক্তিক চুক্তি করা হয়েছে তার বড় প্রমাণ ভারতের ঝাড়খন্ডে আদানি পাওয়ার প্ল্যান্ট।’ তিনি বলেন, ‘রামপাল, পায়রার ক্ষেত্রেও একই কাজ করা হয়েছে।’

বিদ্যুতের নতুন মূল্য হার অনুযায়ী, গ্রাহক পর্যায়ে সবচেয়ে কম ব্যবহারকারী শ্রেণিতে প্রতি ইউনিটের দাম ৪ টাকা ১৪ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ৪ টাকা ৩৫ পয়সা। পরের ধাপে ৪ টাকা ৬২ পয়সা থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ৪ টাকা ৮৫ পয়সা। আর আবাসিক খাতে সর্বোচ্চ ব্যবহারকারী গ্রাহকের ক্ষেত্রে ১২ টাকা ৬৩ পয়সা থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ১৩ টাকা ২৬ পয়সা। কৃষিকাজে ব্যবহৃত বিদ্যুতের দাম ৪ টাকা ৫৯ টাকা থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ৪ টাকা ৮২ পয়সা।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিদ্যুতে ভর্তুকি কমাতেই দাম সমন্বয় করা হচ্ছে। দাম বাড়ছে যৌক্তিক হারেই। যুদ্ধের কারণে আমাদের জ্বালানির দাম অত্যাধিকভাবে বেড়ে গেছে। গত আড়াই বছরে আমরা দাম বাড়াইনি। কেন বাড়াইনি? কারণ বাড়ানোর প্রয়োজন হয়নি।’

তিনি আরও বলেন, ‘বছরে ২২ হাজার কোটি টাকা বিদ্যুতে ভর্তুকি দিতে হবে। এই ১৫ শতাংশ দাম বাড়ানোর কারণে ৯ হাজার ২০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।’

উল্লেখ্য, গত ১৪ বছরে পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ১১ বার আর খুচরা পর্যায়ে ১৩ বার বাড়ানো হয়েছে। এর পরেও ভারি হচ্ছে ভর্তুকির বোঝা। বিদ্যুতে ভর্তুকির চাপ কমাতে সরকার চলতি বছর থেকে প্রতি মাসে বিদ্যুতের দাম সমন্বয় শুরু করেছে।

সারাবাংলা/জেআর/পিটিএম

উৎপাদন খরচ বিকল্প নেই বিদ্যুৎ সমন্বয়

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর