মেট্রোরেলে চড়ে নির্মল আনন্দে ভরেছে শিশুদের মন
১৭ মার্চ ২০২৩ ২১:৩০
ঢাকা: রাজধানীর আগারগাঁও থেকে উত্তরাগামী মেট্রোরেলের যাত্রাপথে সমবেত শিশুকণ্ঠে ভেসে আসে ‘শোনো, একটি মুজিবরের কণ্ঠে লক্ষ মুজিবরের ধ্বনি, প্রতিধ্বনি’ গান। একই ধরনের টি-শার্ট আর মাথায় ক্যাপ পরা প্রায় অর্ধশতাধিক শিশু গান গাইছে, গল্প করছে। কেউ কেউ মেট্রোরেলের জানালা দিয়ে দেখার চেষ্টা করছে ব্যস্ত নগরী ঢাকার চালচিত্র।
শুক্রবার (১৭ মার্চ) সকালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষ্যে এতিম, পথশিশু, সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মেট্রোরেল ভ্রমণের ব্যবস্থা করে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ।
সরকারি শিশু পরিবার ও মিরপুর-১০ শিশু পরিবার নামে সমাজসেবা অধিদফতরের দুটো প্রতিষ্ঠান থেকে ৬০ জন শিশু মেট্রোরেলে চড়ার স্বাদ পায়। এদের অধিকাংশের বয়স ৬ থেকে ১২ বছরের মধ্যে।
সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বিআরটিসির ছাদখোলা দুটি বাসে করে আগারগাঁও স্টেশনে নিয়ে আসা হয় শিশুদের। স্টেশনের প্রবেশপথ থেকে সারিবদ্ধ হয়ে ভেতরে প্রবেশ করে শিশুরা। আগত শিশুর প্রত্যেকের হাতে ছিল বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষ্যে শুভেচ্ছা সংবলিত প্লে-কার্ড।
বাস থেকে নামার পর থেকেই আগত শিশুদের চোখে-মুখে দেখে মেলে উচ্ছ্বাস। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এদের সবাই প্রথমবারের মতো মেট্রোরেল ভ্রমণ করছে।
এদিন সকাল ৯টা ৫০ মিনিটের দিকে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের দেওয়া কার্ড দিয়ে শৃঙ্খলা বজায় রেখে প্লাটফর্মে প্রবেশ করে ট্রেনে ওঠে তারা।
সকাল ১০টার দিকে আগারগাঁও থেকে উত্তর স্টেশনের দিকে যাত্রা করে মেট্রোরেল। ১৩ মিনিটের এ যাত্রায় মেট্রোরেলের ভেতরে থাকা শিশুদের কেউ বাইরে তাকিয়ে ঢাকা শহর দেখে, কেউ বা বন্ধুদের সঙ্গে মেতে ওঠে গল্প-আড্ডায়। মাঝে মাঝে উচ্ছ্বাসের সঙ্গে গানও করতে দেখা যায় শিশুদের।
পরে সাড়ে ১১টারর দিকে দিয়াবাড়ী সংলগ্ন মেট্রোরেল প্রদর্শনী ও তথ্য কেন্দ্রের কনফারেন্স রুমে শিশুদের সঙ্গে নিয়ে কেক কেটে বঙ্গবন্ধুর ১০৩তম জন্মবার্ষিকী পালন করেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সংশ্লিষ্টরা।
মেট্রোরেলে চড়তে পেরে উচ্ছ্বাস-আনন্দ
মেট্রোরেলে চড়তে পেরে বেজায় খুশি সুবিধাবঞ্চিত এসব শিশু। গান-গল্পে মাতোয়ারা শিশুদের চোখ-মুখ দেখেই বোঝা যায়—নির্মল আনন্দের অনুভূতি তাদের ছুঁয়েছে।
আগত শিশুদের একজন রিতু আক্তার সারাবাংলাকে বলে, ‘খুব খুশি লাগছে।’
ঝুমুর আক্তার নামে অন্য এক শিশু সারাবাংলাকে বলে, ‘আমার খুব ভালো লেগেছে। আশা করি, আবারও মেট্রোরেলে উঠব। আমি খুব মজা পেয়েছি। গান করেছি, গল্প করেছি।’
ঝুমুর জানায়, এর আগে সরকারি শিশু পরিবার থেকে আমি অনেক জায়গায় ঘুরতে পেরেছে। জাদুঘরে গিয়েছে, নভোথিয়েটারে গিয়েছে। আজ মেট্রোরেলে চড়তে পেরেছে।’
ঝুমুরও বলে, ‘আমি আজ ভীষণ আনন্দিত।’
সরকারি শিশু পরিবারের উপ-তত্ত্বাবধায়ক ঝর্ণা জাহিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘অবশ্যই এটি একটি ভালো উদ্যোগ। যারা এই সুযোগ করে দিয়েছেন, তাদের ধন্যবাদ। আমাদের প্রতিষ্ঠানে ১৫০ জন সুবিধাবঞ্চিত শিশু আছে। তাদের মধ্য থেকে নির্ধারণকৃত বয়স অনুযায়ী শিশুদের নিয়ে এসেছি। শিশুরা খুব উচ্ছ্বসিত।’
সংশ্লিষ্টরা যা বলছেন
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব নীলিমা আখতার বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে আমরা এই আনন্দ আয়োজন করেছি। ৬০ জন শিশু এ আনন্দযাত্রায় শামিল হয়েছে। আমরা এ আয়োজনের মধ্য দিয়ে শিশুদেরকে মেট্রো রেলের অভিজ্ঞতার ছাপ দিতে চেয়েছি। আমরা শিশুদের জানাতে চেয়েছি, আমরা আমাদের স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছি।’
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের উপ-সচিব আবু নাসের সারাবাংলাকে বলেন, ‘সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের উদ্যোগে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে এতিম, পথশিশু ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে আজকের এমন ব্যতিক্রম আয়োজন। জাতির পিতা সোনার বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই দেশকে স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলছেন। সোনার বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে যে উন্নয়ন করা হচ্ছে, সেখানে এই সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের যুক্ত করার বিষয়টি অত্যন্ত আনন্দের। এতে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীও এই উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় নিজেদের অংশীদার ভাবতে পারবেন।’
বিআরটিসির চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘সব স্তরের মানুষ যেন বিআরটিসির সেবা নিতে পারে, সে জন্য আমাদের প্রচেষ্টা। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। আরও কাজ করার আছে। আমাদের দুটি ছাদখোলা বাস আছে। একটি আমরা পদ্মাসেতুতে ভ্রমণের জন্য নির্ধারণ করেছি৷ ভবিষ্যতে কক্সবাজারেও আরও দুইটি গাড়ি যাওয়ার পরিকল্পনা আমাদের আছে।’
সারাবাংলা/আরআইআর/একে