মানুষের আত্মত্যাগ কখনও ব্যর্থ হতে পারে না: প্রধানমন্ত্রী
২৩ মার্চ ২০২৩ ১৪:৪৭
ঢাকা: আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যেকোনো অর্জনের জন্য যে ত্যাগ স্বীকার করতে হয়, সেই ত্যাগ স্বীকার করতে পেরেছি বলেই আমাদের অর্জনগুলো একে একে আমরা জনগণের কল্যাণে আনতে পেরেছি। মানুষের আত্মত্যাগ কখনও ব্যর্থ হতে পারে না।
বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) দুপুরে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে স্বাধীনতা পুরস্কার ২০২৩ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের এই মহান স্বাধীনতায় যারা জীবন দিয়ে গেছেন, রক্ত দিয়ে লিখে দিয়ে গেছেন আমাদের স্বাধীনতার নাম। তাদের রক্ত কখনও বৃথা যেতে পারে না। আমরা বৃথা যেতে দেবো না। এটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা।’
পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ের স্মৃতিচারণ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যখন সরকারে আসে তখনই কিন্তু ধীরে ধীরে বাংলাদেশের উত্তরণ ঘটতে শুরু করে। কারণ ক্ষমতাকে আমরা বাংলাদেশের মানুষের সেবা করার সুযোগ হিসেবেই পাই। এর মাঝে অনেক চড়াই-উৎড়াই, অনেক ঘটনা ঘটে গেছে। এটুকু বলতে পারি, ২০০৮-এ নির্বাচিত হয়ে ২০২৩; এই একটানা বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে বলেই কিন্তু আজকের উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে।’
‘পঁচাত্তর থেকে আমরা যদি দেখি, বারবার গণতন্ত্র থমকে দাঁড়িয়েছে; গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকতে পারেনি; রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অব্যাহত থাকতে পারেনি; কাজেই বাংলাদেশও সেভাবে এগোতে পারেনি। ক্ষমতাসীন যারা ছিল তাদের বাংলাদেশ নিয়ে কী চিন্তা-ভাবনা ছিল সেটা নিয়েও প্রশ্ন আছে’, বলেন তিনি।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘বাংলাদেশের একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না, ভূমিহীন থাকবে না সিদ্ধান্ত নিয়ে আজ আমরা গৃহহীন-ভূমিহীনদের ঘর তৈরি করে দিচ্ছি। খেলাধুলা, সাহিত্য-সংস্কৃতির চর্চা— সব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যেন এগিয়ে যায় তার জন্য যা যা করণীয় আমরা করেছি। দারিদ্র্যের হার যেখানে ৪০ ভাগের উপরে ছিল সেখানে আমরা কমিয়ে এনেছি ২০ ভাগে। আরও একটি সুখবর দিতে পারব, আমাদের দারিদ্র্যের হার আরও হ্রাস পেয়েছে। যেটা সঠিকভাবে এখন তথ্য নেওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা উন্নয়নশীল দেশের যে মর্যাদা পেয়েছি, এটাকে ধরে রেখে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনাও আমরা নিয়েছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের পর করোনার ধাক্কা, এরপর ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে আমাদের দেশের অগ্রযাত্রা ব্যাহত হয়েছে। এরপরও আমরা চেষ্টা করছি অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে। আমরা যা করছি সব পরিকল্পিতভাবে করছি। আমাদের সরকার সবসময় গবেষণায় জোর দিচ্ছে। বিষয়ভিত্তিক গবেষণায় আমরা জোর দিয়েছি।’
মহামারি করোনার ক্ষতির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘করোনার সময় আমরা মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। রমজানে এক কোটি পরিবারকে কমমূল্যে পণ্য দিচ্ছি। আমরা ভর্তুকি দিয়ে রমজানের পণ্য তাদের হাতে তুলে দেয়ার ব্যবস্থা করছি। আমরা মানুষের কষ্ট যখন দেখি তখন তা কীভাবে লাঘব করব সেই কাজ করছি।’
এদিন জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ৯ বিশিষ্ট ব্যক্তি এবং একটি প্রতিষ্ঠানকে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হয়। ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘স্বাধীনতা পুরস্কার ২০২৩’ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুরস্কারপ্রাপ্তদের হাতে পদকসহ সম্মাননাপত্র তুলে দেন।
পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন মন্ত্রীপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন। এবার স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল (অব.) সামসুল আলম, মরহুম লে. এ জি মোহাম্মদ খুরশীদ, শহিদ খাজা নিজামউদ্দিন ভূইয়া এবং আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া (বীর বিক্রম)।
এছাড়া সাহিত্যে মরহুম ড. মুহাম্মদ মঈনুদ্দিন আহমেদ (সেলিম আল দীন), সংস্কৃতিতে পবিত্র মোহন দে, ক্রীড়ায় এ এস এম রকিবুল হাসান, গবেষণা ও প্রশিক্ষণে বেগম নাদিরা জাহান (সুরমা জাহিদ) ও ড. ফেরদৌসী কাদরী।
আর পুরস্কারের জন্য মনোনীত প্রতিষ্ঠান হলো ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতর।
সারাবাংলা/এনআর/এমও