Thursday 05 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শ্রদ্ধায় নত চট্টগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ গড়ার শপথ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৬ মার্চ ২০২৩ ১৫:৩২

চট্টগ্রাম ব্যুরো: বছর ঘুরে আসা স্বাধীনতার দিনে মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ দেওয়া বাঙালির বীর সন্তানদের বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ, কুচকাওয়াজ, আলোচনা, গান-কবিতাসহ নানা আয়োজন চলছে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে। বাঙালির জন্য একটি মানচিত্র, একটি পতাকা এনে দেওয়ার রাজনৈতিক সংগ্রাম যার নামে পরিণত হয়েছিল জনযুদ্ধে, ইতিহাসের সেই মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং জাতীয় চার নেতার প্রতি শ্রদ্ধায় নত হয়েছে চট্টগ্রামের আপামর জনতা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার দৃপ্ত স্লোগান সবার কণ্ঠে।

রোববার (২৬ মার্চ) ভোরে নগরীর মিউনিসিপ্যাল মডেল হাইস্কুল প্রাঙ্গণে অস্থায়ী শহিদ মিনারে সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের কর্মসূচি শুরু হয়। এর পর মেয়র নগরীর টাইগারপাসে অস্থায়ী নগর ভবনের সামনে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।

এ সময় সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, কাউন্সিলর আবদুস সালাম মাসুম, হাসান মুরাদ বিপ্লব, আবুল হাসনাত মোহাম্মদ বেলাল, সচিব খালেদ মাহমুদ উপস্থিত ছিলেন।

শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু যে স্বপ্ন নিয়ে স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন, তা পূরণে অনেক দূর এগিয়ে গেছেন তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মুক্তিযোদ্ধাদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশের পাশাপাশি রাজাকার আলবদরদের তালিকাও দ্রুত প্রকাশ করে জাতির কাছে তাদের চিহ্নিত করতে হবে। তাহলে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে রোধ করার অপশক্তি নির্মূল হবে।’

এদিকে, সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গেই জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে শেখ রাসেল চত্বরে ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা দিবসের কর্মসূচি শুরু হয়। এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে বিভাগীয় কমিশনার আমিনুর রহমান জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন, সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় ও পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহ জাতীয় পতাকার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেন। উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানও।

এরপর অস্থায়ী শহিদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান প্রশাসনের বিভিন্ন ইউনিটের প্রধানরা। ডিআইজি ও পুলিশ সুপার নগরীর হালিশহরে জেলা পুলিশ লাইনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দেন। সিএমপি কমিশনার নগরীর দামপাড়া পুলিশ লাইনের শহিদ মিনারেও শ্রদ্ধা জানান। পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়।

সকাল ৮টায় নগরীর এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে স্বাধীনতা দিবসের কুচকাওয়াজ শুরু হয়। এতে পুলিশ বাহিনী, কারারক্ষী, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিএনসিসি, স্কাউটস ও গার্লস গাইডের সদস্যরা অংশ নেন। কুচকাওয়াজ কুচকাওয়াজে সালাম গ্রহণ করেন বিভাগীয় কমিশনার আমিনুর রহমান। জেলা প্রশাসনের আয়োজনে এই অনুষ্ঠানে শারীরিক কসরত ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় অংশ নেন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা।

বিভাগীয় কমিশনার শিক্ষার্থীদের প্রতি মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানার মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার চেতনাকে লালন করে বাংলাদেশ, বাংলা ভাষা ও বাঙালি জাতির প্রতি কর্তব্যবোধে উজ্জীবীত হওয়ার আহ্বান জানান।

এ সময় ডিআইজি, সিএমপি কমিশনার, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর আহমদ ও এ কে এম সরোয়ার কামাল, উপস্থিত ছিলেন।

সকালে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অস্থায়ী শহিদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এ সময় নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়া নগর কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদসহ নেতাকর্মীরা ছিলেন।

এছাড়া, দারুল ফজল মার্কেটে দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। নগর মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হাসিনা মহিউদ্দিন নেতাকর্মীদের নিয়ে শহিদ মিনারে ফুল দেন। নগর যুবলীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ আরও বিভিন্ন সংগঠনও শ্রদ্ধা নিবেদন করে।

বিএনপির নেতাকর্মীরা নগরীর ষোলশহরে বিপ্লব উদ্যানে স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। এ সময় নগর বিএনপির আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেন ও সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর, উত্তরের আহবায়ক গোলাম আকবর খোন্দকার এবং দক্ষিণের আহবায়ক আবু সুফিয়ান উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) চট্টগ্রাম জেলা কমিটির উদ্যোগে শহিদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এ সময় জেলা সিপিবির সভাপতি অশোক সাহা, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, সহকারী সাধারণ সম্পাদক নুরুচ্ছাফা ভূঁইয়া, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য উত্তম চৌধুরী, ফরিদুল ইসলাম, সিতারা শামীম, সদস্য রেখা চৌধুরী, প্রদীপ ভট্টাচার্য উপস্থিত ছিলেন।

চট্টগ্রাম জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক শরীফ চৌহানের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা শহিদ মিনারে ফুল দেন। যুব মৈত্রী, ছাত্র মৈত্রীও পৃথকভাবে ফুল দিয়েছে। ন্যাপ, জাসদ, বাসদসহ আরও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছে।

ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় নেতা এ্যানি সেন, জেলার সভাপতি ইমরান চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক টিকলু কুমার দে’র নেতৃত্বে শহিদ মিনারে শ্রদ্ধা জানানো হয়। দক্ষিণ জেলা সিপিবি বোয়ালখালী উপজেলা সদরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছে।

বোধন আবৃত্তি পরিষদ, প্রমা আবৃত্তি সংগঠন, খেলাঘর চট্টগ্রাম মহানগরসহ আরও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন শহিদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়। ‘রবিন দে সঙ্গীত বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে চন্দন দাশ, প্রবাল দে, বিধান বিশ্বাস, শীলা দাশগুপ্তা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। পুষ্পস্তবক অর্পণের পর সংক্ষিপ্ত জমায়েতে মুক্তিযুদ্ধের চার মূলনীতির ভিত্তিতে দেশ পরিচালনা, বাহাত্তরের সংবিধান পুনঃপ্রতিষ্ঠা, সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান প্রতিহত করা এবং একাত্তরের মানবতা বিরোধীদের অসমাপ্ত বিচার দ্রুত সম্পন্ন করার দাবি জানানো হয়।

এদিকে, স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙর অবস্থায় থাকা বিদেশি বিভিন্ন জাহাজের নাবিকদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন বন্দরের কর্মকর্তারা। এ সময় বন্দর কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে ফুল ও উপহার সামগ্রী তাদের দেওয়া হয়।

সকালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. শিরীণ আখতার ক্যাম্পাসে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এ সময় উপ-উপাচার্য বেনু কুমার দে, রেজিস্ট্রার, সিন্ডিকেট সদস্য, প্রক্টর, সহকারী প্রক্টর, শিক্ষক সমিতির কর্মকর্তারা, ডিন, বিভিন্ন হলের প্রভোস্টরা উপাচার্যের সঙ্গে ছিলেন। এরপর অফিসার সমিতি, কর্মচারী সমিতি, কর্মচারী ইউনিয়ন, সাংবাদিক সমিতি, বঙ্গবন্ধু পরিষদ শহিদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে।

বেসরকারি প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির উদ্যোগে নগরীর জিইসি মোড়ে ক্যাম্পাসের শহিদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এ সময় উপাচার্য ড. অনুপম সেন, উপ-উপাচার্য কাজী শামীম সুলতানা ও ট্রেজারার একেএম তফজল হক, রেজিস্ট্রার খুরশিদুর রহমানসহ শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারিরা ছিলেন। প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটির পক্ষ থেকেও শ্রদ্ধা জানানো হয়।

পুষ্পস্তবক অর্পণের পর সমবেতদের উদ্দেশে অনুপম সেন বলেন, ‘বাংলা ভাষাভাষি বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চেই বাঙালি প্রথম স্বাধীনতা অর্জন করে। ১৯০ বছরের ব্রিটিশ শাসনের অবসানের পর পূর্ব বাংলা আবারও পশ্চিম পাকিস্তানের ঔপনিবেশিক শাসনের শৃঙ্খলে আবদ্ধ হয়েছিল। এই পরাধীন বাঙালিকে অর্থনৈতিক মুক্তি দেওয়ার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৬ সালে ৬ দফা ঘোষণা করেন। এর পথ ধরে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে সূচিত হয় মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন স্বাধীনতা। ২৬ মার্চকে বাঙালি জাতির জীবনে সর্বোচ্চ প্রাপ্তির দিন।’

এ সময় প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির প্রকৌশল ও বিজ্ঞান অনুষদের ডিন তৌফিক সাঈদ, ব্যবসা-শিক্ষা অনুষদের সহকারী ডিন এম মঈনুল হক, স্থাপত্য বিভাগের চেয়ারম্যান স্থপতি সোহেল এম. শাকুর, গণিত বিভাগের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইফতেখার মনির, ইংরেজি বিভাগের চেয়ারম্যান সাদাত জামান খান, তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের চেয়ারম্যান টুটন চন্দ্র মল্লিক, আইন বিভাগের চেয়ারম্যান তানজিনা আলম চৌধুরী, জনস্বাস্থ্য বিভাগের চেয়ারম্যান মো. জাহেদুল ইসলাম, ফ্যাশন ডিজাইন অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান সঞ্জয় কুমার দাশ, প্রক্টর আহমদ রাজীব চৌধুরী ও ডেপুটি লাইব্রেরিয়ান কাউছার আলম উপস্থিত ছিলেন।

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (চুয়েট) শহিদ মিনারে সকাল সাড়ে ৮টায় আনসার বাহিনীর কুচকাওয়াজ ও জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। এর পর ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম ও রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ রফিকুল আলম। এছাড়া বিভিন্ন অনুষদের ডিন, ইনস্টিটিউটের পরিচালক, বঙ্গবন্ধু পরিষদ এবং বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। এরপর ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক নেতৃত্ব এবং দেশের উন্নয়ন’ শীর্ষক এক আলোচনা সভা হয়।

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

চট্টগ্রাম টপ নিউজ শ্রদ্ধাবনত জাতি


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর