‘প্রক্টরকে না সরালে চবি উপাচার্যের পদত্যাগের আন্দোলন’
৮ এপ্রিল ২০২৩ ২১:৩১
চট্টগ্রাম ব্যুরো: অনিয়ম-দুর্নীতি, জামায়াত-শিবিরকে পৃষ্ঠপোষকতাসহ নানা বিতর্কের মধ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. শিরীণ আখতারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর হিসেবে সদ্য নিয়োগ পাওয়া নুরুল আজিম শিকদারকে সাবেক শিবিরকর্মী দাবি করে তাকে অবিলম্বে অপসারণের দাবি জানিয়েছেন তারা। অন্যথায় ঈদের পর উপাচার্যের বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।
শনিবার (৮ এপ্রিল) বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রগতিশীল ছাত্র-শিক্ষক সমাজ ও চবি ছাত্রলীগের সাবেক নেতৃবৃন্দ’ ব্যানারে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে সভাপতির বক্তব্যে চবি ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহবুব এলাহী বলেন, ‘২০০১ সালে বর্তমান প্রক্টর নুরুল আজিম শিকদার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। তিনি আমার এক বছরের জুনিয়র ছিলেন। সেসময় বিজ্ঞান অনুষদে ইসলামী ছাত্রশিবির সম্মিলিতভাবে একটি হামলা পরিচালনা করে, যে হামলার নেতৃত্বে ছিল আজকের নুরুল আজিম শিকদার। সেই হামলায় আমাদের একরাম হোসেন রাসেল যিনি তৎকালীন বিজ্ঞান অনুষদ ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন, যিনি পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি হয়েছিলেন, তাকে গুরুতর আহত করা হয়।’
প্রক্টরকে অবিলম্বে অপসারণের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ঈদের আগেই এই প্রক্টরকে অপসারণ করতে হবে। স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানের ব্যানারে যারা জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু কথাটা লিখেনি, তাদের অবিলম্বে শাস্তি দিতে হবে। না হলে ঈদের পর আমরা দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলব। তখন আপনি (ভিসি) পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরব না।’
সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল হাসান বলেন, ‘আওয়ামী লীগের আনুকূল্যে ভিসি হয়ে তিনি এমন একজনকে প্রক্টরকে নিয়োগ দিয়েছেন যিনি প্রত্যক্ষভাবে জামাত-শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তার প্রমাণ আমরা দেখেছি ২৬ মার্চের অনুষ্ঠানে। ব্যানারে জয় বাংলা নেই , জয় বঙ্গবন্ধু নেই, এমনকি বঙ্গবন্ধুর ছবি পর্যন্ত নেই। বোঝা যায়, জামাত-শিবির চক্র আবার সক্রিয় হয়েছে। ভিসি মহোদয়কে বলব, আপনার ভুল সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করুন, জামাত শিবিরের প্রক্টরকে প্রত্যাহার করুন। না হলে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা ছাড়া কোনো পথ থাকবে না।’
সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুদ্দিন মাহমুদ সোহাগ বলেন ‘মানববন্ধন করার কথা ছিল বর্তমান ছাত্রলীগের। কিন্তু তাদের নীরবতা আমাদের বিস্মিত করেছে। আমাদের ত্যাগ, সংগ্রাম ও রক্তের বিনিময়ে যে মৌলবাদমুক্ত ক্যাম্পাস গড়েছি, আজ আবার সেই ক্যাম্পাসে হায়েনাদের বিচরণ লক্ষ্য করছি। এই দুর্নীতিবাজ ভিসি শুধু নিয়োগ বাণিজ্যই করেননি, এই মৌলবাদী হায়েনাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।’
সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মীর্জা টিপু বলেন, ‘প্রশাসনের কর্মচারী থেকে শিক্ষক নিয়োগ- প্রত্যেক জায়গায় দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়া হচ্ছে। প্রত্যেক জায়গায় জামাত-শিবিরের কর্মীদের পদায়ন করা হচ্ছে। আমরা এর অবসান চাই। আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে।’
মানববন্ধনের সঞ্চালক সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বী সুজন বলেন, ‘আমরা ১৯৭১ সালের পরাজিত অপশক্তি জামাতের পুনরুত্থান, আস্ফালন মেনে নেব না। যোগ্যদের যদি সঠিক জায়গায় পদায়ন না হয়, তার খেসারত দিতে হয়। এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ আমাদের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য।’
উল্লেখ্য, উপাচার্যের সঙ্গে বিরোধের জেরে গত মার্চে প্রক্টর রবিউল ইসলাম ভূঁইয়াসহ ১৯ শিক্ষক প্রশাসনিক বিভিন্ন পদ থেকে পদত্যাগ করেন। শিক্ষকদের দাবিদাওয়া পূরণে অনীহা, তুচ্ছতাচ্ছিল্য ও অপমান করা, জ্যেষ্ঠ্যতা লঙ্ঘন, প্রশাসনিক পদে থাকা শিক্ষকদের মতামতকে প্রাধান্য না দেয়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম পরিচালনায় পরিবারের সদস্যের অযাচিত হস্তক্ষেপ, একজন সিন্ডিকেট সদস্য ও দফতরের এক কর্মকর্তার প্রভাব বিস্তার, নিয়োগে অনিয়ম-দুর্নীতি, আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের মধ্যে বিভক্তি এনে নিজস্ব বলয় তৈরির চেষ্টা এবং বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের প্রাধান্য দেয়া– এসব বিষয়ে মতবিরোধের জেরে শিক্ষকদের সঙ্গে উপাচার্যের দূরত্ব তৈরি হয়েছিল।
গত ১২ মার্চ নতুন প্রক্টর হিসেবে নুরুল আজিম শিকদারকে নিয়োগ দেন উপাচার্য শিরীণ আখতার। নিয়োগের পর থেকেই তাকে নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।
সারাবাংলা/এফএইচ/আইই