Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শিগগিরই গ্রিন সিগন্যাল পাবেন জরিপে এগিয়ে থাকারা

নৃপেন রায়, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২৬ এপ্রিল ২০২৩ ২৩:৩৬

ঢাকা: ত্রিদেশীয় সফরে রয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশে ফিরেই তিনি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ নিয়ে বসবেন বলে জানা গেছে। দলটির নীতি নির্ধারকরা জানিয়েছেন, টানা মেয়াদে সরকার গঠনের লক্ষ্যে সাংগঠনিক রোডম্যাপ ধরে ভোটের মাঠে সক্রিয় হবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য মাঠ পর্যায়ে জনপ্রিয়রাই নৌকার মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে থাকবেন। কপাল পুড়বে বিতর্কিত ও অজনপ্রিয়দের। পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ডামাডোলের মধ্যেই জনমত জরিপে এগিয়ে থাকা অনেককে গ্রিন সিগন্যাল দেওয়ার কাজ শুরু করতে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। সারাবাংলাকে এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন দলটির নেতারা।

বিজ্ঞাপন

চলতি বছর শেষে ২০২৪ সালের শুরুতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তাই আগামী পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ডামাডোলে দলীয় জনপ্রিয়তা পরখ করে দেখারও সময় এসেছে। এর পাশাপাশি জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে তৃণমূলে দলীয় কোন্দল নিরসনের উপর জোর দিয়ে জনমত জরিপে এগিয়ে থাকা প্রায় দুই শতাধিক এমপি প্রার্থীকে আগাম গ্রিন সিগন্যাল দিতে পারেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

দলটির নেতারা জানান, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে আমাদের হাতে সময় একদম কম। নির্বাচনের আর মাত্র আট মাস বাকি। সেই হিসাবে আগামী কোরবানির ঈদের পর তথা সেপ্টেম্বরের আগেই জাতীয় নির্বাচনের বাতাস বইতে শুরু করবে। এছাড়া সরকারবিরোধী আন্দোলনের নামে বিএনপিসহ তার শরিক জোটের দলগুলো রাজনৈতিক অঙ্গনে জলঘোলা করার ষড়যন্ত্রে মেতে উঠবে। দেশীয় শক্তির সঙ্গে হাত মিলিয়ে বিদেশি শক্তিগুলোও নির্বাচন ভণ্ডুলে নানামুখী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হবে। তাই এবার টানা মেয়াদে ক্ষমতাসীন দলটি ৩০০ আসনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে জনমত জরিপে এগিয়ে থাকাদের আগাম গ্রিন সিগন্যাল দিতে পারেন। এলক্ষ্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি ইতোমধ্যে গণভবনে তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শুরু করেছেন।

চলতি বছরের শুরুতে সংসদীয় দলের সভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেছেন, ‘এমপিদের আমলনামা দেখেই আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া হবে। জনগণের সঙ্গে যাদের সুসম্পর্ক রয়েছে, তাদের সুখে-দুঃখে পাশে দাঁড়ান- তারা নির্বাচনে মনোনয়ন পাবেন। জনবিচ্ছিন্নদের মনোনয়ন দেওয়া হবে না।’

তিনি ওই সময় আরও বলেন, ‘আমার কাছে জরিপ রিপোর্ট রয়েছে। রিপোর্ট অনুযায়ী যারা ভালো কাজ করেন, জনগণের কাছে যান, আওয়ামী লীগের উন্নয়নের কথা বলেন, ভোট চান, জনগণের সুযোগ-সুবিধা দেখেন এবং জনগণ যাদের চায়, তাদের মনোনয়ন দেওয়া হবে।’

বিজ্ঞাপন

এছাড়াও, আওয়ামী লীগ সভাপতি ব্যক্তিগতভাবে সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জোর প্রচার-প্রচারণা চালানোরও পরামর্শ দিয়েছেন। ঈদুল ফিতরের আগে আওয়ামী যুবলীগের শীর্ষ এক নেতাকে ফোন করে তিনি এমন পরামর্শ দেন।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক সারাবাংলাকে বলেন, ‘দলগতভাবে আমাদের হাতে সময় কম। এই কম সময়ের মধ্যেই অনেক বেশি কাজ করতে হবে। সামনে বাংলাদেশের পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচন। এই নির্বাচনটি জাতীয় নির্বাচনের প্রায় কাছাকাছি সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সেজন্য সিটি নির্বাচনকে আমাদের গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘সিটি নির্বাচন নিয়ে সংগঠনের মধ্যে কিছু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। সেগুলো সমাধানের জন্য পার্টির সভাপতি জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাদের তাগিদ দিয়েছেন। তিনি ইতোমধ্যে বৈঠক (গণভবনে) শুরু করেছেন। তিনি তো বৈঠক করবেনই। তারপর আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো- নেত্রী যে দৃষ্টিভঙ্গি রাখেন সেটাকে মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন করা।’

জাহাঙ্গীর কবির নানক আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটি মাল্টিক্লাস পার্টি। এর ভেতরে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, গ্রুপিং নেই। এক নেতা শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই সমস্ত পার্টি এককেন্দ্রিক। আমরা যারা রয়েছি, আমাদের দায়িত্ব হলো- কঠিনভাবে মাননীয় নেত্রীকে অবজারভ করা, খেয়াল করা এবং তিনি কি চান সেটা বাস্তবায়ন করা। সেই বিষয়গুলোকে নিয়ে প্রচণ্ড ব্যস্ত থাকতে হবে।’

এমপি প্রার্থীদের কবে নাগাদ গ্রিন সিগন্যাল দেওয়া হতে পারে? এমন প্রশ্নের জবাবে নানক বলেন, ‘আমাকে তো নেত্রী সুনির্দিষ্টভাবে বলেননি। কিন্তু যেহেতু আমি নেত্রীর কর্মী, সে কারণে তার বডি ল্যাংগুয়েজ, ভয়েস ও চোখের ল্যাংগুয়েজ দেখেই অনেক কিছু বুঝে নিতে হয়। আমি মনে করি, নেত্রী ত্রিদেশীয় সফর শেষ করে এসেই গ্রিন সিগন্যাল দেওয়া শুরু করবেন।’

দলীয় মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় কাদের কপাল পুড়তে পারে? এম প্রশ্নের উত্তরে সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সম্প্রতি সিটি করপোরেশনের মনোনয়ন দেখলেই বোঝা যায় নেত্রী সব খবর রাখেন। তিনি যাচাই-বাছাই করেন। যারা বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকাণ্ড করে অভিযুক্ত এবং অজনপ্রিয় তারা মনোনয়ন পাবে না। নেত্রী চুলচেরা বিশ্লেষণ করেই মনোনয়ন দেবেন। কাজেই যিনি এমপি আছেন তিনিই যে মনোনয়ন পাবেন, সেটি ভাবা ঠিক নয়।’

আগামী নির্বাচনকেন্দ্রিক পরিকল্পনা নিয়ে দলটির দফতর সম্পাদক এবং প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী বিপ্লব বড়ুয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘সামনেই পাঁচ সিটি করপোরেশেন নির্বাচন। জাতীয় নির্বাচনেরও দেরি নেই। আমরা দ্রুতই নির্বাচন উপলক্ষে একধরনের সাংগঠনিক রোডম্যাপ তৈরি করব। আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে- আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনের বর্ধিত সভা আহ্বান করে নির্বাচনি কৌশল, প্রচার-প্রচারণার ও বিভিন্ন কর্মকাণ্ড নির্ধারণ করা।’

তিনি বলেন, ‘এই কাজগুলো আমরা ধারাবাহিকভাবে করব। কারণ, ঈদুল ফিতরের পর পর পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচন। এই নির্বাচন আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এবং এর পরেই আমাদের জাতীয় নির্বাচন। পার্টির প্রচার-প্রচারণা, সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি, নির্বাচন উপযোগী কর্মী তৈরি- সবকিছু মিলিয়ে অবশ্যই আমাদের সাংগঠনিক ব্যস্ততা বাড়বে।’

প্রসঙ্গত, তফসিল অনুযায়ী গাজীপুর সিটিতে ২৫ মে, খুলনা ও বরিশাল সিটিতে ১২ জুন এবং সিলেট ও রাজশাহী সিটিতে ২১ জুন ভোট হবে। পাঁচ সিটি নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নে চমক দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। খুলনায় তালুকদার আবদুল খালেক ও রাজশাহীতে খায়রুজ্জামান লিটন বাদে তিন সিটিতেই প্রার্থী মনোনয়ন নতুনদের গুরুত্ব দিয়েছে আওয়ামী লীগ।

সিলেটে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, বরিশালে আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাত, গাজীপুরে আজমত উল্লা খানকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। বিশেষ করে বরিশাল সিটিতে বর্তমান মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহকে বাদ দিয়ে তার আপন চাচা আবুল খায়ের আবদুল্লাহকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।

সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম

আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়ন শেখ হাসিনা সভাপতি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর