।। ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট।।
রাজশাহী: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক রেজাউল করিম সিদ্দিকী হত্যা মামলায় দুই জেএমবি সদস্যের ফাঁসি ও তিন জনের যাবজ্জীবনের আদেশ দিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার (৮ মে) দুপুর ১টার দিকে রাজশাহী দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শিরীন কবিতা এ রায় দেন।
ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত দু’জন হলেন— রাবি ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী শরিফুল ইসলাম ও বগুড়ার শিবগঞ্জের মাসকাওয়াত হাসান ওরফে আব্দুল্লাহ ওরফে সাকিব। তারা দু’জনেই নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবির সদস্য। আদালতের রায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ পাওয়া তিন জন হলেন— নীলফামারীর মিয়াপাড়ার রহমত উল্লাহ, রাজশাহী মহানগরীর নারিকেলবাড়িয়া এলাকার আবদুস সাত্তার ও তার ছেলে রিপন আলী।
রায় ঘোষণার সময় পাঁচ আসামির মধ্যে আদালতে উপস্থিত ছিলেন চার জন। শরিফুল ইসলাম ঘটনার পর থেকে পলাতক আছেন। এই হত্যা মামলার আট আসামির মধ্যে বাকি তিন জন খায়রুল ইসলাম বাঁধন, নজরুল ইসলাম ওরফে হাসান ওরফে বাইক হাসান ও তারেক হাসান ওরফে নিলু ওরফে ওসমান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন।
আদালতের এই রায়ে নিহতের পরিবারের সদস্যরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তারা আসাদিদের দ্রুত সাজা কার্যকরের দাবি জানিয়েছেন।
অধ্যাপক রেজাউলের মেয়ে রেজওয়ানা শতভী বলেন, ‘আদালত যে রায় দিয়েছেন, তাতে আমরা সন্তোষ প্রকাশ করছি। তবে আমরা দ্রুত রায়ের বাস্তবায়ন দেখতে চাই। রায় বাস্তবায়নে বিলম্ব হয়ে যেন শাস্তির পরিমাণ কমে না যায়।’ তবে মামলার প্রধান আসামি ও হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী শরিফুল এখনও গ্রেফতার না হওয়ায় হতাশাও জানান তিনি। শরিফুলকে গ্রেফতার করে তার দ্রুত বিচারের দাবি জানান তিনি।
এই মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট এন্তাজুল হক বাবু বলেন, ‘অধ্যাপক রেজাউল অসম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার চিন্তাভাবনা করতেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি তার এলাকায় তিনি সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতেন । তিনি মুক্তমনা হওয়ায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে তার গ্রহণযোগ্যতা ছিল।’
মামলার নথি থেকে জানা যায়, ২০১৬ সালের ২৩ এপ্রিল সকালে নগরীর শালবাগান এলাকায় নিজের বাড়ি থেকে ৫০ গজ দূরে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করা হয় অধ্যাপক ড. এএফএম রেজাউল করিম সিদ্দিকীকে। পরদিন নিহতের ছেলে রিয়াসাত ইমতিয়াজ সৌরভ অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে বোয়ালিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর আট জনকে আসামি করে আদালতে মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রাজশাহী মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পরিদর্শক রেজাউস সাদিক।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এন্তাজুল হক বাবু জানান, হত্যা মামলাটিতে মোট ৩২ জন সাক্ষী ছিলেন। তবে আদালত ২৬ জনের সাক্ষ্য নিয়েছেন। ২০১৭ সালের ১২ সেপ্টেম্বর থেকে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছিল। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে গত ৯ এপ্রিল থেকে রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু হয়। ১১ এপ্রিল যুক্তিতর্ক শেষ হলে রাজশাহীর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শিরীন কবিতা আখতার রায়ের জন্য ৮ মে দিন ঠিক করেন।
এই মামলার প্রধান আসামি ও অধ্যাপক রেজাউল হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী শরিফুল ছিলেন অধ্যাপক রেজাউলের ছাত্র। তার গ্রামের বাড়ি রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায়। অধ্যাপক রেজাউল করিমের গ্রামের বাড়িও বাগমারায়। তাই তাদের মধ্যে আগে থেকেই পরিচয় ছিল। এই হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই শরিফুল পলাতক রয়েছেন।
তবে রাবি শিক্ষক রেজাউল করিম হত্যার পর ভারতের পশ্চিমবঙ্গে আটক এক আইএস সদস্যের সঙ্গে শরিফুলের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছিল ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ)। তাই শরিফুল এখনও ভারতেই আত্মগোপন করে আছেন বলে ধারণা করছে রাজশাহীর পুলিশ।
শরিফুলকে ধরিয়ে দিতে রাজশাহীর পুলিশ (আরএমপি) দুই লাখ টাকা পুরস্কারও ঘোষণা করেছিল। কিন্তু আজও তার হদিস মেলেনি। তাকে পলাতক দেখিয়েই মঙ্গলবার রায় ঘোষণা করা হলো।
সারাবাংলা/টিএম/টিআর
** দ্রুত খবর জানতে ও পেতে সারাবাংলার ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে রাখুন: Sarabangla/Facebook