Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিমান যেন সোনার খনি!

শেখ জাহিদুজ্জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২০ মে ২০২৩ ১৪:৪৯

ঢাকা: হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের রয়েছে এক লজ্জাজনক ‘খ্যাতি’। প্রায়ই বাংলাদেশ বিমানের  উড়োজাহাজ অবৈধ সোনা নিয়ে অবতরণ করে এখানে। একাধিকবার তল্লাশির মাধ্যমে কাস্টমস, শুল্ক গোয়েন্দা, এপিবিএনসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা বিমানবন্দরে অবতরণ করা উড়োজাহাজগুলোর ভেতরের অদ্ভূত অদ্ভূত সব জায়গা থেকে উদ্ধার করেছে সোনা। যেন বিমান হয়ে উঠেছে সোনার খনি!

সারাবাংলার অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, ২০১৯ সাল থেকে চলতি বছর পর্যন্ত বাংলাদেশ বিমানের বিভিন্ন জায়গা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে সোনার চালান।

গত বৃহস্পতিবারও মাস্কাট থেকে আসা বিজি-১২২ ফ্লাইটে অভিযান চালায় ঢাকা কাস্টম হাউস। সেই অভিযানে বিমানের কার্গো হোল থেকে প্রায় ২৪ কেজি সোনা তথা ২০৪টি সোনার বার উদ্ধার করে কাস্টম। যার বাজার মূল্য প্রায় ২৫ কোটি টাকা। তবে এই সোনা পরিত্যাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।

অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, চলতি বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের টয়লেটের মিররের পিছন থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় ৪০টি সোনার বার উদ্ধার করে ঢাকা কাস্টম হাউস। যার বাজার মূল্য ছিলো প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা। গত বছরের ১২ ডিসেম্বর সিঙ্গাপুর থেকে আসা বাংলাদেশ বিমানের একটি উড়োজাহাজের ভেতর থেকে ১২ কেজি সোনা উদ্ধার করে শুল্ক গোয়েন্দা। যার বাজার মূল্য ছিলো ৮ কোটি টাকা। গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর বিমানের দু’টি সিটের নিচের পাইপের ভিতর থেকে পরিত্যাক্ত অবস্থায় ১৬টি সোনার বার উদ্ধার করে ঢাকা কাস্টমস হাউস। ২০২২ সালের ২৪ এপ্রিল বাংলাদেশ বিমানের ইঞ্জিনের ভেতর থেকে ১০ কেজি ২০৮ গ্রাম সোনা (৮৮বার) উদ্ধার করেছে শুল্ক গোয়েন্দা। যার বাজার মূল্য ছিলো প্রায় ১২ কোটি টাকা।

আরও দেখা যায়, ২০২১ সালের ৬ অক্টোবর দুবাই ফেরত বিমানের শৌচাগারে টিস্যু পেপারবক্স থেকে প্রায় ১৪ কেজি সোনা উদ্ধার করে শুল্ক গোয়েন্দা। এছাড়া ২০২১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি ১৭ কেজির বেশি ওজনের ১৫০টি সোনার বার উদ্ধার করা হয় আবুধাবি থেকে আসা বিমান বাংলাদেশ ফ্লাইট থেকে। যার বাজার মূল্য ছিলো তখন প্রায় ১০ কোটি টাকা। অপরদিকে ২০২১ সালের ৩১ মার্চ ৩৯টি সোনার বার উদ্ধার করা হয় বিমান বাংলাদেশ ফ্লাইট থেকে যার বাজার মূল্য ছিলো ৩ কোটি ১৬ লাখ টাকা। একইদিনে, ৩ কেজি ওজনের ২ কোটি মূল্যের ২৮টি সোনার বার উদ্ধার করা হয় দুবাই থেকে আসা বিমান বাংলাদেশের আরেকটি ফ্লাইট থেকে।

এর আগে, ২০২০ সালের ৬ নভেম্বর সোনা পাচারের জন্য টয়লেট পেপার বক্সও ব্যবহৃত হয়েছিল। সেদিন বিমানের ফ্লাইট বিজি২৪৮-এর একটি ওয়াশরুমের টয়লেট পেপার বক্সের নিচ থেকে ৪.৭৩ কোটি টাকা মূল্যের ৬৮টি সোনার বার উদ্ধার করা হয়। তারও আগে ২০১৯ সালের ২ জুলাই কাস্টমস কর্মকর্তারা বিমানের ফ্লাইট বিজি১২২-এ তল্লাশি চালান এবং ১১০টি সোনার বারের সন্ধান পান। আর এসব অভিযান পরিচালনা করা হয় বিমান থেকে যাত্রী নেমে যাওয়ার পর।

হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরে দায়িত্বরত বিভিন্ন সংস্থা এবং গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, সোনা চোরাচালানের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে বিমানের কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ত পাওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে মামলাও করা হয়েছে।

তবে বিমান বলছে ভিন্ন কথা, তাদের দাবি বিমান শুধু বাংলাদেশে নয়, বিভিন্ন দেশে যায়। আর সেসব দেশে গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ের দায়িত্বে বিমান নয়, সেসব দেশের কোম্পানি থাকে। ফলে সেইসব দেশ থেকেও কিছু হতে পারে।

কাস্টম গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের সহকারী পরিচালক মনিরুজ্জামান (শাহজালাল বিমানবন্দর) সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা তথ্যের ওপর ভিত্তি করে অভিযান পরিচালনা করি। সেই সব তথ্যে আমরা বিভিন্ন সময়ে বিমানের ভেতর থেকে যেমন আসন বা বিভিন্ন যন্ত্রাংশের মধ্য থেকে সোনা উদ্ধার করেছি। বিভিন্ন সময়ে সোনা চোরাচালানে কারণে কাস্টম গোয়েন্দা মামলাও করেছে।’

ঢাকা কাস্টম হাউসের উপ-কমিশনার মোকাদ্দেস হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘যারা সোনা চোরাচালানে সম্পৃক্ত তারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে থাকে। বিমানের বডিতে সোনা পাওয়া গেলে ধারণা করা হয়ে থাকে এখানে বিমানে কেউ না কেউ জড়িত থাকতে পারে। কারণ বিমানের যন্ত্রাংশের মধ্যেও সোনা পাওয়া যায়, সেটা তো কেউ না কেউ রাখে সেখানে সুতরাং জড়িত থাকার সম্ভাবনা থাকে। তবে আমরা সোনা উদ্ধারের পর সেটা বিভাগীয় তদন্ত হয়ে থাকে এবং মামলার বিষয়ে যায়।’

বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জিয়াউল হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন সময়ে বিমানের মধ্য থেকে, যাত্রী, বিমানের আসন বা বিভিন্ন যন্ত্রাংশের মধ্য থেকে সোনা উদ্ধার করে থাকি। বিমানের বডি বা যন্ত্রাংশের মধ্য থেকে সোনা পাওয়া গেলে সেখানে বিমানের কর্মকর্তারা জড়িত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।’

তবে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও শফিউল আজিম সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিমান শুধু বাংলাদেশে নয় বিভিন্ন দেশে যায়। যখন যে দেশে যায় তখন সেই দেশ গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ের দায়িত্বে থাকে। সেই সব দেশ থেকে কিছু ঘটলেও ঘটতে পারে। তবে আমি বলতে পারি সোনা চোরাচালানে বাংলাদেশ বিমানের কেউ জড়িত নেই। যদি কেউ জড়িত থাকে তাহলে তার চাকরি থাকবে না। সরাসরি চাকরি চলে যাবে। কিন্তু যারা চোরাচালানের চক্রের সঙ্গে জড়িত তারা বিভিন্ন জায়গাতে আছে। আমরা এই সব বিষয়গুলোতে নজর রেখেছি।’

সম্প্রতি বিমানের কার্গো হোল থেকে ২৪ কেজির মতো সোনা উদ্ধার হয়, এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা বিষয়টি তদন্ত করবো। তদন্তে বিমানের কারও সম্পৃক্ততা পেলে চাকরি থাকবে না। আমি কোনো অন্যায় প্রশ্রয় দিবো না।’

সারাবাংলা/এসজে/এমও

বাংলাদেশ বিমান শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সোনার খনি


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর