‘সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা অর্জনের নতুন নির্দেশনা নেই বাজেটে’
১ জুন ২০২৩ ২০:৩২
ঢাকা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ বলেছেন, মোট বরাদ্দের নিরিখে গত অর্থবছরে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। এবার তা হয়েছে ৫ শতাংশ। অর্থাৎ এবার মোট বাজেটের নিরিখে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ দশমিক ৪ শতাংশ কমেছে। ফলে এই বাজেট সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা অর্জনে জন্য নতুন কোনো দিকনির্দেশনা দেখাতে পারেনি।
বৃহস্পতিবার (১ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের বাজেট বক্তব্যে এসব তথ্য দেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
এ দিন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ খাতে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। যা গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা ছিল। এ ছাড়া স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ বিভাগে আগামী অর্থবছরে বরাদ্দের পরিমাণ ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা, যা সংশোধিত ২০২২-২৩ বাজেটে ছিল ৬ হাজার ৬৯৭ কোটি টাকা।
বাজেট প্রস্তাবনায় আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘চিকিৎসা খরচ কমাতে ওষুধ, চিকিৎসা সামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।’
এ ছাড়া রেয়াতি সুবিধা দেওয়া হয়েছে ইনজেকশনের আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের প্রধান কাঁচামাল সিলিকন টিউব ও ডায়াবেটিক ব্যবস্থাপনার ওষুধ উৎপাদনে বিশেষ কিছু কাঁচামাল আমদানিতে।
প্রস্তাবিত বাজেটে বিষয়ে মন্তব্য জানাতে গিয়ে অধ্যাপক আবদুল হামিদ বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেট কমেছে মূলত উন্নয়ন ব্যয়ের ক্ষেত্রে। প্রস্তাবিত বাজেটে গত বছরের তুলনায় উন্নয়ন ব্যয় ১৭ শতাংশ কম প্রস্তাব করা হয়েছে। এই বাজেট তাই সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা অর্জনে জন্য নতুন কোনো দিকনির্দেশনা দেখাতে পারেনি।’
তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্যে বাজেট কমা-বাড়া নিয়ে মানুষের চিকিৎসা ব্যয় কমবে না। এটি এখন আরও আকাশ ছোঁবে। কারণ, বাজেট যতটা দেওয়া হয় সেটাই ঠিকমতো ব্যবহার করা যাচ্ছে না। ফলে বারবার একটি অংশ ফেরত যাচ্ছে। মানুষকে সেবা দেওয়ার জন্য অনেক কিছুর সুষ্ঠু ও পরিকল্পনা কাঠামো দরকার। কিন্তু সেটি এখন পর্যন্ত গড়ে ওঠেনি।’
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। বিশাল এ বাজেটের ঘাটতি ২ লাখ ৫৭ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা। আর অনুদান ছাড়া ঘাটতির পরিমাণ ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা, যা মোট জিডিপির ৫ দশমিক ২ শতাংশ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশের মানুষের প্রতি অকৃত্রিম ভালবাসা, দায়বদ্ধতা এবং দেশবাসীর অকুণ্ঠ সমর্থনের উদ্ভাসিত আলোয় ২০৪১ সালের মাঝে সম্পূর্ণ ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত জ্ঞানভিত্তিক উন্নত ‘স্মার্ট বাংলাদেশে উন্নীত হওয়ার মাধ্যমে জাতির পিতার অন্তর-মন-প্রোথিত ‘সোনার বাংলা’র স্বপ্ন পূরণের সুবর্ণ রেখাটি বাংলাদেশ স্পর্শ করবে বলে আশাবাদ করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
উন্নয়ন অগ্রযাত্রার দেড় দশক পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অভিমুখে’ শিরোনামে এবারের বাজেটের সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, ডলার সংকটে সৃষ্ট অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবিলায়। এছাড়া দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, ভর্তুকির চাপ সামমলানো এবং রাজস্ব আয় বাড়ানোসহ শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বাজেটে। পাশাপাশি সামাজিক সুরক্ষা কৃষি, খাদ্য, নতুন কর্মসংস্থান সৃজন, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় নিয়ে আসা।
আগামী এক বছর দেশ পরিচালনার সার্বিক আয়-ব্যয়ের হিসাব রয়েছে এই বাজেটে। এটি আওয়ামী লীগ সরকারের ২৩তম ও বাংলাদেশের ৫২তম বাজেট। প্রস্তাবিত বাজেট ২৬ জুন অনুমোদন হবে আর ১ জুলাই থেকে নতুন অর্থবছর শুরু হবে।
সারাবাংলা/এসবি/একে