Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

স্মার্ট বাংলাদেশের বড় চ্যালেঞ্জ স্কিলড ম্যানপাওয়ার: বুয়েট ভিসি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১৬ জুন ২০২৩ ১৮:০৩

ঢাকা: বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) উপাচার্য অধ্যাপক ড. সত্য প্রসাদ মজুমদার বলেছেন, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ স্কিলড ম্যানপাওয়ার (দক্ষ জনসম্পদ)। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে আমাদের স্কিলড ম্যানপাওয়ার তৈরি করতে হবে। এই স্কিলড ম্যানপাওয়ার তৈরি করতে শিক্ষক-গবেষকদের এগিয়ে আসতে হবে।  শিক্ষাখাতে বাজেট আরও বাড়ানো উচিত বলেও এ সময় তিনি মন্তব্য করেন।

বিজ্ঞাপন

শুক্রবার (১৬ জুন) জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম মিলনায়তনে এডুকেশন রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ফোরাম অব বাংলাদেশের (ইআরডিএফবি) আয়োজনে ‘সমৃদ্ধ ও সুষম বাংলাদেশ নির্মাণ: বাজেট ২০২৩-২০২৪’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. সত্য প্রসাদ মজুমদার  এ সব কথা বলেন।

বিজ্ঞাপন

বুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সত্য প্রসাদ মজুমদার বলেন, ‘আমাদের জ্ঞানভিত্তিক কাজ করতে হবে, জ্ঞানী হতে হবে, গবেষণা করতে হবে। আমাদের রফতানি বাড়াতে হলে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। এগ্রিকালচারের প্রবৃদ্ধি বাড়াতে হলে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। আরএমজি (রেডিমেড গার্মেন্ট) সেক্টরে রফতানির জন্য রোবটিক্স ও অটোমেশন লাগবে। শিক্ষা ও গবেষণার মাধ্যমে এসব ক্ষেত্রে উন্নয়ন ঘটাতে হবে। ইন্ডাস্ট্রিতে রোবট বসাতে হলে, রোবট চালনা করতে হলে স্কিলড ম্যানপাওয়ার লাগবে। এখন আমাদের ম্যানপাওয়ার নেই। এটিই এখন আমাদের চ্যালেঞ্জ। আগামীদিনে নতুন প্রযুক্তিতে রোবট চালনা করতে হবে। ড্রোন চালনা করতে হবে। নতুন ধরনের পেশা চলে আসবে, তখন আপনাদের সেই অনুযায়ী স্কিলড ম্যানপাওয়ার তৈরি করতে হবে। সেই দায়িত্ব শিক্ষক ও গবেষকদের।’

অনুষ্ঠানে আগত শিক্ষক ও সুশীল সমাজের একাংশ

অনুষ্ঠানে আগত শিক্ষক ও সুশীল সমাজের একাংশ

বাজেটে শিক্ষাখাতের বরাদ্দ প্রসঙ্গে বুয়েট উপাচার্য বলেন, ‘ডিজিটাল ক্লাসরুম তৈরি করতে হবে। ক্লাসরুম ডিজিটাল না করলে ডিজিটাল বাংলাদেশ কীভাবে হবে? ডিজিটাল ক্লাসরুম, স্মার্ট ক্লাসরুম, স্মার্ট সেমিনার রুম করতে না পারলে, ল্যাবরেটরি ডেভেলপমেন্ট না হলে হাতে-কলমে শিক্ষার ব্যবস্থা করা যাবে না। রিসার্চের জন্য সফটওয়ার ও হার্ডওয়্যার লাগবে— সে জন্য বাজেট বাড়াতে হবে। এ ছাড়া যে বাজেট আছে, সেটিকে সঠিকভাবে ব্যবজার করার চেষ্টা করতে হবে।’

বাজেটের খরচ বিষয়ে অধ্যাপক ড. সত্য প্রসাদ মজুমদার বলেন, ‘আমাদের যথাযথ পিপিআর (পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা) অনুসরণ করে বাজেট খরচ করতে হবে। বাজেটের অর্থ মানে বাংলাদেশের গরিব মানুষের অর্থ।’

বুয়েট উপাচার্য আরও বলেন, ‘আমরা বিদেশ থেকে কনসালটেন্স না এনে, দেশের মধ্যে যে সব কনসালটেন্ট আছে তাদের বেশি বেশি কাজে লাগাতে পারি। আমাদের নিউ টেকনোলজি যেমন- ই-কমার্স, ই-এডুকেশনের সঙ্গে ক্যাশলেস ও পেপারলেস ব্যবস্থা এবং ই-গভর্নিং, ই-ফাইলিং সিস্টেম প্রয়োজন হবে। সেখানে শিক্ষা ও গবেষণাখাতে এডুকেশন রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ফোরামের অনেক ভূমিকা রাখবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’

অনুষ্ঠানে আগত বক্তারা

অনুষ্ঠানে আগত বক্তারা

আলোচনা সভায় উদ্বোধনী বক্তব্যে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) উপ-উপাচার্য ও ইআরডিএফবি’র সিনিয়র সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আব্দুল জব্বার খান বলেন, ‘বাংলাদেশের শিক্ষকরা বিশেষ করে যারা বাংলাদেশের সংবিধানের প্রতি অনুগত এবং ইতিবাচক বাংলাদেশকে অন্তরে ধারণ করেন তাদের জন্যই এই প্লাটফর্ম। ইআরডিএফবি অদম্য বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার বাংলাদেশের কথা বলে, অসম্প্রদায়িক বাংলাদেশের কথা বলে। ইআরডিএফবি বাঙালি সংস্কৃতির কথা বলে; ইআরডিএফবি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যে কোনো অপপ্রচারের বুদ্ধিবৃত্তিক জবাব দেয়। ইআরডিএফবি চতুর্থ শিল্প বিপ্লব ও স্মার্ট বাংলাদশের এগিয়ে যাওয়ার পথের পথ দেখায়।’

আলোচনা সভার প্রধান আলোচক বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান বলেন, ‘একটি কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে আমরা যাচ্ছি। জাতি হিসেবে আমাদের সামনে একবার ১৯৭১ সাল এসেছিল। এবার অর্থনৈতিকভাবে সেরকম একটি সময়ের মধ্যে আমরা আছি। এটি সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে। তবে এবারের চ্যালেঞ্জের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন ভূ-তাত্ত্বিক বাস্তবতা এবং সারা পৃথিবীর টালমাটাল জিও-পলিটিক্যাল টেনশন। এই জায়গাটাতে আমাদের নিজস্ব অবস্থান, নিজেদের শক্তি, আমরা যে ধীরে ধীরে একটি শক্ত পাটাতনের ওপর আমাদের বাংলাদেশের অর্থনীতিকে দাঁড় করিয়েছি- এই সত্যি কথাটি জনগণকে বলতে হবে। শুধু ভালো কাজ করলেই যথেষ্ট নয়। জনগণ যেন মনে করে, আমরা ভালো কাজ করছি। সুতরাং এক বিষয়গুলো ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য আমার মনে এ ধরনের উদ্যোগ খুবই প্রাসঙ্গিক। এ কারণে আমি উদ্যোক্তাদের বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাই।’

বক্তব্য রাখছেন ড. আতিউর রহমান

বক্তব্য রাখছেন ড. আতিউর রহমান

অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান বলেন, ‘এবারের বাজেট আপৎকালীন বাস্তবতার নিরীখে তৈরি হয়েছে। এটি একটি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা বাজেট। আমাদের শুধু ভূ-তাত্ত্বিক চ্যালেঞ্জ নয়, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকট ও চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। সেই সংকট মোকাবেলার জন্য আমরা কী রকম বাজেট হয়েছে। সেই বিষয়ে আমাদের জানা উচিত।’

‘অস্বীকার করবার উপায় নেই, বাংলাদেশে আমরা কতটা সাফল্য অর্জন করেছি। এর জন্য তিনটি খাত বা শক্তি খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এগুলো হলো কৃষি, রফতানি ও রেমিটেন্স। এই তিন খাত আমাদের শক্তির উৎস এবং আমাদের অর্থনীতিকে শক্ত পাটাতনের ওপর দাঁড় করানোর জন্য এই তিনটি শক্তি কাজ করেছে। গত দেড় দশকে আমরা যে অর্জন করেছি, এই অর্জনের পেছনে এই তিনটি খাতের ভূমিকা এক কথায় অনন্য।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মশিউর রহমান বলেন, ‘আমাদের স্যুট-টাই পরা মানুষ তাদের অর্থনৈতিক পরিবর্তনের জন্য এই রাষ্ট্র নির্মিত হয়নি, এই রাষ্ট্র সেই স্বপ্ন নিয়েও তৈরি হয়নি। সে কারণে পৃথিবীতে যখন যুদ্ধের দামামা বাজে আমরা তখন লাখ লাখ শরণার্থীকে (রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী) আশ্রয় দিই। এ জন্য আমাদের অনেক ঝুঁকি আছে। আমাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি, যুদ্ধের ঝুঁকি, আমাদের অনেক রকমের ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও বিশ্বের কাছে আমরা মডেল হতে পেরেছি। আমরা তখন মানবিকতা সরবরাহ করেছি। অর্থাৎ, প্রতিটি মানুষকে টেনে তোলা… ওই সময়ে মানুষগুলোকে বাংলাদেশ যদি আশ্রয় না দিতো তাহলে লাখো মানুষ মৃত্যুর মুখে পতিত হতো।’

ড. মশিউর রহমান বলেন, ‘আমাদের দুর্বল অর্থনীতির জায়গায় দাঁড়িয়েও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লাখ-লাখ রোহিঙ্গাকে মৃত্যুর মুখ থেকে টেনে তুলে আশ্রয় দিয়েছেন। এমন দৃষ্টান্ত পৃথিবীর খুব কম দেশই দেখাতে পেরেছে। আমরা একটি মানবিক পৃথিবী চাই, এটি আমাদের রাষ্ট্রদর্শন। সুতরাং আমরা মনে করি না, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র কিংবা উন্নত ধনিক রাষ্ট্র হতে চায়। বাংলাদেশ মানবিক, সমৃদ্ধ, সুষম বণ্টনের এক অনন্য- চমৎকার দেশ হতে চায়।’

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ ও ইআরডিএফবির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. বদরুজ্জামান ভূঁইয়া অনুষ্ঠানে সঞ্চালনা করেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সেলিনা আক্তার। এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, এশিয়া প্যাসেফিক ইউনিভার্সিটি, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি, ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটিসহ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকশ শিক্ষক-শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।

২০২২ সালের ১ অক্টোবর এডুকেশন রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ (ইআরডিএফবি) প্রতিষ্ঠিত হয়। শিক্ষা, গবেষণা ও উন্নয়ন নিয়ে সংগঠনটি কাজ করছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে সংগঠনটি এ পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ে পাঁচটি সেমিনার আয়োজন করেছে।

সারাবাংলা/কেআইএফ/একে

জাতীয় প্রেস ক্লাব বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর