জেলেরা হালদা ছাড়ার তিন দিন আগে ডিম ছাড়ল মা মাছ
১৯ জুন ২০২৩ ০৮:০০
চট্টগ্রাম ব্যুরো: প্রায় তিন মাসের অপেক্ষা শেষ হয়েছে চট্টগ্রামের হালদা পাড়ের জেলেদের। অবশেষে প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে পূর্ণাঙ্গভাবে ডিম ছেড়েছে ‘কার্প জাতীয়’ প্রজনন সক্ষম মাছ।
রোববার (১৮ জুন) রাত ১১টার পর হাটহাজারী উপজেলার মদুনাঘাট থেকে রাউজানের রামদাশ মুন্সির ঘাট পর্যন্ত হালদা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে মা মাছ ডিম ছাড়তে শুরু করে।
তিন মাস ধরে জাল-নৌকা নিয়ে নদীতে অপেক্ষার পর ডিম সংগ্রহের উৎসবে মেতে ওঠেন আহরণকারীরা।
নদীতীরে অবস্থান করা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির কো-অর্ডিনেটর অধ্যাপক মো. মনজুরুল কিবরিয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘মার্চের শেষভাগ থেকে ডিমের জন্য নদীতে অপেক্ষা শুরু হয়। এবার ১৫ জুন থেকে আমাবস্যার জো (তিথি) শুরু হয়েছে। ২১ জুন পর্যন্ত জোয়ের মেয়াদ আছে। ডিম না ছাড়লে ২১ জুনের পর জেলেরা নদী থেকে উঠে আসতেন। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম দেখা গেল, সেভাবে লাগাতার বর্ষণ, পাহাড়ি ঢল না থাকার পরও মা মাছ ডিম ছেড়ে দিল। আমরা ডিম সংগ্রহকারী কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের উৎফুল্ল মনে হয়েছে। অর্থাৎ, ডিমের পরিমাণ ভালো।’
মনজুরুল কিবরিয়া জানান, রাতভর ডিম সংগ্রহের পর ভোরের মধ্যেই জেলেরা তীরে ফিরে আসেন। সংগ্রহ করা ডিম কুয়োর মধ্যে রেখে রেণু ফোটানো হবে। রেণু থেকে পোনা হবে।
এর আগে, রোববার (১৮ জুন) দুপুরে এবং গত ১৮ মে দুই দফায় কিছু ডিম ছাড়ে রুই, মৃগেল, কাতলা ও কালিবাউশ—এই চার প্রজাতির প্রজনন সক্ষম মাছ, যা স্থানীয়দের ভাষায় ‘মা মাছ’। সংগ্রহকারীরা সেগুলোকে ‘নমুনা ডিম’ বলেছিলেন।
চট্টগ্রামের রাউজান ও হাটহাজারী উপজেলার প্রায় ৯৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকাজুড়ে হালদা নদী। নদীর যেসব জায়গায় সাধারণত মা মাছ ডিম ছাড়ে, সেখানে প্রায় ৩০০ নৌকায় দেড় হাজার মৎস্যজীবী গত তিন মাস ধরে ডিম সংগ্রহের অপেক্ষায় ছিলেন।
মনজুরুল কিবরিয়া জানান, রোববার রাত থেকে হালদা নদীর হাটহাজারী ও রাউজান অংশের আজিমের ঘাট, অংকুরিঘোনা, কাগতিয়ার মুখ, গড়দুয়ারা নয়াহাট, রামদাশ মুন্সির ঘাট, মাছুয়াঘোনা, সত্তার ঘাট, নাপিতের ঘোনা, কাটাখালী, আমতুয়াসহ বিভিন্ন অংশ থেকে ডিম সংগ্রহ হয়েছে।
প্রতি বছর চৈত্র থেকে আষাঢ় মাসের মধ্যে পূর্ণিমা-অমাবস্যার তিথিতে বজ্রসহ বৃষ্টি হলে পাহাড়ি ঢল নামে হালদা নদীতে। তখন তাপমাত্রা অনুকূলে থাকলে ডিম ছাড়ে কার্প জাতীয় মাছ। সাধারণত মধ্য এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে হালদায় ডিম ছাড়ে মা মাছ। গত পাঁচ বছরের মধ্যে শুধু ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে মা মাছ ডিম ছেড়েছিল। এছাড়া বাকি চার বছরই মে মাসের দ্বিতীয়ার্ধে মা মাছ ডিম ছাড়ে।
হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার কেজি এবং ২০২১ সালে সাড়ে ৮ হাজার কেজি ডিম সংগ্রহ হয়েছিল। ২০২০ সালে হালদা নদীতে রেকর্ড ২৫ হাজার ৫৩৬ কেজি ডিম পাওয়া গিয়েছিল। ২০১৯ সালে প্রায় সাত হাজার কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয়েছিল। ২০১৮ সালে স্থানীয়রা ডিম সংগ্রহ করেছিলেন ২২ হাজার ৬৮০ কেজি।
এর আগে ,২০১৭ সালে মাত্র ১ হাজার ৬৮০ কেজি, ২০১৬ সালে ৭৩৫ (নমুনা ডিম) কেজি, ২০১৫ সালে ২ হাজার ৮০০ কেজি এবং ২০১৪ সালে ১৬ হাজার ৫০০ কেজি ডিম সংগ্রহ করেছিলেন জেলেরা।
সারাবাংলা/আরডি/আইই