রাজধানীতে নৌপথে ঢুকছে কোরবানির গরু
২৭ জুন ২০২৩ ২২:২১
ঢাকা: আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বসানো হয়েছে কোরবানির পশুর হাট। এসব হাটে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আনা হচ্ছে গরু ও ছাগলসহ বিভিন্ন পশু। সড়ক পথের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রাজধানীতে নৌপথেও আসছে এসব কোরবানির পশু।
রাজধানীর প্রধান নদীবন্দর সদরঘাটের আশপাশের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বুড়িগঙ্গা নদীর পোস্তগলা শশ্মান ঘাটের অংশে গরু ভর্তি ট্রলার এসে ভিড় করছে। বেশ কয়েকদিন ধরেই রাজধানীর হাটগুলোর জন্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এই ঘাটে ট্রলারে করে গরু আনা হচ্ছে।
ঢাকার ১৯টি হাটে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে সড়ক পথের পাশাপাশি নৌপথেও সমানতালে ঢাকায় কোরবানির পশু জোগান দেওয়া হচ্ছে। নৌপথে আনা এসব গরু মূলত যাত্রাবাড়ী দনিয়া কলেজ সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, পোস্তগোলা শ্মশান ঘাটসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনাল সংলগ্ন উন্মুক্ত এলাকা, এই তিনটি হাটকে উদ্দেশ্য করে আনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন গরু ব্যবসায়ীরা।
পোস্তগোলা হাটের কর্মী মামুন শেখ বলেন, ‘প্রতিবছরের মতো এবারও পোস্তগোলা ঘাটে ট্রলারে গরু আনা হচ্ছে। এসব গরুর অধিকাংশই পোস্তগোলা হাটে তুলা হয়। বাকিগুলো যাত্রাবাড়ি এমনকি ধোলাইখালেও নেওয়া হয়।’
এসব গরু আনা নেওয়ার কাজে নিয়োজিতরা জানান, সড়ক পথে যানজট, চাঁদাবাজিসহ অন্যান্য ঝামেলা এড়াতে বিকল্প হিসেবে কোরবানির পশু আনার জন্য নৌপথকে বেছে নেওয়া নিয়েছে ব্যবসায়ীরা। এ পথে খরচও কম বলে জানিয়েছেন তারা।
মাদারীপুর থেকে ট্রলারে করে গরু নিয়ে আসা ব্যবসায়ী আশরাফুল তালুকদার জানান, ‘রাস্তায় প্রচুর জ্যাম থাকে। ব্রীজ দিয়ে আসলেও কত সময় লাগবে আসতে তার কোনো ঠিক ঠিকানা নেই। রাস্তায় আসতে দশ জায়গায় টাকা দিতে হয়, না দিলে গাড়ি ছাড়ে না। এসব ঝামেলা এড়াতে ট্রলারে গরু আনলাম। এ পথে মোটামুটি ঝামেলা অনেকটাই কম।’
মূলত দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা গরু ফরিদপুর থেকে ট্রলারে করে রাজধানীতে আনা হয়। ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, পাবনা, মেহেরপুর সহ অন্যান্য জেলার খামারীরা নিজ উদ্যোগে এবং ঈদের সময়ের ব্যবসায়ীরাও এসব এলাকা থেকে গরু সংগ্রহ করে ট্রলারে করে রাজধানীতে আনেন।
ফরিদপুর থেকে দুইটি ট্রলারে গরু এনেছেন আফজাল হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমরা ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙা, ফরিদপুর, রাজবাড়ি থেকে ঈদের একমাস আগে থেকে গরু কিনে এনেছি। ফরিদপুর থেকে গরু নিয়ে এখানে এসেছি। আসতে ৬ ঘণ্টা লাগলেও কোনো সমস্যা হয়নি।’
গরু ব্যবসায়ী ও ট্রলার চালকরা জানান, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ঘাটে দীর্ঘক্ষণ পশু নিয়ে ফেরির জন্য অপেক্ষা করা, পদ্মা সেতুতে পশুবাহী বড় ট্রাক না পাওয়ার কারণে তারা সড়ক পথের বিকল্প হিসেবে নদীপথকে পছন্দ করেন। এছাড়াও ট্রলারে ৪০-৫০ টা পর্যন্তও গরু নেওয়া যায়। এ ছাড়াও ট্রলারে পর্যাপ্ত জায়গা থাকায়, পশুর জন্য নড়াচড়া ও খাবারের পরিবেশ থাকে।
ট্রলারে গরু আনার কারণ জানতে চাইলে ব্যবসায়ী মোস্তাক রানা বলেন, ‘পদ্মা সেতুতে পিকআপ ভাড়া করতে হবে, তার খরচ অনেক। তার থেকে সদরপুর থেকে ট্রলারে গরু নিয়ে চলে এসেছি। এক ট্রলারে আমার কমপক্ষে ৪০-৫০ গরু আনতে পারি। এক পিকআপেতো ১০টা গরুও ধরে না।’
এদিকে কোরবানির সময় নদী এলাকায় চাঁদাবাজি, জোড় করে বিভিন্ন হাটে গরু নামিয়ে নেওয়াসহ অন্যান্য অভিযোগ থাকলেও, এবার সতর্ক ভূমিকায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনি। নৌপথে নিয়মিত টহল ও মাইকিং অব্যাহত রেখেছে কোস্টগার্ড ও নৌ পুলিশ।
এ ব্যাপারে সদরঘাট নৌ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শফিকুর রহমান খান বলেন, ‘আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় আছি। সদরঘাট নৌথানা এলাকায় চারটি টিম সবসময় নদীতে টহল দিচ্ছে, এ ছাড়াও কোস্টগার্ড আছে। এবার এখনও পর্যন্ত, চাঁদাবাজি বা গরু কেড়ে নেওয়া বা জোর করে নামিয়ে নেওয়ার কোনো অভিযোগ আমাদের থানায় আসেনি। এ রকম কোনো অভিযোগ এলে আমরা অবশ্যই সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেব।’
সারাবাংলা/একে