ফ্রান্সে সহিংস বিক্ষোভের আগুন থামছেই না
১ জুলাই ২০২৩ ০৯:২৭
পুলিশের গুলিতে ১৭ বছর বয়সী কিশোর হত্যার প্রতিবাদে ফ্রান্সে সহিংস বিক্ষোভ থামছেই না। চতুর্থ দিনে গড়িয়েছে সহিংসতার আগুন। রাজধানী প্যারিস ছাড়িয়ে ফ্রান্সের প্রধান প্রধান শহরগুলোতে দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষত রাতে ব্যাপক ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাটের ঘটনা ঘটছে। শুক্রবার (৩০ জুন) রাতে ৮৭৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাঁখো এমন দাঙ্গা বন্ধ করায় ভূমিকা রাখতে অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি কিশোর-তরুণদের ঘরে রাখার জন্য অভিভাবকদের অনুরোধ করেছেন।
ম্যাঁখো দাবি করেন, এটি স্পষ্ট যে, সহিংস গোষ্ঠী দাঙ্গার পেছনে রয়েছে। কিন্তু অনেক তরুণও এতে যোগ দিয়েছে। যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের এক তৃতীয়াংশই এই দ্বিতীয় দলের অন্তর্ভুক্ত।
ম্যাঁখো সহিংসতার জন্য সামাজিক যোগাযোগ প্লাটফর্ম এবং নেটওয়ার্কগুলোকেও দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, আমরা দেখেছি স্ন্যাপচ্যাট, টিকটকসহ বেশ কিছু প্লাটফর্ম হিংসা ছড়ানোর জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। অনেক তরুণ এসব প্লাটফর্মের কারণে বাস্তবতার জ্ঞান হারিয়েছে ফেলেছে।
সহিংসতা ফ্রান্সের মার্সেই, বোর্দো, লিয়ন, গ্রেনোবল, অ্যানেসি, টুলুস এবং সেন্ট-এটিনসহ বেশ কয়েকটি শহরে ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়েছে।
শুক্রবার ফ্রান্সজুড়ে হালকা সাঁজোয়া যান, এলিট রেইড স্কোয়াডসহ ৪৫ হাজার পুলিশ এবং দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তবে এই বিশাল মোতায়েনও সহিংসতা রোধে যথেষ্ট ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। শনিবার সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে আরও বেশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সদস্য মোতায়েনের পরিকল্পনা করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
গত রাতে ফ্রান্সজুড়ে রাস্তায় অসংখ্য গাড়ি, বাস স্টপ, ময়লা ফেলার বাক্সে আগুন জ্বলেছে। বহু দোকানপাট ও রেস্টুরেন্ট লুট হয়েছে। ফ্রান্সের পূর্বাঞ্চলীয় শহর স্ট্রাসবার্গে একটি অ্যাপল স্টোর লুট করার খবর পাওয়া গেছে। সেখানে পুলিশ টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে লুটকারীদের তাড়িয়ে দেয়। প্যারিসের একটি শপিং মলে একটি ফাস্ট-ফুড আউটলেটে ভাঙচুরের খবরও পাওয়া গেছে।
দক্ষিণের বন্দর শহর মার্সেইয়ে রাত নামার আগে তরুণ বিক্ষোভকারীরা প্রজেক্টাইল ও আতশবাজি ছুঁড়েছে। বহু দোকানে আগুন দিয়ে লুট করেছে তারা। পুলিশ জানিয়েছে, ওই শহর থেকে প্রায় ৯০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
শুক্রবার কয়েকজন তরুণ মার্সেইয়ের একটি বন্দুকের দোকানে প্রবেশ করে এবং অস্ত্র লুট করে চলে যায় বলে খবর পাওয়া গেছে। পরে একজনকে একটি শিকারি রাইফেলসহ গ্রেফতার করে পুলিশ।
ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত রাতে ৮৭৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ৪০৮জন প্যারিসের এবং বাকিরা অন্যান্য শহরের।
এর আগে গত বুধবার রাতে দুজন অফ-ডিউটি পুলিশ কর্মকর্তার উপর প্রায় ২০ জন তরুণ হামলা চালায়। এর মধ্যে একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে ছুরিকাঘাত করা হয়েছিল বলে জানায় পুলিশ।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার সকালে প্যারিসের শহরতলী নঁতে ট্রাফিক সিগন্যাল অমান্য করায় নায়েল এম নামে এক কিশোরকে ধাওয়া করে পুলিশ। তিনি ভাড়ায় গাড়ি চালাচ্ছিলেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, এক পুলিশ কর্মকর্তা গাড়িতে কিশোরটির দিকে বন্দুক তাক করে গুলি করে।
কিশোরের উপর গুলি করা পুলিশ কর্মকর্তাকে হত্যার অভিযোগে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে ফ্রান্সে পুলিশের অভ্যন্তরে ব্যাপক বর্ণবৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে প্রায়ই এমন হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে।
ফ্রান্সের বিক্ষোভ প্রতিবেশি বেলজিয়ামেও ছড়িয়ে পড়েছে। সেদেশের রাজধানী ব্রাসেলসে ৬৪ জনকে আটক করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে বেশিরভাগই কিশোর-তরুণ।
আরও পড়ুন
- ফ্রান্সে পুলিশের গুলিতে কিশোর নিহত, রাতভর সহিংস বিক্ষোভ
- ফ্রান্সে পুলিশের গুলিতে কিশোর নিহত, প্রতিবাদে রাজধানী রণক্ষেত্র
সারাবাংলা/আইই