Friday 29 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চট্টগ্রামে ডেঙ্গু ‘আশঙ্কাজনক’, হাসপাতালে বাড়ছে ভিড়

ইমরান চৌধুরী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১০ জুলাই ২০২৩ ২০:৫০

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছেই। চলতি জুলাই মাসের দশদিনে যত ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে, তা পুরো জুন মাসে আক্রান্তের চেয়ে বেশি। জুলাইয়ে একদিনে সর্বোচ্চ ১১১ জনসহ মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৪৭৬ জন। সিভিল সার্জনের কার্যালয় এরইমধ্যে পরিস্থিতি ‘আশঙ্কাজনক’ উল্লেখ করে সিটি করপোরেশনকে চিঠি দিয়েছে। এ অবস্থায় সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে রোগীর চাপ বাড়ছে।

বিজ্ঞাপন

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত চট্টগ্রাম জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ৯৪০ জন। এদের মধ্যে সরকারি হাসপাতালে ৫৭৬ জন ও বেসরকারি হাসপাতালে ৩৬৪ চিকিৎসা নিয়েছেন।

বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল মিলিয়ে ১৫৮ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন। চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৭৮২ জন।

চট্টগ্রামে এ পর্যন্ত মোট ১৩ জন ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এর মাঝে জানুয়ারিতে মারা যায় তিনজন। বাকি ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে শেষ ৪০ দিনে অর্থা’ ১ জুন থেকে ১০ জুলাইয়ের মধ্যে। এর মধ্যে জুনে ছয়জন এবং জুলাইয়ে এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে চারজনের।

গত ২৪ ঘণ্টায় ৮১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এদের মধ্যে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে ৩৬ জন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ২৪ জন, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ৬ জন এবং বিআইটিআইডিতে ১৫ জন রোগী চিকিৎসাধীন আছেন।

চলতি বছরে শনাক্ত ৯৪০ জনের মধ্যে ৬৭ শতাংশই আক্রান্ত হয়েছে শেষ ৪০ দিনে, ৭৫৮ জন। অথচ এর আগের পাঁচ মাসে (জানুয়ারি থেকে মে) আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৮২ জন। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ৭৭ জন, ফেব্রুয়ারিতে ২২ জন, মার্চ মাসে ১২ জন, এপ্রিলে ১৮ জন এবং মে মাসে ৫৩ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়। জুন মাসে ২৮২ জন এবং চলতি জুলাইয়ের ১০ দিনে সর্বোচ্চ ৪৭৬ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে।

চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত জুন মাসে মোট ২৮২ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয় চট্টগ্রামে। তবে চলতি জুলাইয়ের ১০ দিনেই আক্রান্ত হয়েছে ৪৭৬ জন। হিসেবে জুন মাসে আক্রান্তের সংখ্যা পার হয়েছে জুলাইয়ের ১০ দিনে। জুলাইয়ের ১০ দিনে আক্রান্তের এই সংখ্যা মে মাসের তুলনায় পাঁচ গুণের বেশি। মে মাসে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৫৩ জন।

বিজ্ঞাপন

সরেজমিনে দেখা যায়, চমেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের ১৩, ১৪, ১৫ ও ১৬ এবং শিশু ওয়ার্ডে পৃথকভাবে ডেঙ্গু রোগীদের রাখা হয়েছে। ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় হাসপাতালের মেঝেতেও সেবা দিতে হচ্ছে রোগীদের। তাদের মধ্যে অনেকেই মশারি ছাড়াই থাকছেন। ফলে আক্রান্তদের থেকে মশার মাধ্যমে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ে কিনা, তা নিয়ে আতঙ্কে আছেন অন্য রোগী এবং স্বজনরা।

চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মোতালেব মিয়া নামের এক রিকশাচালক সারাবাংলাকে বলেন, ‘চারদিন আগে জ্বর উঠেছে। ওষুধ খেলেও জ্বর কমছিল না। পরে মেডিকেলে এসে পরীক্ষা করালে ডেঙ্গু ধরা পড়ে। মেডিকেলে ভর্তি হলেও সিট পাইনি। মেঝেতে আছি। এখানে অনেক গরম। তাই মশারিতে থাকতে পারি না।’

ডেঙ্গু আক্রান্ত আরেকজন গোলাম রসুল বলেন, ‘টাকা থাকলে বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হতাম, এত কষ্ট করে এখানে পড়ে থাকতাম না।’

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান সারাবাংলাকে বলেন, ‘ডেঙ্গু রোগীর চাপ প্রতিনিয়ত বাড়ছে। সাধারণ রোগীদের আক্রান্তের ঝুঁকি কমাতে ডেঙ্গু রোগীদের আলাদা ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেওয়া জরুরি। এর প্রয়োজনীয়তা আমরাও অনুভব করছি। তবে এত রোগীর জায়গা হাসপাতালে নেই।’

‘এ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছি। তবে দেশের অন্যন্য জেলা থেকে এখনও চট্টগ্রাম অনেক কন্ট্রোলে আছে বলে আমি মনে করি। তবুও যদি ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ে তাহলে একটি ওয়ার্ড আমরা তাদের জন্য দিয়ে দেব। এখন চমেকে ৪৪ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন।’

এদিকে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল ও ফৌজদারহাটের বিআইটিআইডি হাসপাতালেও ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা গত কয়েকদিনের তুলনায় বেড়েছে। আর বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেও রোগী বেড়েছে। এর মধ্যে ম্যাক্স হাসপাতালে ১০ জন ও মেডিকেল সেন্টারে ৫ জন রোগী ভর্তি আছেন।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিকাল এন্ড ইনফেকসিয়াস ডিজিসেসের (বিআইটিআইডি) সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাকিল আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘দিন যত গড়াচ্ছে তত পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। আমাদের এখানে প্রতিদিনই ১০ থেকে ১৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হচ্ছে। এখানে ১০০ জন রোগী চিকিৎসা নেওয়ার ব্যবস্থা আছে।’

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ের পর থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ার কারণে বিভিন্ন জায়গায় পানি জমে মশার লার্ভার সৃষ্টি হচ্ছে। যেখানে এডিস মশার প্রজনন ঘটছে। মূলত এ কারণেই ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে শুরু করেছে। ডেঙ্গুর প্রকোপ যাতে বাড়তে না পারে তাই আমরা বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালাচ্ছি।’

চসিকে বিনামূল্যে ডেঙ্গুর পরীক্ষা

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) পরিচালিত জেনারেল হাসপাতালে বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষার উদ্বোধন করেছেন চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী।

সোমবার (১০ এপ্রিল) সকালে উদ্বোধন হওয়া এ কার্যক্রম ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব কমা না পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল নয়টা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত চলমান থাকবে।

মেয়র রেজাউল বলেন, ‘দরিদ্র জনগণ যাতে অর্থাভাবে ডেঙ্গু পরীক্ষা থেকে বঞ্চিত না হয় তার জন্য এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যতদিন ডেঙ্গু না কমবে ততদিন এ কার্যক্রম চলবে এবং ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পেলে প্রয়োজনে আরও হাসপাতালে বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষা কার্যক্রম চালু করা হবে।’

চসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী বলেন, ‘ডেঙ্গু পরীক্ষার জন্য উন্নত মানের কিট সংগ্রহ করা হয়েছে। যে কেউ জ্বরাক্রান্ত হলেই আমাদের কাছে আসলে বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষা করা হবে।’

চসিকের স্বাস্থ্য বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর জহর লাল হাজারী সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষা উদ্বোধনের সময় ৪৪ জনকে পরীক্ষা করা হয়েছে। সেখানে দুইজনকে পজেটিভ পেয়েছি। তাদের ব্যবস্থাপত্র দিয়ে বাসায় থেকে চিকিৎসা করতে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

এদিকে নগরীর আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকায় মশার লার্ভা পাওয়ায় পাঁচটি বাড়ির মালিককে ৩৮ হাজার টাকা জরিমানা করেছে সংস্থাটি।

সারাবাংলা/আইসি/একে

চট্টগ্রাম ডেঙ্গু

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর