শোকর্যালি করতে পারেনি বিএনপি, অফিস ভাংচুরের মামলাও নেয়নি
২০ জুলাই ২০২৩ ২৩:০৪
চট্টগ্রাম ব্যুরো: লক্ষ্মীপুরে কৃষকদল নেতা হত্যার প্রতিবাদে চট্টগ্রামে কেন্দ্রঘোষিত শোকর্যালি কর্মসূচি পালন করতে পারেনি বিএনপি। এর পরিবর্তে দলটি তাদের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। আওয়ামী লীগের প্রার্থীর নির্বাচনি কার্যালয়ে হামলা ও বিএনপির দলীয় অফিসে ভাংচুরের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ফের সংঘাতের আশঙ্কায় পুলিশ তাদের শোকর্যালি করার অনুমতি দেয়নি।
এদিকে, দলীয় কার্যালয়ে ভাংচুরের ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় মামলা গ্রহণ না করার অভিযোগ করেছে বিএনপি। তবে ভাংচুরের প্রতিবাদে শুক্রবার (২১ জুলাই) বিকেলে নগরীর নুর আহমদ সড়কে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সড়কের পাশে সমাবেশ করার অনুমতি পেয়েছে দলটি।
লক্ষ্মীপুরের কৃষকদল নেতা সজীব হোসেনকে হত্যার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) বিকেলে নগরীর নুর আহমদ সড়কে নাসিমন ভবনের দলীয় কার্যালয় থেকে শোকর্যালি বের করার কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপি। জানা গেছে, শোকর্যালির ঘোষণায় সকাল থেকে দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। দুপুরে কার্যালয়ে জড়ো হওয়া নেতাদের গিয়ে পুলিশ রাস্তায় কোনো মিছিল বের না করার অনুরোধ করেন।
পুলিশের মনোভাব দেখে বিএনপি নেতারা আর শোকর্যালি না বের করে কার্যালয়ের মাঠে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। তবে এতে চট্টগ্রামের পদধারী শীর্ষ কোনো নেতা উপস্থিত ছিলেন না।
জানতে চাইলে নগর বিএনপির সাবেক সহ-দফতর সম্পাদক ইদ্রিস আলী সারাবাংলাকে বলেন, ‘কেন্দ্রের নির্দেশে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের সিনিয়র নেতারা সবাই গত (বুধবার) রাতে ঢাকায় গেছেন। আমরা শোকর্যালি বের করার প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তা লালদিঘীতে আওয়ামী লীগের সমাবেশের কথা বলে আমাদের শোকর্যালি বের না করার অনুরোধ করেন। বিএনপিও রাস্তায় কর্মসূচি পালন করলে সংঘাতসময় পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে বলে উনারা আমাদের জানান।’
‘আমরা শান্তি ও সহাবস্থানে বিশ্বাসী। আমরা কখনোই সহিংসতা করি না। এজন্য আমরা সংঘাত এড়াতে পার্টি অফিসের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছি। তবে আগামীকাল (শুক্রবার) বিকেল তিনটায় আমরা দলীয় কার্যালয়ের বাইরে আশা করপোরেশনের সামনে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির ব্যানারে প্রতিবাদ সমাবেশ করব। এতে সিনিয়র নেতারা উপস্থিত থাকবেন।’
জানতে চাইলে নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) নোবেল চাকমা সারাবাংলাকে বলেন, ‘যেহেতু শুক্রবার তারা প্রতিবাদ সমাবেশ করার জন্য অনুমতি নিয়েছে, সেজন্য আজ (বৃহস্পতিবার) সড়কে শোকর্যালির অনুমতি দেওয়া হয়নি। উনারাও রাস্তায় কর্মসূচি পালনে তেমন আগ্রহী ছিলেন না।’
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম-আহবায়ক এম এ আজিজের সভাপতিত্বে ও ইয়াছিন চৌধুরী লিটনের সঞ্চালনায় বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য দেন- নগর কমিটির যুগ্ম-আহবায়ক নাজিমুর রহমান, কাজী বেলাল উদ্দিন, আবদুল মান্নান, উত্তর জেলার যুগ্ম আহবায়ক নুর মোহাম্মদ, আহবায়ক কমিটির সদস্য হারুন জামান, আনোয়ার হোসেন লিপু, গাজী মো. সিরাজ উল্লাহ, মো. কামরুল ইসলাম, দক্ষিণ জেলার সদস্য নাজমুল মোস্তফা আমিন, ইসহাক চৌধুরী, খোরশেদ আলম, জসিম উদ্দিন, নগর বিএনপি নেতা ইদ্রিস আলী, নগর যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক এমদাদুল হক বাদশা, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক জিয়াউর রহমান জিয়া।
সমাবেশে বিএনপি নেতারা বলেন, বিনাভোটে ক্ষমতায় থেকে সরকার এখন বেপরোয়া হয়ে গেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে গুলি করার নির্দেশ দিয়েছে। আওয়ামী লীগের মাস্তানদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছে তারা। এই পুলিশ ও মাস্তানরাই লক্ষ্মীপুরে বিএনপির মিছিলে হামলা করে কৃষকদল নেতা সজিব হোসেনকে হত্যা করেছে।
বিএনপির মামলা নেয়নি পুলিশ
এদিকে, নগরীর নুর আহমদ সড়কে নাসিমন ভবনে দলীয় কার্যালয়ে ভাংচুরের ঘটনায় বৃহস্পতিবার বিকেলে কোতোয়ালি থানায় মামলার আবেদন নিয়ে যান বিএনপির কয়েকজন আইনজীবী। মামলার আবেদনে প্রধান আসামি হিসেবে নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি’র নাম ছিল। তবে পুলিশ মামলা না নিয়ে তাদের ফেরত দেন বলে তারা জানিয়েছেন।
কোতোয়ালি থানায় যাওয়া আইনজীবী আব্দুস সাত্তার সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের কার্যালয়ের তত্ত্বাবধায়ক কাজী মাহমুদ হোসেনের মামলার আবেদন নিয়ে আমরা প্রায় ৪০ জন আইনজীবী কোতোয়ালি থানায় গিয়েছিলাম। কিন্তু পুলিশ আমাদের মামলা নেয়নি।’
মামলায় অভিযোগ ছিল, ‘চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনিসহ দু’জনের নেতৃত্বে ২৫০ থেকে ৩০০ জন মিছিল নিয়ে বিএনপি কার্যালয়ে গিয়ে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ছবি ভাংচুর করে, ল্যাপটপ নিয়ে যায় এবং আসবাবপত্র তছনছ করে। কার্যালয় থেকে কয়েক’শ পোস্টার-ব্যানার ছিঁড়ে নিয়ে রাস্তায় আগুন দেয়। এ সময় ককটেল ফাটিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করা হয়।’
সাত্তার বলেন, ‘পুলিশের পক্ষ থেকে আমাদের বলা হয়, বিএনপি অফিসে কোনো ভাংচুরের ঘটনা ঘটেনি। রাস্তায় নাকি ময়লার স্তূপে আগুন দেওয়া হয়েছিল। এজন্য তারা আমাদের বিরুদ্ধে মামলা নেবে না বলায় আমরা ফেরত আসি।’
জানতে চাইলে কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জাহিদুল কবীর সারাবাংলাকে বলেন, ‘উনারা বলছেন, ককটেল ফাটানো হয়েছে। বাস্তবে ককটেল বিস্ফোরণের কোনো ঘটনা ঘটেনি। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে এমন কোনো প্রমাণ নেই। কার্যালয়ের ভেতরে ভাংচুর করা হয়েছে বলে উনাদের অভিযোগ। অথচ পুলিশ কার্যালয়ের ভেতরে কাউকে প্রবেশ করতে দেয়নি। এখন মিথ্যা অভিযোগে তো কোনো মামলা নিতে পারি না।’
নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিএনপির নেতাকর্মীরা যখন আমাদের নির্বাচনি কার্যালয় ভাংচুর করছিল, তখন আমরা গিয়ে প্রতিরোধ করেছি। এর প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা মিছিল করেছে। আমরা অহেতুক আক্রমণ কিংবা সন্ত্রাসের রাজনীতি করি না। বিএনপি গতকাল (বুধবার) যে ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে, আমরা এর প্রতিবাদ করেছি মাত্র। অথচ তারা আমাকে টার্গেট করে মিথ্যা অভিযোগ তুলে মামলা করতে গিয়েছিল। বিএনপির রাজনীতিই সন্ত্রাস এবং মিথ্যাচারের, সেটা আবারও প্রমাণ হয়েছে।’
বুধবার (১৯ জুলাই) বিকেলে বিএনপি চট্টগ্রাম নগরীতে কেন্দ্রঘোষিত পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করে। পদযাত্রা শেষে ফেরার পথে বিএনপির একদল নেতাকর্মী নগরীর দামপাড়ায় চট্টগ্রাম-১০ আসনের উপনির্বাচনে নৌকার প্রার্থী মহিউদ্দিন বাচ্চু’র প্রধান নির্বাচনি কার্যালয়ে হামলা করে। এ সময় প্রচারণার গাড়িসহ রাস্তায় চলাচলরত বেশ কয়েকটি যানবাহন ভাংচুর করা হয়। এ ঘটনায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। তারা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভের পাশাপাশি নগরীর কোতোয়ালি থানার নুর আহমদ সড়কে বিএনপির দলীয় কার্যালয় ভাংচুর করে।
তবে নৌকার প্রার্থীর কার্যালয়ে হামলার ঘটনায় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অজ্ঞাতনামা ২৫০ থেকে ৩০০ জনকে আসামি করে খুলশী থানায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে। এছাড়া পুলিশের ওপর আক্রমণ করে চার সদস্যকে আহত করা এবং সিএমপির টহল গাড়ি ভাংচুরের ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে আরও একটি মামলা হয়েছে, যেখানে ৪৪ জনকে আসামি করা হয়েছে।
সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম