দুর্ঘটনা রোধে দক্ষ চালক বানাবে সরকার
১৩ মে ২০১৮ ০৯:২২
।। জোসনা জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা : সড়কে দুর্ঘটনা রোধ ও যাত্রীদের নিরাপত্তার স্বার্থে দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর অংশ হিসেবে বিআরটিসির ৩টি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট ও ১৭টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আধুনিক ও শক্তিশালী করা হবে।
পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এ প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছেন। চলতি বছর থেকে ২০১৯ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশন (বিআরটিসি)।
প্রকল্পের উদ্দেশ্য সম্পর্কে প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, চালকদের প্রক্ষিণের মাধ্যমে দেশে নিরাপদ পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। এছাড়া সড়ক দুঘর্টনা কমানো, ড্রাইভিং পেশায় দেশ-বিদেশে কর্মসংস্থান প্রত্যাশী জনগোষ্ঠীকে মানসম্মত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে গড়ে তোলা হবে। এর ফলে চালকেরা উপার্জনের পাশাপাশি দারিদ্র্য নিরসনে ভূমিকা রাখতে পারবেন।
এ বিষয়ে বিআরটিসির ম্যানেজার (প্লানিং) মো. আবুবককর সিদ্দিক সারাবাংলাকে বলেন, ‘পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সম্প্রতি প্রকল্পটি অনুমোদন দিয়েছেন। এটির ব্যয় ৫০ কোটি টাকার নিচে হওয়ায় তা একনেকে উপস্থাপনের প্রয়োজন হয়নি।’
এ প্রকল্পের মাধ্যমে দক্ষ চালক তৈরি করা হলে নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করা যাবে বলে আমরা আশা করছি।
বিআরটিসির ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘এদেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতিধারা বেগবান করার পূর্ব শর্ত হলো দেশের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ জনশক্তিকে সত্যিকারভাবে মানব সম্পদে রূপান্তর করা। দেশের অদক্ষ জনগোষ্ঠীকে টেকসই প্রশিক্ষণ দেওয়ার মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরের জন্য বিআরটিসি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।’
মানব সম্পদ উন্নয়নে দেশে বিদেশে দক্ষ কর্মীর চাহিদা পূরণের জন্য বর্তমানে বিআরটিসির অধীন তিনটি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট এবং ১৭টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পরিচালিত হচ্ছে। বিআরটিসির অধীনে এ সকল প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে গত তিন বছরে বিভিন ট্রেডে মোট ২২ হাজার ৯৫৪ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বিভিন্ন ট্রেডে প্রায় ৮ হাজার ১২১ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
প্রকল্পের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, দুর্নীতি দমন কমিশনের বার্ষিক প্রতিবেদন ২০১৬ এর ১০ নং প্যারায় সড়ক দুর্ঘটনা রোধে চালকদের যথাযথ প্রশিক্ষণের জন্য করণীয় শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ওই প্রতিবেদনটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে বিআরটিসিতে পাঠানো হয়। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা তথা এসডিজিতেও দেশে নিরাপদ পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত করার বিষয়টি উল্লেখ আছে।
এ দিকে স্কিলস ফর ইমপ্লয়মেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম (এসইএলপি) এর আওতায় দেশে এক লাখ দক্ষ চালক সৃষ্টির পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। এর আওতায় বিআরটিসি ৩৬ হাজার চালককে চার মাসের প্রশিক্ষণ দেওয়ার মাধ্যমে তাদের দক্ষতা উন্নয়নের সুযোগ করে দেবে। এছাড়াও দক্ষ চালকদের বিদেশে কর্মসংস্থানের জন্য তাদের ভাষা পারফরমেন্স ইংলিশ এবং আরবি ভাষার ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
কিন্তু বিআরটিসির বিদ্যমান প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলো বর্তমানে অত্যন্ত জরাজীর্ণ ও ভঙ্গুর অবস্থায় রয়েছে এবং এতে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কোনো আধুনিক উপকরণ নেই। তাই এ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলো আধুনিকায়ন ও যুগোপযোগী করা প্রয়োজন। তাছাড়া পর্যাপ্ত ট্রেনিং কার না থাকায় ব্যাপক চাহিদা থাকা সত্ত্বেও এ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোতে মানসম্মত প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে না। তাছাড়া বিআরটিসির ৩টি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট ও ১৭টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অবকাঠামো উন্নয়নসহ আধুনিক প্রশিক্ষণ স্থাপন করা প্রয়োজন।
বিশেষ করে সিমুলেটরের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দেওয়া, দক্ষতা যাচাইয়ের জন্য পি-ড্রাইভ সিস্টেম এর ব্যবহার এবং আধুনিক সুবিধা ক্লাসরুম দরকার। এ জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক সংস্থান বিআরটিসির নেই। কারণ জাতীয় পে-স্কেল ২০১৫ সালে বাস্তবায়নের পর বিআরটিসির কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শ্রমিকদের বেতন ভাতাদি দ্বিগুণ বেড়ে গেছে, কিন্তু বিআরটিসির আয় সে অনুপাতে বাড়েনি।
বিআরটিসি একটি স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান তাই সরকারি অনুদানে প্রকল্প প্রণয়নের জন্য অর্থ বিভাগের সম্মতি নেওয়ার জন্য এরইমধ্যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
সারাবাংলা/জেজে/একে/এমআইএস