মার্শাল অ্যাগ্রোভেটের বিরুদ্ধে এবার কাস্টমসের মামলা
২৩ আগস্ট ২০২৩ ২১:২৯
ঢাকা: জাল লাইসেন্স দেখিয়ে জৈব কীটনাশক বিটিআই আমদানির অভিযোগে মার্শাল অ্যাগ্রোভেটের বিরুদ্ধে মামলা করেছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ কর্তৃপক্ষ। মামলায় অভিযোগে বলা হয়েছে, জৈব কীটনাশক বিটিআই আমদানি করলেও মার্শাল অ্যাগ্রোভেট এর বিপরীতে কৃষি বালাইনাশকের লাইসেন্স জমা দিয়েছিল। অন্যদিকে উদ্ভিদ সংরক্ষণ উইংয়ের যে সনদ মার্শাল জমা দিয়েছে, তাতে সইয়ের তারিখে উইংয়ের পরিচালক অবসরোত্তর ছুটিতে ছিলেন বলে তার সই করার কোনো সুযোগ ছিল না।
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে এডিস মশার লার্ভা নিধনে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনকে পাঁচ টন জৈব কীটনাশক বিটিআই আমদানি করে দিয়েছিল মার্শাল অ্যাগ্রোভেট। সারাবাংলার অনুসন্ধানে ওই আমদানি প্রক্রিয়ায় টেন্ডারের শর্ত লঙ্ঘনসহ নানা ধরনের জালিয়াতি বেরিয়ে এলে আলোচনায় আসে মার্শাল। পরে ডিএনসিসি তাদের বিরুদ্ধে মামলাও করেছে। এবার ভুয়া সনদ ও নথিপত্র দাখিল করে পণ্য আমদানির জন্য চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ তাদের বিরুদ্ধে মামলা করল।
বুধবার (২৩ আগস্ট) সিএমপি বন্দর থানায় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মো. বাকিবিল্লাহ বাদী হয়ে মামলাটি করেন। চট্টগ্রাম কাস্টমসের উপকমিশনার (ডিসি) বদরুজ্জামান মুনশি মামলার তথ্য সারাবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন।
আরও পড়ুন- টেন্ডারের শর্ত লঙ্ঘন, ‘নকল’ বিটিআইয়ে জনস্বাস্থ্য নিয়ে শঙ্কা
মামলার এজাহারে অভিযুক্তরা হলেন- মার্শাল অ্যাগ্রোভেট কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক এম নাসিরউদ্দিন আহমেদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম আলাউদ্দিন, টিভোলি এন্টারপ্রাইজের প্রোপাইটার সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট বিশ্বনাথ কর্মকার, আরেক সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ও কাস্টমস সরকার মো. জাকির হোসেন এবং জাকির হোসেনের সহকারী শহিদুল ইসলাম এবং মার্শালের অজ্ঞাতনামা পরিচালকরা।
এজাহারে বলা হয়েছে, মার্শাল অ্যাগ্রোভেট গিত ২৬ জুলাই চট্টগ্রাম কাস্টমস থেকে যে কাগজপত্র দেখিয়ে বিটিআই খালাস করে, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে তার সত্যতা পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ জাল লাইসেন্স দেখিয়ে তারা বিটিআই আমদানি করেছে। যে তারিখে লাইসেন্স সইয়ের কপি তারা দেখিয়েছে, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংরক্ষণ উইংয়ের ওই সময়কার পরিচালক তখন অবসর-পরবর্তী ছুটিতে ছিলেন।
আরও পড়ুন-
- বিটিআই নকল প্রমাণ হলে আইনি ব্যবস্থা: ডিএনসিসি
- বিটিআই জালিয়াতি: মার্শাল ও চীনা সরবরাহকারীর নামে মামলা
- চিনের কোম্পানির কাছেও বিটিআই বিক্রি করেনি ‘বেস্ট কেমিক্যাল’
- ডিএনসিসিতে নকল বিটিআই: আইনি ব্যবস্থা নেবে সিঙ্গাপুরের কোম্পানি
- বিটিআই জালিয়াতি: ডিএনসিসি’র সাবেক-বর্তমান তিন কর্মকর্তাকে শোকজ
চট্টগ্রাম কাস্টমস জানিয়েছে, ২৬ জুলাই বিকেলে চীন থেকে আমদানি করা পাঁচ টন বিটিআই খালাস করতে মার্শাল অ্যাগ্রোভেট তাদের মনোনীত সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট চট্টগ্রামের টিভোলি এন্টারপ্রাইজের মাধ্যমে কাস্টমস অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমে বিল অব এন্ট্রি দাখিল করে। পরে আমদানিকারকের মনোনীত সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের কাস্টমস সরকার মো. জাকির হোসেন ও তার সহযোগী শহিদুল ইসলাম যৌথভাবে আমদানিকারকের পক্ষে তক্ষায়ন সেকশন-৭ (এ)-এ নথিপত্র দাখিল করেন।
এজাহারে বলা হয়েছে, এসব নথিপত্র তাৎক্ষণিকভাবে কৃষি সম্প্রসারণের অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে যাচাই করার সুযোগ নেই। পরে এগুলো যাচাইয়ের জন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে চিঠি দেওয়া হয়। চিঠির জবাবে ২২ আগস্ট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেমে কাস্টম হাউসে জানানো হয়, দপ্তরে সংরক্ষিত নথিপত্র ও বালাম বইয়ের সঙ্গে দাখিল করা আমদানি লাইসেন্স ও নিবন্ধন সনদে গড়মিল রয়েছে।
মিথ্যা ও জাল দলিল দাখিল করার দায়ে আসামিদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫(বি) ও দণ্ডবিধির ৪৬৭, ৪৬৮ ও ৪৭১ ধারায় অভিযোগ এনেছে চট্টগ্রাম কাস্টমস।
এর আগে সারাবাংলার অনুসন্ধানে উঠে আসে, ডিএনসিসির বিটিআই আমদানির টেন্ডারে যেসব শর্ত ছিল, সেগুলো পূরণ করার যোগ্যতা নেই মার্শাল অ্যাগ্রোভেটের। জৈব কীটনাশক বিটিআই আমদানির কোনো লাইসেন্স তাদের ছিল না। মার্শাল সিংগাপুরের বেস্ট কেমিকেলের কাছ থেকে এই বিটিআই আমদানির কথা বললেও বেস্ট কেমিকেল জানায়, তারা এমন কোনো কোম্পানিকে বিটিআই সরবরাহ করেনি। চীনা যে ব্যক্তিকে বেস্ট কেমিকেলের প্রতিনিধি হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়, তিনি ওই কোম্পানির কেউ নন বলেও জানায় বেস্ট কেমিকেল।
সারাবাংলা/আরএফ/টিআর
চট্টগ্রাম কাস্টমস জাল নথি ডিএনসিসি বিটিআই বিটিআই আমদানি মার্শাল অ্যাগ্রোভেট