প্রিগোজিন মারা গেছেন— জানাল মস্কো
২৮ আগস্ট ২০২৩ ০০:০৫
বিমান বিধ্বস্তের চার দিন পর রাশিয়ার ভাড়াটে বাহিনী ওয়াগনারের প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোজিনের মৃত্যুসংবাদ নিশ্চিত করছেন রাশিয়ার কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, ভূপাতিত বিমানটিতে পাওয়া মরদেহের জেনেটিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে তারা নিশ্চিত হয়েছেন যে প্রিগোজিন মারা গেছেন।
গত বুধবার (২৩ আগস্ট) সন্ধ্যায় মস্কোর উত্তরে তেভার এলাকায় ভূপাতিত হয় একটি বিমান। রাশিয়ার বিমান চলাচল সংস্থা রোজাভিয়াটসিয়া ও জরুরি পরিস্থিতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় জানায়, তিন ক্রুসহ ওই বিমানে থাকা সবাই মারা গেছেন। ওই বিমানের যাত্রীর তালিকায় ছিল প্রিগোজিনের নাম। তবে প্রিগোজিন আদৌ নিহত হয়েছেন কি না, তা নিয়ে ছিল ধোঁয়াশা।
বিবিসির খবরে বলা হয়, ওই বিমান ভূপাতিত হওয়ার ঘটনায় গঠিত রুশ তদন্ত কমিটি জানিয়েছে, বিমান বিধ্বস্ত হয়ে নিহত ১০ জনকেই শনাক্ত করা গেছে। বিমানের যে যাত্রী তালিকা, তার সঙ্গে নিহতদের তালিকা মিলে গেছে।
আরও পড়ুন- প্রিগোজিনকে ‘বহনকারী’ বিধ্বস্ত বিমানের ফ্লাইট রেকর্ডার উদ্ধার
এমব্রেয়ার লিগ্যাসি বিমানটি বিধ্বস্ত ও ভূপাতিত হওয়ার পেছনে ক্রেমলিন তথা রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের হাত রয়েছে বলে গুঞ্জন ওঠে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন থেকে শুরু করে পশ্চিমা বিশ্বের অনেক নেতাই প্রিগোজিন নিহত হয়ে থাকলে তার পেছনে পুতিনকেই দায়ী করেন।
এ ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করেছে এ ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিটি। রুশ কর্মকর্তারা বলছেন, তারা তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছেন।
এক বিবৃতিতে কমিটি জানিয়েছে, বিধ্বস্ত বিমান থেকে উদ্ধার হওয়া মরদেহগুলোর মলিকিউলার-জেনেটিক পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষার ফল অনুযায়ী নিহত ১০ জনেরই পরিচয় জানা গেছে। ফ্লাইটের যাত্রী তালিকার সঙ্গে এই ১০ জনের পরিচয় মিলে গেছে।
নিহতদের মধ্যে ওয়াগনার গ্রুপের আরেক শীর্ষ নেতা দিমিত্রি উটকিনও রযেছেন, যিনি এই ভাড়াটে বাহিনীর সামরিক কার্যক্রমের দায়িত্বে ছিলেন। বিমানে অন্য যাত্রীদের মধ্যে ছিলেন ওয়াগনার গ্রুপের ভ্যালেরি চেকালভ, সের্গেই প্রপোসটিন, ইয়েভগেনি মাকারিয়ান, আলেক্সান্ডার টোটমিন ও নিকোলাই মাটুসেয়েভ। বাকি তিনজন বিমানের ক্রু— পাইলট আলেক্সেই লেভশিন, কো-পাইলট রুস্তাম করিমভ ও ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট ক্রিস্টিনা রাসপোপোভা।
প্রিগোজিন রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠ ছিলেন একসময়। তার নেতৃত্বাধীন ওয়াগনার বাহিনী পুতিনের হয়ে বিভিন্ন জায়গায় ভাড়ায় যুদ্ধও করেছে। তবে গত জুনে ওয়াগনার বাহিনী রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে বসে। ওই সময় ওয়াগনার বাহিনী রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রোস্তভ দখল করে নেয়, মস্কোর দিকে অগ্রসরের হুমকিও দেয়। পরে দুপক্ষের মধ্যে সমঝোতা হলে ওয়াগনার বাহিনী বেলারুশ চলে যায়।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন প্রিগোজিনের নেতৃত্বাধীন ওয়াগনারের এই বিদ্রোহকে ‘পিঠে ছুরিকাঘাত’ বলে অভিহিত করন। প্রিগোজিনের বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর অনেকেই বলেছেন, মূলত ওই সময়ই প্রিগোজিনের মৃত্যু লেখা হয়েছিল। প্রিগোজিনের মৃত্যুসংবাদকে পুতিনের ‘শীতল বার্তা’ হিসেবেও অভিহিত করেন কেউ কেউ।
বিমান ভূপাতিত হওয়ার প্রায় তিন দিন পর ঘটনাটি নিয়ে মুখ খোলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি প্রিগোজিনকে একজন ‘মেধাবী ব্যক্তি’ হিসেবে অভিহিত করেন। তবে প্রিগোজিন ‘কিছু মারাত্মক ভুল করেছেন’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এ ঘটনায় অবশ্য নিহতদের পরিবারের কাছে শোকবার্তা পাঠিয়েছেন পুতিন।
সারাবাংলা/টিআর