উধাও ছাত্র, মাদরাসা বলছে ‘জ্বিনের কারসাজি’
৩১ আগস্ট ২০২৩ ১৭:৩৫
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীতে নিখোঁজ মাদরাসা ছাত্রের সন্ধান গত ২৪ ঘণ্টায়ও মেলেনি। পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে প্রথমে নালায় পড়ে নিখোঁজের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু আবর্জনা সরিয়ে ব্যাপক তল্লাশির পর এখন তারা বলছে, ছেলেটি নালায় নিখোঁজ না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
তাহলে ছাত্রটি গেল কোথায়? এ অবস্থায় ছাত্রের পরিবার তাদের সন্তানের হেফাজত করতে না পারার জন্য মাদরাসা কর্তৃপক্ষকে দায়ী করেছেন। অন্যদিকে, মাদরাসা কর্তৃপক্ষ দায় এড়িয়ে বলছে, ‘অদৃশ্য শক্তির’ কারসাজি হতে পারে।
বুধবার (৩০ আগস্ট) দুপুরে নগরীর বাকলিয়ার সৈয়দ শাহ রোডে অবস্থিত আজিজিয়া মাদরাসা থেকে নিখোঁজ হন হেফজ বিভাগের শিক্ষার্থী আলিফ আহমেদ (১০)। নিখোঁজ আলিফ কুমিল্লা জেলার মো. রাসেলের সন্তান। তারা নগরীর বাকলিয়ার ডিসি রোডের মদিনা আবাসিক এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন। এক বছর ধরে আলিফ ওই আবাসিক মাদরাসায় থেকে পড়ালেখা করছিল বলে জানায় তার পরিবার।
আলিফের চাচা আবু সাঈদ পুলিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘গতকাল (বুধবার) দুপুরে আলিফ তার মাদরাসা থেকে নিখোঁজ হয়েছেন। আমি ঢাকায় থাকি। শুনে সঙ্গে সঙ্গে চলে এসেছি। মাদরাসা কর্তৃপক্ষের গাফিলতি আছে। তারা আমাদের একটি সিসিটিভি ফুটেজ দিয়েছে। সেখানে আলিফকে দুই সেকেন্ডের জন্য দেখা গেছে। কাপড় শুকাতে সে ছাদে গিয়েছিল।’
তিনি বলেন, ‘এরপর তাকে আর দেখিনি। তাকে কেউ নিচেও যেতে দেখেনি। তাহলে ১০ বছরের একটি শিশু কি ছাদ থেকে হাওয়া গেল? মাদরাসা কর্তৃপক্ষ নিজেদের রক্ষা করতে সে পালিয়ে গেছে বা জ্বিনে নিয়ে গেছে এসব আলাপ দিচ্ছে।’
কান্নাজড়িত কণ্ঠে আলিফের নানি ফুলবানু সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমার নাতি এর আগেও মাদরাসা থেকে বাসায় চলে এসেছে। তার মুখে তখন আঘাতের চিহ্ন ছিল।’
জানতে চাইলে আজিজিয়া মাদরাসার সহকারি পরিচালক শাহাদাৎ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরাও বুঝতে পারছি না সে কীভাবে, কোথায় গেল। আমরা ভবনের সব জায়গায় তাকে খুঁজেছি। এর আগেও একবার সে পালিয়ে গেছে। আমরা নিজেরাই তাকে খুঁজে এনেছি। হয়তো পড়ার চাপ নিতে পারছে না, তাই কোথাও চলে গেছে। কোনো অলৌকিক কিছু থাকতে পারে বলেও ধারণা করছি, এটা হতেও পারে। যেহেতু দেখিনি তাই বলতে পারছি না।’
জানতে চাইলে ১৭ নম্বর বাকলিয়া ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শহীদুল আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আদৌ বাচ্চাটা নালায় পড়ে মিসিং কি না সেটা আমরা খুঁজে দেখছি। তবে নিখোঁজের দায় মাদরাসা কতৃপক্ষের। গেইটে তালা ছিল। এটা আবাসিক। যেহেতু ওখানে থাকে, মাদরাসা কর্তৃপক্ষ এই দায় এড়াতে পারে না। বাকিটা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বুঝবে। তারা বের করবে কীভাবে বাচ্চাটি হারিয়ে গেল।’
তিনি আরও বলেন, ‘মাদরাসা কর্তৃপক্ষ আমাদের অনেক কথা বলেছে। একবার বলছে নালায় পড়ে গেছে। আবার বলছে পালিয়ে গেছে। সিসিটিভি ফুটেজে আমরা দেখেছি দুই তিনবার বন্ধুসহ ওই ছেলে ছাদে গিয়েছে। শেষবার ছাদে যাওয়ার পর তাকে আর দেখা যায়নি। আর তারা অদৃশ্য শক্তির যে কথা বলছে, সেটার বাস্তবতা নেই। ধর্মীয় বিষয়ে কথা বলতে চাই না।’
বুধবার সন্ধ্যায় মাদরাসা ছাত্র ‘নালায় পড়ে নিখোঁজ হয়েছে’ এমন তথ্য পৌঁছে চট্টগ্রামের ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষে। ডুবুরি টিম গিয়ে নালায় তল্লাশি শুরু করে। তবে ময়লা-আবর্জনায় ভর্তি হয়ে থাকায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের তল্লাশিতে বেগ পেতে হয়। বৃহস্পতিবার সকালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা ময়লা-আবর্জনা অপসারণ করেন। এরপর ফায়ার সার্ভিসের টিম আবারও নালায় তল্লাশি চালায়।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা আবুল হাশেম সারাবাংলাকে বলেন, ‘বাচ্চাটা এখানে পড়েছে, কেউ এখনও প্রমাণ করতে পারেনি। তবুও যেহেতু আমাদের দায়, তাই আমরা আবর্জনা পরিষ্কার করে দিয়েছি। এখানে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের একটি প্রকল্পের কাজ চলছে। সেখানে পানিপ্রবাহে প্রতিবন্ধকতা দেওয়ায় আবর্জনা জমে আছে। এটাই মূল কারণ। কিছুদিন আগেও আমরা এটা পরিষ্কার করেছি।’
চন্দনপুরা ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার শহীদুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘মনে হয় না ওই শিশু নালায় পড়েছে। কারণ সব জায়গায় আমরা সাধ্য মতো তল্লাশি করেছি। এরপরও আমরা এখানে অবস্থান করব।’
বাকলিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবদুর রহিম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা ঘটনার পর থেকেই ছেলেটার সন্ধানে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। সিসিটিভি ফুটেজ দেখেছি। সর্বশেষ তাকে মাদরাসার ছাদে যেতে দেখা গেছে। এরপর সে উধাও। এখন সে নালায় পড়েছে নাকি পালিয়ে গেছে, নাকি অন্য কোনো বিষয় আছে সেটা আমরা খতিয়ে বের করার চেষ্টা করছি। সিসিটিভি ফুটেজগুলো আরও ভালোভাবে দেখার জন্য দুই পুলিশ সদস্যকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা ভিডিওর প্রতিটি সেকেন্ড দেখছে।’
সারাবাংলা/আইসি/পিটিএম