ট্রাফিক সার্জেন্টকে মারধর, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ ছাত্র আটক
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১২:৪৩
বরিশাল: বরিশালে মোটরসাইকেল আটক করে মামলা দেওয়ায় ট্রাফিক সার্জেন্ট মনিরুল ইসলাম ও এক কনস্টেবলকে মারধর করেছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) কয়েকজন ছাত্র। এ ঘটনায় তিন ছাত্রকে আটক করে কোতোয়ালি থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। প্রতিবাদে বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করে আটকদের সহপাঠীরা। এসময় তারা আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে। এতে ওই রুটে দীর্ঘ যানজট লেগে যায়। পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও পুলিশের হস্তক্ষেপে ছাত্ররা অবরোধ তুলে নেয়।
মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ৯টার দিকে বরিশাল নগরীর বান্দ রোড শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে ঘটনার সূত্রপাত হয়।
আটক ছাত্ররা হচ্ছেন- অ্যাকাউন্টিং বিভাগের মো. শরীফুল, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের আলভির হোসেন এবং মার্কেটিং বিভাগের মো. সোহাগ। তারা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কর্মী।
ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট মনিরুল হাসান বলেন, শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিপরীতে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ের সামনে একটি মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে চালকের কাছে গাড়ির এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স চাওয়া হয়। একইসঙ্গে হেলমেট না পরার কারণ জানতে চাইলে তারা ক্ষুব্ধ হন। একপর্যায়ে নিজেদের ছাত্রলীগ পরিচয় দিয়ে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। কিছুক্ষণ পর আরও কয়েকজনকে নিয়ে এসে আমার ওপর হামলা চালান। আমার বডি ক্যামেরা ও ওয়্যারলেস ছিনিয়ে নেন।
তিনি বলেন, তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে কনস্টেবল মোস্তফাকে মেরে রক্তাক্ত করা হয়। হামলায় আমরা চার জন আহত হই। খবর পেয়ে অন্য পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে ছিনিয়ে নেওয়া বডি ক্যামেরা ও ওয়্যারলেস উদ্ধার করেন। সেইসঙ্গে ঘটনাস্থল থেকে তিন জনকে আটক করে কোতোয়ালি মডেল থানায় নিয়ে যায়।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (অপারেশন) মো. ফজলুর রহমান বলেন, ওই ছাত্ররা কাগজপত্রবিহীন একটি মোটরসাইকেল নিয়ে রাত ৯টার দিকে শেবাচিম হাসপাতালের সামনে দিয়ে যাচ্ছিল। সেখানে দায়িত্বরত সার্জেন্ট মনিরুল ইসলাম মোটরসাইকেলটি আটক করে মামলা দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সার্জেন্ট মনিরুল ও তার সঙ্গে থাকা কনস্টেবলকে বেদম মারধর করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন ছাত্র। পরে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে তাদের উদ্ধার ও হামলাকারী তিনজনকে আটক করে। ওই তিন ছাত্রকে আটকের খবর পেয়ে ক্যাম্পাসে তাদের সহযোগীরা বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করে।
বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মশিউর রহমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আটকের বিষয়টি ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে রাত সাড়ে ৯টার দিকে বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কে অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এরপর শিক্ষকরা এসে তাদের সড়ক থেকে তুলে দেন। এক ঘণ্টা পর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
মেট্রোপলিটন বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রহমান মুকুল জানান, পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ছাত্রদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরানোর ব্যবস্থা করেন। ছাত্ররা রাত সোয়া ১০টার দিকে সড়ক থেকে সরে গেলে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
এ ব্যাপারে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. খোরশেদ আলম বলেন, নগরীতে যে ঘটনা ঘটেছে, তার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সড়ক অবরোধ করা ঠিক হয়নি শিক্ষার্থীদের। পুরো বিষয়টি অনাকাঙ্ক্ষিত। তাদের বুঝিয়ে অবরোধ তুলে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে সড়ক অবরোধ প্রত্যাহারের পর ছাত্রদের একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে প্রক্টর কোতয়ালি মডেল থানায় পুলিশ কমিশনারসহ শীর্ষ পুলিশ কর্মকতাদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। রাত পৌনে ১টার দিকে সভা শেষে পুলিশ কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ছাত্রদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত পুলিশ সদস্যের কাছে ক্ষমা চাওয়ার শর্তে সাধারণ ডায়েরি করে আটক তিন ছাত্রকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
সারাবাংলা/এনইউ