Thursday 05 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

এক বছরে নতুন কোটিপতি ৫ হাজার

গোলাম সামদানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৫:৫১

ঢাকা: করোনা মহামারির পর পরই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। যার বড় প্রভাব পড়েছে বিশ্ব অর্থনীতিতে। দেশে দেশে দেখা দিয়েছে মুদ্রাস্ফীতি, কমছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। বিশ্ব এখন স্বস্তির নিঃশ্বাস নেওয়ার জন্য হাঁসফাঁস করছে। বিশ্ব অর্থনীতির এই মন্দা বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও প্রভাব ফেলেছে। প্রতিদিনই বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম। দেখা দিয়েছে ডলার সংকট, কমে গেছে রিজার্ভ। উচ্চমূল্যস্ফীতির চাপে অনেকেই তার সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছেন। ঠিক এমন পরিস্থিতিতেও দেশে কোটিপতি আমানকতারীর সংখ্যা বেড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, গত এক বছরে কোটি টাকার ব্যাংক হিসাব পাঁচ হাজার বেড়েছে। আর তিন মাসে বেড়েছে তিন হাজারের বেশি কোটি টাকার ব্যাংক হিসাব। চলতি বছরের মার্চ শেষে দেশের ব্যাংকগুলোতে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা ছিল এক লাখ ১০ হাজার ১৯২ জন। জুনে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক লাখ ১৩ হাজার ৫৫৪ জনে। অর্থাৎ এপ্রিল-জুন এই তিন মাসে কোটি টাকার ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা বেড়েছে তিন হাজার ৩৬২ জন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ২০২৩ সালের জুনভিত্তিক হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোটি টাকার হিসাব মানেই কোটিপতি ব্যক্তি নয়। কারণ, ব্যাংকে এক কোটি টাকার বেশি অর্থ রাখার তালিকায় ব্যক্তি ছাড়াও অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

তারা আরও বলছেন, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কয়টি ব্যাংক হিসাব খুলতে পারবে, সেটির কোনো নির্দিষ্ট সীমা নেই। ফলে একজনের একাধিক কোটি টাকার ব্যাংক হিসাব রয়েছে। পাশাপাশি সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থারও কোটি টাকার ব্যাংক হিসাব রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা আরও বলছেন, দেশে আসলে কত মানুষের কোটি টাকা রয়েছে, তার সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যায় না। তবে ব্যাংকে কোটি টাকার হিসাব সংখ্যা থেকে একটা ধারণা পাওয়া যায়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত ব্যাংক খাতে এক কোটি টাকার বেশি আমানত রয়েছে-এমন ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা রয়েছে এক লাখ ১৩ হাজার ৫৫৪টি।

এসব ব্যাংক হিসাবে জমা আছে সাত লাখ ৩১ হাজার ১৩৩ কোটি টাকা। গড়ে প্রতিটি হিসাবে আমানত হিসেবে জমা রয়েছে ছয় কোটি ৪৩ লাখ ৮৬ হাজার টাকা।

অন্যদিকে, ২০২২ সালের জুন শেষে দেশে কোটিপতি ব্যাংক হিসাবধারীর সংখ্যা ছিল বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক লাখ আট হাজার ৪৫৭জন। ফলে ব্যাপক মুল্যস্ফীতি ও মন্দার বছরেও দেশে কোটিপতি আমানকারী বেড়েছে পাঁচ হাজার ৯৭ জন। এসব হিসাবে জমা আছে ১৬ লাখ ৮৭ হাজার ২৪ কোটি টাকা।

এ ব্যাপারে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, প্রতিবছর দেশ থেকে কোটি কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। এটা বন্ধ করা গেলে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা আরও বাড়তো। তারপরেও বলবো এই অর্থগুলো পাচার না হয়ে ব্যাংকে জমা হচ্ছে এটা খুবই আশাব্যাঞ্জক খবর।

তিনি বলেন, দেশে একদিকে দারিদ্র জনগোষ্টির সংখ্যা বাড়ছে অন্যদিকে বাড়ছে কোটিপতির সংখ্যা। দেশে কোটিপতি বাড়ার মাধ্যমে জনগণের মাঝে আয়ের বৈষম্য সৃষ্টি হচ্ছে। এটা অশুভ লক্ষণ বলেই বলেই মনে হচ্ছে।

মির্জা আজিজ বলেন, কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা বাড়াটা যেমন ইতিবাচক তেমনি আয়ের বৈষম্য বেড়ে যাওয়াটা একটা নেতিবাচক।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত ব্যাংক খাতে মোট আমানতকারীর সংখ্যা ১৪ কোটি ৫৯ লাখ ৭৩ হাজার ১৯২টি। এসব হিসাবে জমা আছে মোট ১৬ লাখ ৮৭ হাজার ২৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে এক কোটি টাকার বেশি আমানত রয়েছে— এমন ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা রয়েছে এক লাখ ১৩ হাজার ৫৫৪টি। কোটি টাকার উপরে এসব হিসাবে জমা আছে সাত লাখ ৩১ হাজার ১৩৩ কোটি টাকা। বর্তমানে দেশের ব্যাংকিং খাতের মোট আমানতের ৪৩ দশমিক ৩৬ শতাংশ কোটি টাকা কোটিপতি হিসাবধারীদের দখলে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৩ সালের জুন শেষে এক কোটি এক টাকা থেকে পাঁচ কোটি টাকা রয়েছে এমন আমানতকারীর হিসাব ৮৯ হাজার ৭৭২ টি। এসব হিসাবে জমার পরিমাণ এক লাখ ৮৬ হাজার ৭০৮ কোটি টাকা। পাঁচ কোটি থেকে ১০ কোটির ১২ হাজার ২৪৫টি হিসাবে জমা ৮৬ হাজার ৬৩১ কোটি টাকা। এছাড়াও ১০ কোটি থেকে ১৫ কোটি টাকার হিসাবের সংখ্যা চার হাজার ৮১টি, ১৫ কোটি থেকে ২০ কোটি টাকা রয়েছে এমন হিসাব রযেছে এক হাজার ৮৬৫টি, ২০ কোটি থেকে ২৫ কোটি টাকা রয়েছে এমন হিসাব আছে এক হাজার ২৭৬টি, ২৫ কোটি থেকে ৩০ কোটির মধ্যে রয়েছে এমন আমানতকারীর হিসাব সংখ্যা ৯০৯টি। অন্যদিকে ৩০ কোটি থেকে ৩৫ কোটি টাকার মধ্যে ৫০৭টি, ৩৫ কোটি থেকে ৪০ কোটির মধ্যে রয়েছে ৩৫৩টি, ৪০ কোটি থেকে ৫০ কোটি টাকার ব্যাংক হিসাব সংখ্যা ৭২২টি। আর ৫০ কোটি টাকার বেশি আমানত রয়েছে এমন হিসাবের সংখ্যা এক হাজার ৮২৪টি।

উল্লেখ্য, ১৯৭২ সালে দেশে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা ছিল পাঁচজন। ১৯৭৫ সালে এ সংখ্যা বেড়ে হয় ৪৭ জনে। দেশে ১৯৮০ সালে কোটিপতি ছিলেন ৯৮ জন, ১৯৯০ সালে ৯৪৩ জন, ১৯৯৬ সালে দুই হাজার ৫৯৪ জন, ২০০১ সালে পাঁচ হাজার ১৬২ জন, ২০০৬ সালে আট হাজার ৮৮৭ জন এবং ২০০৮ সালে ১৯ হাজার ১৬৩ জন কোটিপতি গ্রাহক ছিলেন। ২০১৮ সালের ৩১ শে ডিসেম্ভর পর্যন্ত দেশে কোটিপতির সংখ্যা ছিলো ৭৫ হাজার ৫৬৩ জন। ২০২০ সালের ৩১ শে ডিসেম্ভর পর্যন্ত সময়ে দেশে কোটিপতি আমানতকারী বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৩ হাজার ৮৯০ জন। ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে দেশে কোটিপতির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১ হাজার ৯৭৬ জন, ২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে এই হিসাবের সংখ্যা ছিল এক লাখ ৯ হাজার ৯৪৬ টি। সর্বশেষ চলতি ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত ব্যাংক খাতে এক কোটি টাকার বেশি আমানত রয়েছে— এমন ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা রয়েছে এক লাখ ১৩ হাজার ৫৫৪টি।

সারাবাংলা/জিএস/এনইউ

৫ হাজার এক বছর কোটিপতি প্রতিবেদন বাংলাদেশ ব্যাংক


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর