ইটভাটার আগুনে ঝলসে গেছে ৩০ হেক্টর ধানক্ষেত!
৪ অক্টোবর ২০২৩ ২৩:১৮
যশোর: যশোরের বাঘারপাড়ায় ইটভাটার আগুনে ৩০ হেক্টর জমির আমন ধানক্ষেত ঝলসে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ইটভাটার আগুনে ওই জমির প্রায় দেড়শ’ কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে তাদের অভিযোগ। যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার দোহাকুলা মাঠে এ ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগ পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কৃষি কর্মকর্তা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
দোহাকুলা মাঠের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক আমিনুর, সোহেল, মিজানুরসহ একাধিক চাষির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের ধানক্ষেতের পাশেই ফাইভ স্টার ব্রিক্স’ নামে একটি ইটভাটা রয়েছে। এই ভাটায় ইট পোড়ানোর পর ভাটা দ্রুত ঠাণ্ডা করতে ভাটামালিক রোববার রাতে চুলার মুখ খুলে দেন। এতে রাতে ভাটার আগুন ৩০ থেকে ৪০ হাত উপরে উঠে যায়। এসময় ভাটার উত্তর ও উত্তরপশ্চিম পাশের দুই শতাধিক বিঘা (৩০ হেক্টর) জমির আমন ধানের পাতাসহ গাছ পুড়ে গেছে। কমপক্ষে ১৫০ কৃষকের আমন ধানের ক্ষতি হয়েছে।
মাঠের বেশির ভাগ জমিতে গুটি স্বর্ণা ও হাবু ধানের চাষ করেছেন কৃষকেরা।
দোহাকুলা ইউনিয়নের কৃষক ইকবাল হোসেন জানান, ‘অনেক টাকা খরচ করে ছয় বিঘা জমিতে ধানের আবাদ করেছিলাম। কিছুদিনের মধ্যে ধানের মোচা আসা শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু এর আগেই পাশের ফাইভ স্টার ইটভাটার আগুন ও ধোঁয়ায় এলাকার সব ক্ষেতের ধান পুড়ে গেছে। আমরা চরমভাবে ক্ষতির মুখে পড়েছি।’
কৃষক বাদশা মিয়া অভিযোগ করেন, তিনি এবার এ মাঠে দুই বিঘা জমিতে হাবু ধান চাষ করেছেন। ইটভাটার আগুনে এতবড় ক্ষতি হলো। ইটভাটা হওয়ার পর থেকে এখানে চাষাবাদে সমস্যা হচ্ছে। তিনি কৃষি জমির পাশ থেকে ইটভাটা উচ্ছেদের দাবি জানান।
ফসলের ক্ষেত ঘুরে দেখা গেছে, ইটভাটার আগুনের তাপে দুই শতাধিক বিঘা জমির উঠতি ফসল চলতি আমন মৌসুমের ধানের ক্ষেত পুড়ে গেছে। ধানগাছগুলো লালচে হয়ে গেছে। কোথাও কোথাও শীষসহ পুরো গাছই পুড়ে গেছে। ফলে ওই এলাকার কৃষকরা এবার সম্পূর্ণরূপে আমন ফসল থেকে বঞ্চিত হবেন।
এ ঘটনার পর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও কৃষি কর্মকর্তার কাছে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা অভিযোগ করেছেন। অভিযোগ পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও কৃষি কর্মকর্তা ক্ষতিগ্রস্ত মাঠ পরিদর্শন করেছেন এবং কৃষকদের সাথে কথা বলেছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইয়েদা নাসরিন জাহান জানান, তিনি এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরেজমিনে ওই মাঠ পরিদর্শন করেছেন। প্রায় ৩০ হেক্টর জমির ধানক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কৃষকরা বলছেন, ইটভাটার আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিষয়টি তদন্তের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাকে (কৃষি কর্মকর্তা) তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন। তিনি দ্রুতই তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করবেন।
বাঘারপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হোসনে আরা তান্নি জানান, তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ঘটনা তদন্তে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর এ ব্যাপারে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
অভিযোগের ব্যাপারে ফাইভ স্টার ব্রিক্সের মালিক শাহিন হোসেন বলেন, ‘গত ৭/৮ মাস ধরে ভাটা চলছে। কৃষকের কোনো ক্ষতি হয়নি। হঠাৎ করে মাঠের ধানগাছ লাল হয়ে যাওয়ায় ভাটার দোষ দেওয়া হচ্ছে। ভাটার আগুন-ধোঁয়ায় দু’এক বিঘা জমির ধান নষ্ট হতে পারে। কিন্তু দু’শ বিঘা জমির ধানগাছ তো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে না।’
সারাবাংলা/এমও