২০ ঘণ্টার টানা বৃষ্টি ভাঙল ১০ বছরের রেকর্ড
৫ অক্টোবর ২০২৩ ২১:১২
রাজশাহী: রাজশাহীতে ১০ বছরের রেকর্ড ভেঙেছে একটানা বৃষ্টি। এমনকি এখনও ঝরছে, থামার কোনো লক্ষণ-ই নেই। রাজশাহীতে মাত্র ২০ ঘণ্টায় ২৪৪ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে।
বুধবার (৪ অক্টোবর) রাত ১১টা থেকে মুষলধারে বৃষ্টিপাত শুরু হয়ে বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত চলে। তবে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছিল।
রাতভর এই বৃষ্টিতে পানির নিচে চলে গেছে রাজশাহী। নগরীর সব সড়কে হাঁটু সমান পানি। এতে নিম্নাঞ্চলের ঘরবাড়িতে পানি ঢুকে গেছে। আবহাওয়া অফিস বলছে, বৃষ্টির পরিমাণও কম নয়। গত ১০ বছরেও রাজশাহীতে এমন বৃষ্টি হয়নি।
রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের তথ্যানুযায়ী, বুধবার রাত ১১টা থেকে বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত ১৮ ঘণ্টায় ২৪৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। তবে বেশি বৃষ্টি হয়েছে বুধবার দিবাগত মধ্যরাত থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত।
এবারের বৃষ্টির কারণে নগরীর লক্ষ্মীপুর, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঘোষপাড়া, সাহেববাজার, গণকপাড়া, কাদিরগঞ্জ, বর্ণালী মোড়, উপশহর, টিকাপাড়াসহ সব এলাকায় পানি জমেছে। জমে থাকা পানির পরিমাণ কোথাও হাঁটুসমান আবার কোথাও কোমর পর্যন্ত। টিকাপাড়া ও কলাবাগান এলাকায় সড়কের ওপর দিয়ে নৌকা চলাচল করতে দেখা গেছে।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের তথ্য বলছে, ২০১৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৯৯ মিলিমিটার, ২০১৪ সালের ২৭ মে ৯৮ দশমিক ৩ মিলিমিটার, ২০১৫ সালের ২৬ জুন ১০০ মিলিমিটার, ২০১৬ সালের ৩ এপ্রিল ১০২ মিলিমিটার, ২০১৭ সালের ১৩ জুলাই ১০৭ দশমিক ২ মিলিমিটার, ২০১৮ সালের ১ মে ৬৮ দশমিক ৮ মিলিমিটার, ২০১৯ সালের ২৬ অক্টোবর ৭৮ মিলিমিটার, ২০২০ সালের ২১ মে ৮১ মিলিমিটার ও ২০২১ সালের ২১ জুলাই ১১১ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল।
রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রহিদুল ইসলাম সারাবাংলাকে জানান, ‘এখন বৃষ্টির সময়। বৃষ্টি হওয়াটা স্বাভাবিক। তবে একদিনে হঠাৎ করেই এত বৃষ্টি অস্বাভাবিক। এখনও আকাশ মেঘলা আছে, বৃষ্টিও হচ্ছে। থেমে থেমে এ রকম বৃষ্টি চলার সম্ভাবনা রয়েছে।’
এই বৃষ্টির কারণে অনেকে জাল দিয়ে সড়কে মাছ ধরতেও দেখা গেছে। তবে বেকায়দায় পড়েছেন যাদের বাড়ি ও ঘরে পানি ঢুকে পড়েছে। নগরীর বাইরের গ্রামাঞ্চলে বৃষ্টির কারণে পুকুর উপচে পানি চলে যাচ্ছে বিলে। এতে ভেসে যাচ্ছে পুকুরের মাছ।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর ইসলাম তুষার সারাবাংলাকে বলেন, ‘নগরীতে জলাবদ্ধতার বেশ কয়েকটি কারণ দেখা যাচ্ছে। পুকুর ও ডোবাগুলো ভরাট করে ফেলা হচ্ছে। সেখানে বড় বড় দালান উঠছে। এতে বৃষ্টির পানি আর সেসব পুকুর-ডোবায় যেতে পারছে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আগে পদ্মা নদীতে পানি নেমে যেত। কিন্তু নদী দূষণ হবে বলে সেসব ড্রেনও বন্ধ করা আছে। আবার বারনই নদের পানি যে ড্রেন দিয়ে পাঠানো হয়, সেই ড্রেনেও পাট জাগ দেওয়া হয়েছে। ফলে পানি নামার পথ পাচ্ছে না। এ ছাড়া রাস্তাঘাটে নির্মাণসামগ্রী ফেলে রাখার কারণেও পানি নামার প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে। এসব কারণেই এভাবে পানি জমে গেছে। এসব সমস্যার সমাধানে এবার কাজ শুরু করা হবে।’
প্রকৌশলী নূর ইসলাম জানান, নগরীর বর্জ্য পানি পদ্মা নদীতে পাঠানো হবে। তবে তা পরিশোধন করেই। এ জন্য একটি প্রকল্প গ্রহণ করে অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। ড্রেনগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করার ব্যাপারেও তারা সজাগ থাকবেন। বড় বড় কিছু ড্রেনও নির্মাণ করা হবে। এসব কাজ করা গেলে শহরে আর পানি জমবে না বলেই মনে করছেন নগর সংস্থার এই প্রকৌশলী।
সারাবাংলা/পিটিএম