Thursday 05 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মেয়েকে ধর্ষণের দায়ে বাবার মৃত্যুদণ্ড

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৯ অক্টোবর ২০২৩ ১৮:০৫

চট্টগ্রাম ব্যুরো: নিজের ঔরসজাত মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় এক ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত উল্লেখ করেছেন, আসামি পিতা ও কন্যার পবিত্র এবং শাশ্বত সম্পর্ককে কলুষিত করেছেন বিধায় তাকে দৃষ্টান্তমূলক সাজা মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) দুপুরে চট্টগ্রামের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭-এর বিচারক ফেরদৌস আরা এ রায় দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন বেঞ্চ সহকারী কফিল উদ্দিন।

দণ্ডিত মো. নাছির মোল্লা (৩৭) চট্টগ্রাম নগরীর উত্তর পতেঙ্গার ঢেবার পাড়ে একটি ভাড়া বাসায় পরিবার নিয়ে থাকতেন। তার বাড়ি ঝালকাঠি জেলায়।

২০২১ সালের ২৮ এপ্রিল নাছিরের ১২ বছর বয়সী মেয়ে বাবার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনে নগরীর পতেঙ্গা থানায় মামলা দায়ের করেন।

মামলার এজাহারে কিশোরী অভিযোগ করেন, তার মা সিইপিজেডের একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করে সংসার চালাতেন। বাবা বাসায় থাকতেন। তারা দুই বোন। ছোট বোন বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকত। কিশোরী মাদারবাড়িতে তার নানার বাড়িতে থাকত। ঘটনার পাঁচ মাস আগে সে নানার বাড়ি থেকে মা-বাবার বাসায় চলে আসে।

২০২১ সালের ২০ এপ্রিল ভোর সোয়া ৫টার দিকে তার মা কারখানায় চলে যান। কিশোরীর বোন এক রুমে ঘুমাচ্ছিল। সে নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। পাঁচ মিনিট পর তার বাবা দরজায় টোকা দিয়ে মোবাইল চার্জ দেওয়ার কথা বলেন। সে দরজা খুলে মোবাইল নিয়ে আবার বন্ধ করে দেয়। ১০ মিনিট পর আবার নাছির মোবাইল ফেরত চান। কিশোরী মোবাইল দিতে গেলে তাকে জোরপূর্বক রুমে আটকে ধর্ষণ করেন নাছির।

এজাহারের তথ্য অনুযায়ী, এসময় কিশোরী অনুনয় করে বলেন- তুমি আমার পিতা, তুমি আমার সঙ্গে এ ধরনের কাজ কেন করছ ? নাছির জবাব দেয়- তুই আমার মেয়ে, এর গ্যারান্টি কি, তোর মা জানে, তোর প্রকৃত পিতা কে ?

এদিকে কিশোরীর দায়ের করা মামলায় নাছির মোল্লাকে গ্রেফতার করে পতেঙ্গা থানা পুলিশ। তদন্ত শেষে পতেঙ্গা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) বাবুল আক্তার ২০২১ সালের ২৪ জুন আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

২০২২ সালের ৬ জানুয়ারি আসামির বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯ (১) ধারায় অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন। আসামির সাফাই সাক্ষ্য ছাড়াও রাষ্ট্রপক্ষ মোট আটজনের সাক্ষ্য নেন।

আদালতের বেঞ্চ সহকারী কফিল উদ্দিন সারাবাংলাকে জানান, সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আদালত আসামিকে মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি তিন লাখ টাকা অর্থদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন।

আদালত রায়ের পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করেছেন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯ (১) ধারা অনুযায়ী- ধর্ষণের অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং এর অতিরিক্ত কারাদণ্ড। ১২ বছর বয়সী শিশুটি আসামি নাছির মোল্লা’র ঔরসজাত কন্যা হওয়া স্বত্ত্বেও সজ্ঞানে, সুস্থ মস্তিষ্কে তাকে ধর্ষণ করেন এবং ভিকটিমকে নিজের কন্যা হিসেবে অস্বীকার করেন। পিতা কর্তৃক ধর্ষণের ফলে শিশু ভিকটিমের পৃথিবীর সকল পুরুষের প্রতি ক্ষোভ ও অবিশ্বাস সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে, যার কারণে ভিকটিম শিশুর স্বাভাবিক জীবনযাপন ও মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে।

পর্যবেক্ষণে আরও বলা হয়, শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা পৃথিবীতে পিতা ও কন্যার সম্পর্ক পবিত্র এবং শাশ্বত। কন্যা তার পিতার নিকট সর্বাধিক নিরাপদ হিসেবে বিবেচিত হয়। আসামি তার ঔরসজাত কন্যাকে ধর্ষণ করে শাশ্বত , পবিত্র এই সম্পর্ককে কলুষিত করেছেন এবং পারিবারিক সম্পর্কের বন্ধন ও আস্থা-বিশ্বাসে আঘাত করেছেন। এর ফলে আসামির দৃষ্টান্তমূলক সাজা প্রদান সমীচীন হবে বিধায় মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হলো।

সারাবাংলা/আরডি/এনইউ

কন্যা টপ নিউজ ধর্ষণ বাবা মৃত্যুদণ্ড


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর