মোখার চেয়েও সজোরে আঘাত হামুনের, যাচ্ছে কুতুবদিয়ার দিকে
২৪ অক্টোবর ২০২৩ ২১:৫০
ঢাকা: কক্সবাজার উপকূলে আছড়ে পড়েছে প্রবল ঘূর্ণিঝড় হামুন। কক্সবাজার শহরসহ টেকনাফ, মহেশখালীতে এর প্রভাবে বইছে প্রবল ঝড়ো হাওয়া। হামুনের গতিবেগ গড়ে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত পাওয়া গেছে, যা সবশেষ ঘূর্ণিঝড় মোখার সময়কার চেয়েও বেশি। সঙ্গে রয়েছে টানা বর্ষণ। কক্সবাজার সদরের বিভিন্ন স্থানে ঝড়ে গাছ উপড়ে সড়ক বন্ধ হওয়ার খবর জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
এদিকে, ঘূর্ণিঝড়টি ধীরে ধীরে আরও উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এটি কুতুবদিয়ার কাছাকাছি স্থান দিয়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম করবে বলে জানিয়েছে কক্সবাজার আবহাওয়া অফিস।
মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে ঘূর্ণিঝড় হামুনের মূল অংশ উপকূল অতিক্রম করতে শুরু করে। ওই সময় থেকেই কক্সবাজারে শুরু হয়েছে টানা ভারী বৃষ্টিপাত ও তীব্র ঝড়ো হাওয়া। সারাবাংলার কক্সবাজার ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট জানিয়েছেন, রাত পৌনে ৯টায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তীব্র ঝড়ো হাওয়া ও টানা বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের তথ্য বলছে, সর্বশেষ উপকূলে আতঙ্ক ছড়ানো ঘূর্ণিঝড় মোখার চেয়েও বেশি গতিবেগ নিয়ে হামুন কক্সবাজারে আঘাত করেছে। রাত ৯টার দিকে কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের প্রধান সহকারী আবহাওয়াবিদ মো. ইমাম উদ্দীন সারাবাংলাকে বলেন, ‘হামুন আঘাত করার শুরু থেকেই গড়ে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাতাসের গতিবেগ ছিল। তবে একক মুহূর্তে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ আমরা রেকর্ড করেছি ঘণ্টায় ১৪৮ কিলোমিটার, যেটি রাত ৮টা ১২ মিনিটে রেকর্ড করা হয়েছে। সে হিসাবে মোখার চেয়ে বেশি গতি নিয়ে আঘাত হেনেছে হামুন।’
ঘূর্ণিঝড় হামুন শেষ দিকে এসে গতিপথ পরিবর্তন করেছে জানিয়ে এই আবহাওয়া কর্মকর্তা বলেন, ‘শুরু থেকে ধারণা করা হচ্ছিল, ঘূর্ণিঝড় হামুন চট্টগ্রাম-বরিশাল উপকূলের দিকে আঘাত হানবে। তবে আমরা সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ বুঝতে পারি, এটি দিক পরিবর্তন করে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম উপকূলের দিকে চলে এসেছে। ওই সময়ই হামুনের অগ্রভাগ কক্সবাজারে আঘাত হেনেছে।’
সহকারী আবহাওয়াবিদ ইমাম উদ্দীন জানাচ্ছেন, ঘূর্ণিঝড়ের ‘চোখ’ তথা মূল কেন্দ্রবিন্দুটি কুতুবদিয়া-মহেশখালীর দিক দিয়ে অতিক্রম করতে পারে। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘হামুনের চোখটি সম্ভব সাগর দিয়েই অতিক্রম করবে। তবে এর গতিপথটি রয়েছে কক্সবাজারের মহেশখালী-কুতুবদিয়ার দিকে। ওই এলাকা দিয়েই মূল ঘূর্ণিঝড়টি বেরিয়ে যাবে। ঘূর্ণিঝড় আঘাত করার সময় থেকেই আমরা বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন রয়েছি। তারপরও যতটুকুসম্ভব ঘূর্ণিঝড় পর্যবেক্ষণ এবং প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছি।’
এদিকে, ঘূর্ণিঝড় হামুনের আঘাতে কক্সবাজার সদর ও আশপাশের এলাকায় প্রচুর গাছ উপড়ে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। এতে বিভিন্ন সড়ক বন্ধ হয়ে গেছে। তবে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
কক্সবাজার ফায়ার স্টেশনের ডিউটি ম্যান সুজন রাত সোয়া ৯টায় সারাবাংলাকে বলেন, ‘জেলা প্রশাসকের বাংলো এলাকাসহ কক্সবাজার শহর এবং শহরের বাইরে থেকেও গাছ উপড়ে পড়া এবং ভেঙে পড়ার অনেক খবর পেয়েছি। আমাদের টিম যথাসম্ভব গাছগুলো সরিয়ে সড়ক নির্বিঘ্ন করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে আমরা হতাহতের কোনো খবর এখন পর্যন্ত পাইনি।’
টেকনাফের স্টেশন অফিসার মুকুল কুমার নাথ সারাবাংলাকে জানান, টেকনাফেও ঘূর্ণিঝড় হামুনের আঘাতে হতাহতের তথ্য নেই। তাছাড়া তারা আগে থেকেই উপকূলীয় ও ঝুঁকিতে থাকা মানুষদের আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়েছেন। পাঁচ থেকে ছয়’শ মানুষকে টেকনাফের আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
এদিকে, কুতুবদিয়াতেও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় অবস্থানরত বাসিন্দাদের আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে বলে জানালেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দীপংকর তঞ্চঙ্গ্যা। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘বেড়িবাঁধসহ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসরত প্রায় ২২ হাজার মানুষকে আমরা ৯৫টি আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়েছি সন্ধ্যা ৭টার আগেই। সেখানে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। ইউনিয়নগুলোতেও সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখে আমাদের টিম কাজ করছে।’
হামুন ভাটার সময় আঘাত করার কারণে ক্ষয়ক্ষতি খুব বেশি হবে না বলেও আশা করছেন কুতুবদিয়ার ইউএনও। তিনি বলেন, ‘হামুন আঘাত করার পর অনেক গাছপালা উপড়ে পড়েছে, কাঁচা বাড়িঘরও হয়তো কিছু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সকালে ক্ষয়ক্ষতির বিস্তারিত জানানো সম্ভব হবে। তবে এখন পর্যন্ত হতাহতের খবর পাইনি। আর ঘূর্ণিঝড়টি এখানে এমন একটি সময়ে আঘাত করেছে, যখন ভাটা শুরু হয়েছে। জোয়ারের সময় ঘূর্ণিঝড় আঘাত করলে হয়তো এর প্রভাবে জলোচ্ছ্বাসসহ ক্ষয়ক্ষতি বেশি হতো, বেড়িবাঁধ প্লাবিত হতো। এখন হয়তো অতটা ক্ষয়ক্ষতি হবে না।’
এর আগে, মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর আবহাওয়া অধিদফতরের ১৩তম বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড়টির মূল অংশ উপকূল অতিক্রম শুরু করেছে। এটি আরও উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়েছে কুতুবদিয়ার কাছ দিয়ে পরবর্তী আট থেকে ১০ ঘণ্টার মধ্যে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম শেষ করতে পারে।
বিজ্ঞপ্তির তথ্য অনুযায়ী ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা হাওয়া আকারে ঘণ্টায় ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছাকাছি এলাকায় সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে আগের মতোই চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর এবং মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৫ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন
- উপকূলে আঘাত হানতে শুরু করেছে হামুন
- ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’এ পরিণত হয়েছে নিম্নচাপটি
- হাতিয়ার সঙ্গে সারা দেশের নৌ-যোগাযোগ বন্ধ
- ঘূর্ণিঝড় হামুন: খুলনায় প্রস্তুত ৬০৪ আশ্রয়কেন্দ্র
- নিম্নচাপের প্রভাবে বাগেরহাটে ৫ নম্বর বিপদ সংকেত
- ঘূর্ণিঝড় হামুন: চট্টগ্রাম বন্দরে বহির্নোঙরে পণ্য খালাস বন্ধ
- ঘূর্ণিঝড় হামুন মোকাবিলায় ভোলায় প্রস্তুত ৭৪৩ আশ্রয়কেন্দ্র
- ৩১০ কিমি দূরে হামুন, চট্টগ্রাম-পায়রায় ৭ নম্বর বিপদ সংকেত
- হামুন: ১৫ জেলায় জলোচ্ছ্বাস, ৫ বিভাগে অতি ভারী বর্ষণের শঙ্কা
- ১০ জেলার মানুষকে রাত ৮টার মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়ার নির্দেশ
- বুধবার দুপুরের মধ্যে চট্টগ্রাম-বরিশাল উপকূল অতিক্রম করবে হামুন
- ভোলার সব রুটে নৌ চলাচল বন্ধ, ঝুঁকিতে ৪ অঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষ
সারাবাংলা/টিআর/পিটিএম