বিজ্ঞাপন

ভোলার সব রুটে নৌ চলাচল বন্ধ, ঝুঁকিতে ৪ অঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষ

October 24, 2023 | 5:42 pm

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

ভোলা: বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘুর্ণিঝড় হামুনের প্রভাবে ভোলায় সাত নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) সকাল ১০টা থেকে ভোলা-ঢাকা, ভোলা-লক্ষ্মীপুর ও ভোলা-বরিশাল নৌরুটসহ সব রুটের লঞ্চ ও ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এদিকে, সোমবার মধ্যরাত থেকে ভোলায় হালকা বাতাসের সঙ্গে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। সেইসঙ্গে নদী উত্তাল রয়েছে। তবে রাতে বঙ্গোপসাগর মোহনার চর কুকরী-মুকরী ও ঢালচর ইউনিয়ন এলাকায় প্রবল বাতাস ও ভাড়ি বৃষ্টিপাত হয়েছে।

অপরদিকে, মঙ্গলবার সকালে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘুর্ণিঝড় মোকাবিলায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা হয়েছে। সভায় জেলা প্রশাসক আরিফুজ্জামান ভোলার বিচ্ছিন্ন চারাঞ্চলের লক্ষাধিক বাসিন্দাকে নিরাপদ আশ্রয়ে আনার কথা বলেছেন। তবে এদিন বিকেল চারটা পর্যন্ত ভোলার সাগর মোহনার চর কুকরী-মুকরী ও ঢালচর ইউনিয়সহ কোনো চলাঞ্চলের বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে আনা যায়নি।

ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার সাগর মোহনার ঢালচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম জানান, তার ইউনিয়নের ঢালচর ও চর নিজামে প্রায় ২০ হাজার লোকের বসবাস। এখানে কোনো মুজিব কিল্লা বা আশ্রয়কেন্দ্র নেই। শুধু একটি পুলিশ ফাঁড়ি রয়েছে। ঝড়ের সময় পুলিশ ফাঁড়িতে দুই থেকে আড়াই হাজার মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে। মঙ্গলবার বিকেল চারটা পর্যন্ত তার ইউনিয়নের কোনো বাসিন্দাকে চর থেকে নিরাপদ আশ্রয়ে আনা হয়নি। তবে তাদের নিরাপদ আশ্রয়ে আনতে ট্রলার প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও জানান, সকাল থেকে সেখানে থেমে থেমে প্রবল বাতাস ও ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। তার ইউনিয়নে কোনো আশ্রয়কেন্দ্র না থাকায় ঝড়ের সময় মানুষের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়ে থাকে।

চর কুকরী-মুকরী ইউনিয়নের সিপিপি সভাপতি মো. শাহজাহান খোকন জানান, ওই ইউনিয়নে ১৫ থেকে ২০ হাজার লোকের বসবাস। সেখানে তিনটি আশ্রয় কেন্দ্র ও একটি রেস্ট হাউজ রয়েছে। যেখানে চার থেকে পাঁচ হাজার লোক আশ্রয় নিতে পারবে। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে ওই ইউনিয়নের চর পাতিলা এলাকার সাত/আপ হাজার মানুষ। সকাল থেকে সিপিপি সদস্যরা ঘুর্ণিঝড় প্রস্তুতি হিসেবে মানুষকে সতর্ক করতে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। তবে এখনো কোনো মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে আসেনি। রাতের দিকে আবহাওয়া খারাপ হলে তাদের আশ্রয় কেন্দ্রে আনা হবে।

ভোলা জেলা কৃষিসম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক হাসান ওয়ারিসুল কবির জানান, ঘুর্ণিঝড় থেকে মাঠে থাকা ফসল রক্ষায় কৃষিবিভাগ মাঠে কাজ করছেন। বর্তমানে মাঠে আমন ও সবজি ছাড়া কোনো ফসল নেই। এর মধ্যে আমন চাষ হয়েছে এক লাখ ৭৫ হাজার হেক্টর ও সবজি চাষ হয়েছে পাঁচ হাজার হেক্টর জমিতে। ধানে এখন শীষ আসার কথা। বেশি বৃষ্টিপাত ও বাতাস না হলে ধানের তেমন ক্ষতি হবে না। আর সবজির বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

ভোলা পানি উন্নয়নের বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাসানুজ্জামান জানান, মেঘনা ও তেতুলিয়া নদীর পানি বিপৎসীমার ১১৩ সেন্টিমিটার নিচে রয়েছে। ভোলার ৩৩৪ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভালো অবস্থায় রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ে তেমন ক্ষতির আশংকা নেই।

আর জেলা প্রশাসক আরিফুজ্জামান জানান, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সবধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। জেলার সকল সরকারি দফতরে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। ভোলার বিচ্ছিন্ন প্রায় ৭০টি চরাঞ্চল থেকে তিন লক্ষাধিক বাসিন্দাকে নিরাপদ আশ্রয়ে আনতে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৭৪৩টি আশ্রয়কেন্দ্র ও মুজিব কিল্লা। ৭৪৩টি আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিতে পারবে প্রায় পাঁচ লাখ ৬৩ হাজার মানুষ। এছাড়াও প্রস্তুত রয়েছে ১৩ হাজার ৬০০ সিপিপি ও পাঁচ হাজার রেড ক্রিসেন্ট স্বেচ্ছাসেবক।

তিনি আরও জানান, ঘূর্ণিঝড় হামুন মোকাবিলায় জেলার ঝুঁকিপূর্ণ এালাকার বাসিন্দাদের সতর্ক করতে সিপিপি ও রেডক্রিসেন্ট সদস্যরা প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। সাগরে থাকা সব মাছ ধরার ট্রলারকে নিরাপদ আশ্রয়ে আনা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের তথ্য সংগ্রহে আটটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। অধিক ঝুঁকিতে থাকা চরাঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষকে কোস্ট গার্ডের মাধ্যমে মূল ভূ-খণ্ডে নিরাপদ আশ্রয়ে আনার কাজ চলছে।

জেলা প্রশাসক জানান, পর্যাপ্ত ত্রাণ-সামগ্রী মজুদ রাখা হয়েছে। শিশু খাদ্যের জন্য ১০ লাখ ও গো-খাদ্যের পাঁচ লাখ টাকার চাহিদা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রস্তুত রয়েছে ৯৬টি মেডিকেল টিম। ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় ইউনিয়ন থেকে শুরু করে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের সকলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। সকলের সমন্বিত প্রচেষ্টায় ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলা সম্ভব বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন-

সারাবাংলা/পিটিএম

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন